দুই দিনে দখল মুক্ত হচ্ছে শায়েস্তা খাঁ-মীর জুমলা সড়ক

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

দুই দিনে দখল মুক্ত হচ্ছে শায়েস্তা খাঁ-মীর জুমলা সড়ক
নারায়ণগঞ্জের দ্বিগু বাবুর বাজার সংলগ্ন মীর জুমলা সড়ক পুরোটা অস্থায়ী দোকানদারদের দখলে। রোডটি দিয়ে সাধারণ জনগণের চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। অস্থায়ী দোকনদাররা এই রোডে তাদের দোকান বসিয়ে মানুষের চলাচলের বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তারা মীর জুমলা সড়কটি মায়লার ভাগাড়ে পরিণত করছে। একই সাথে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম আরেকটি সড়ক শায়েস্তা খান রোড। পুরাতন কোর্ট এলাকার এই সড়কে আছে জেলা শিল্পকলা একাডেমী, জেলা গণগ্রন্থাগার, র্যাবের ক্যাম্প, প্রধান ডাকঘর। আছে বেশ কয়েকটি ব্যাংকসহ বিপণি বিতান ‘ফ্রেন্ডস মার্কেট'।
কিন্তু সড়কটি দখল করে স্থায়ী দোকানঘর নির্মাণ করে রেখেছিল হকাররা। যাকে ঘিরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই রোড দখলে থাকায় যানজট নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী। এ দিকে জেলা পুলিশ সুপার, সিটি কর্পোরেশন এবং নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের গোল টেবিলের মাধ্যমেসহ দফায় উচ্ছেদ অভিযান চলার কিছুদিন পাড় হলে আবারো দখলে চলে যায় এই মীর জুমলা ও শায়েস্তা খাঁ সড়ক। যা নিয়ে ক্ষোভ ঝাঁড়ছেন নারায়ণগঞ্জের সাধারণ নাগরিক। একই সাথে নারায়ণগঞ্জবাসীকে স্বস্তি দিতে দুইদিনের মধ্যে মীর জুমলা সড়ক ও শায়েস্তা খাঁ সড়ক দখলমুক্ত করতে সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যানজট নিরসনের লক্ষে সামাজিক, রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায়। নারায়ণগঞ্জকে যানজট ও দখলমুক্ত রাখতে মীর জুমলা সড়ক ও শায়েস্তা খাঁ সড়ক দুইদিনের মধ্যে দখলমুক্ত করতে সিটি কর্পোরেশনকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেন ডিসি জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
খোঁজ নিয়ে যায়, দিগুবাবুর বাজারের ইজারাদার রুবেল হোসেন। যিনি বিগত দিনে দিগু বাজারের নামে ইজারা নিয়ে মীর জুমলা রোডে নিয়মিত দুই বেলা দোকান বসাতেন। এই দোকানগুলো রোড দখল করে বসিয়ে তারা প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করতেন। কিন্তু গত আগষ্টের পট পরির্বতনের পর এই বাজারে ইজাদার হিসেবে রুবেলের দায়িত্বে থাকলে ও বিএনপির দেওভোগের একটি গ্রুপ বিগত দিনে বসানো সেই দোকানগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মাসিক ভাড়া তোলা শুরু করেন।
এদিকে সেখান থেকে ও সুবিধা হিসেবে একটি অংশ পান এই রুবেল হোসেন। জানা গেছে, এই রোডে যে দোকানগুলো বসানো হয়। ওই দোকানের চৌকি প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হয়। যদি দোকান বড় হয় তাহলে সেখানে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা ও দেয়া লাগে নিয়মিত। এই রোডে বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে শুরু করে সিরাজদৌল্লা রোড পর্যন্ত রাস্তার উপরে ফলের দোকান ১২টা, শাক-সবজির দোকান ৩৪টা, মাছের দোকান ১৩টা, আলু, পিয়াজ, আদা, রসুনের দোকান ১৫টা, পানের দোকান ৭টা, মুরগী ও গরুর মাংসের দোকান ১৪টা। এই দোকানগুলো দিয়ে এই পুরো রোড দখল করে দুই বেলায় মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে রাজনৈতিক ব্যাক্তি অনেকেই।
এই রোডটি অবৈধ দখলের কারণে সংকীর্ণ হয়ে রয়েছে। রাস্তাটি দিয়ে যানবাহন ও প্রবেশ করতে পারছে না। এই মীর জুমলার প্রধান মুখ যেটা বঙ্গবন্ধু সড়কের সাথে ওইটা বন্ধ করে রেখেছে অস্থায়ী ভ্যানগাড়ি দিয়ে দোকান বসিয়ে। আর সিরাজদৌল্লাহ রোডের সাথে প্রবেশ মুখ রয়েছে সেটা ও বন্ধ করে রাখা হয়েছে হকারদের বসিয়ে। এই রোডকে দখল করে তারা চাঁদাবাজি করতে করতে এই রোডকে মৃত বানিয়ে ফেলছে। সর্বশেষ মীর জুমলা সড়ক দখলমুক্ত হয়েছিল এসপি হারুন অর রশিদের সময়।
অপরদিকে শায়েস্তা খাঁ সড়ক নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ একটি শহরের মধ্যে অন্যতম। যেখানে রয়েছে পুরাতন কোর্ট এলাকার এই সড়কে আছে জেলা শিল্পকলা একাডেমী, জেলা গণগ্রন্থাগার, র্যাবের ক্যাম্প, প্রধান ডাকঘর। আছে বেশ কয়েকটি ব্যাংকসহ বিপণি বিতান 'ফ্রেন্ডস মার্কেট'। কিন্তু সড়কটি দখল করে স্থায়ী দোকানঘর নির্মাণ করে রেখেছে হকাররা। রাত সাড়ে ১১টার পর থেকেই সকাল ১২ টা পর্যন্ত এই সড়কটি দখলে চলে যায় দিগু বাজারের। গ্লিজ ব্যাংক মোড় থেকে জেলা গণগ্রন্থাগার পর্যন্ত দুই সাইডে প্রায় ১০০ এর অধিক দোকান বসানো হয়।
এর পর দুপুর থেকে গ্লিজ ব্যাংক মোড় থেকে পুরো 'ফ্রেন্ডস মার্কেট' পর্যন্ত রাস্তার প্রায় আড়াইশো দোকান বসে। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে কোন ব্যবস্থা না নেওয়া দখল করে থাকা এই সড়ক থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে একটি মহল। চাঁদাবাজদের একটি চক্র ও চাঁদার টাকা দিয়েই অস্থায়ীভাবে এখানে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছেন।
তবে ঠিক কারা এ চাঁদা আদায় করেন তা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ সবাই। কিন্তু জানা যায়, এই চাঁদাবাজির পিছনে বিগত দিনে শামীম ওসমানের নির্দেশনায় মহানগর যুবলীগ নেতা হেলালের লোক সোহেল ও আব্দুল্লাহ এদের নিয়ন্ত্রণে এ ছাড়া দোকান প্রতি দৈনিক সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে ৩০০টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলে চাঁদাবাজরা।
এর সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় সারির কর্মচারীরা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে গত ৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর সেই দখলে থাক চাঁদাবাজদের হাত-বদল হলে ও জেনারেটর লাইট এবং দোকান বসানোর পিছনে পরোক্ষভাবে হাত রয়েছে বিএনপির কিছু কথিত নেতাকর্মীদের। এদিকে বর্তমানের এই দক্ষ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মীর জুমলা রোড ও শায়েস্তা খাঁ রোড দখলমুক্ত হলে নগরবাসী সুন্দর একটি শহর উপহার পাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।