Logo
Logo
×

জনদুর্ভোগ

দেড় বছরেও জ্বলেনি তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর আলো

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

দেড় বছরেও জ্বলেনি তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর আলো

দেড় বছরেও জ্বলেনি তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর আলো

Swapno

২০২২ সালের ১০ অক্টোবর খুব ঘটা করে অনেকটা নাটকীয়ভাবেই উদ্বোধন করা হয় বন্দরের ঐতিহাসিক সেতু হিসেবে দাবি করা তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। যদিও বন্দরবাসীর দাবি এই সেতুটা তাদের সেই প্রতীক্ষিত সেতু না। অন্যদিকে অনুমোদনের দীর্ঘ প্রায় একযুগ পরে নির্মিত সেই সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের কোন পরিকল্পনাই নেওয়া হয়নি। একদিকে পদ্মা সেতুর সাথে সংযোগ সড়কের সংস্কার অন্যদিকে মদনগঞ্জ-মদনপুরের সরু সড়কের বেহাল দশা। যেসব বিষয় নিয়ে দৈনিক যুগের চিন্তায় একাধিক সংবাদ প্রকাশ করা হয়। অথচ এমন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করার এক বছর পার না হতেই সেতুর থাকা বৈদ্যুতিক খুটির সংযোগ ক্যাবল চুরি হয়ে যাওয়ায় সে সময় থেকে অদ্যাবধি জ্বলছে না কোন আলো। প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় যাবত সন্ধ্যার পর থেকেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয় সেতুর উপরসহ আশেপাশের এলাকায়। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা, সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে দুর্ঘটনার। স্থানীয় অসাধু লোকদের এমন কর্মে এখানে নতুন ক্যাবল টানা হলে আবারও চুরি হতে পারে, সেই ভয়ে বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নিতে পারেনি সওজ (সড়ক ও জনপথ)।
 
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এই তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। যার নির্মাণ মেয়াদ ছিল ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। কিন্তু নানা কারণে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুই করা হয় ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে এবং সেতুর উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর। শুরুতে এর নির্মাণ ব্যয় ৩৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০০ কোটি টাকারও বেশি। কিছু মিডিয়াসহ ওসমান পরিবারের ভক্তদের ভাষ্যমতে এই সেতুটি বন্দরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত সেতু। যে সেতু নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বন্দরবাসীর দূরত্ব কমাবে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে বিষয়টি তা নয়। এই সেতুটি মূলত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে অর্থাৎ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সাথে রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা ও চিটাগাং অঞ্চলের দূরত্ব কমানোসহ নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা শহরের উপরের চাপ কমানো। পদ্মা সেতুর পার হয়ে এই সেতুটি ব্যবহার করে এই সড়ক ব্যবহার করার মাধ্যমে এসব এলাকার যানবাহন চলাচল করবে। অথচ এই সেতু নির্মাণে প্রায় একযুগ সময় ব্যয় হলেও এই সময়ের মধ্যে অর্থাৎ সেতু উদ্বোধনের পূর্বে পদ্মা সেতুর সাথে এই তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর সংযোগ সড়কের কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেনি। গ্রহণ করতে পারেনি মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কের সংস্কার কাজের পরিকল্পনা। সেতু উদ্বোধনের আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত ব্যাটারি চালিত অটো ইজিবাইক, সিমেন্ট কারখানার অতিরিক্ত ওজনের কিছু সিমেন্টবাহী গাড়ি ছাড়া এখানে নেই কোন গাড়ি চলাচলের ব্যস্ততা। যা প্রশাসনের অপরিকল্পিত উদ্যোগ এবং বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়া দায়ী বলে মনে করেন স্থানীয় অধিবাসী ও সচেতন মহল।
 
এই বিষয়ে ট্রাক ড্রাইভার আমান উল্লাহ বলেন, আমি এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করি। প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার এই সড়ক দিয়ে আমাকে যাতায়াত করতে হয়। প্রায়ই রাত ১১টা ১২টার দিকে গাড়ি নিয়ে মুন্সিগঞ্জ থেকে এই সেতু দিয়ে আসতে হয়। এই সড়ক দিয়ে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত গাড়ি চলাচল না করায় সে সময় একদিকে সুনসান নীরবতা অন্যদিকে আলোবিহীন সড়কে ভুতুড়ে পরিবেশে গাড়ি চালাতে খুবই অস্বস্তি ফিল করতে হয়। প্রায়ই সেতুর উপর ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটে। অনেক সময় আমাদের চোখে পড়লেও আমাদের ক্ষতি হওয়ার ভয়ে আমরা গাড়ি থামাই না।
 
আসাবুদ্দিন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এই সেতুতে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় মদনগঞ্জ সড়কের সেতুর নিচ এলাকায় প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগেও আসলাম নামের এক বিরিয়ানী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ছিনতাই করে ২৭ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। আরেক মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ভোর রাতের দিকে টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, এই এলাকায় এসব ছিনতাই ও চুরির কাজে কারা কারা জড়িত তা প্রায় সকলেই জানে। পুলিশ প্রশাসনও এদের ভালো করে চিনে। বিশেষ করে এখানকার ভাংগারী ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা এসব চোরাই মালামাল কেনাবেচা করেন, পুলিশ প্রশাসন একটু নজরদারী করলেই তা বের করতে পারেন। মদনগঞ্জ পুলিশ ফাড়িও এই সেতুর খুব কাছাকাছি অবস্থিত। এসব গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনায় তাদের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। এসব চোর ও ছিনতাইকারীদের শেল্টার আছে কারা, তা বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাছাড়া সেতু কর্তৃপক্ষেরও উচিৎ এসব ক্যাবলগুলোকে এমনভাবে টানা, যেনো চোরেরা অতিসহজে তা চুরি করতে না পারে।
 
এখানকার তার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের নিরাপত্তার বিষয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) যুগের চিন্তাকে বলেন, এখানে এই ধরণের চুরির ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য সেতুতে পর্যাপ্ত পরিমান লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে আমাদের (পুলিশ প্রশাসনের) পক্ষ হতে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। মদনগঞ্জ পুলিশ ফাড়ির সদস্যরাও এখানে বেশিরভাগ সময় থাকে। এখানে তার চুরি হবে না আমরাতো এমন গ্যারান্টি দিতে পারবো না। তবে আমরা যেটা পারবো তাহলো এখানকার নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।
 
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম যুগের চিন্তাকে বলেন, বন্দরে অবস্থিত তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উপর লাইটিং সিস্টেমের ক্যাবল চুরি হওয়ার বিষয়টি মেরামতের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু সেখানে বৈদ্যুতিক ক্যাবল লাগানোর পর যদি আবারও চুরি হয়, তাহলেতো সেই মেরামত করে কিছুই হবে না। চুরির বিষয়েও আপনারা সংবাদ মাধ্যমে কিছু লেখালেখি করেন। এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় যেন চুরি না হয় সেজন্য স্থানীয় জনগণকেও সচেতন করতে হবে। বৈদ্যুতিক লাইন টানার বিষয়ে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে তিনি বলেন, একেক এলাকায় একেক রকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। তাই আমরাও এই এলাকাটি জরিপ করে দেখবো, আমাদের পক্ষ হতে এখানে কি ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে নিরাপদ হতে পারে। তারপরও এলাকার কারা এধরণের কাজগুলো করে থাকে সে সব বিষয়ে স্থানীয়দেরকেও খোঁজখবর রাখতে হবে।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন