বিকেএমইএ’র ইজিএমে হাতেমের স্ট্যান্টবাজি
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ পিএম
# বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতাদের দোহাই
# উপস্থিত ব্যবসায়ীরা হাতেমের স্ট্যান্টবাজিতে হতবাক ও বিস্মিত
# খুব দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি চান ব্যবসায়ীরা
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর সেলিম ওসমান পালিয়ে গেলে কৌশলে সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন ওসমানদের ঘনিষ্ঠ মোহাম্মদ হাতেম। দীর্ঘ ১৫ বছর ওসমানদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত হাতেম ৫ আগস্টের আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তবে সভাপতির পদ বাগিয়ে নেয়ার পর তিনি ভোল পাল্টে ছাত্রআন্দোলনের পক্ষে থাকা ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে জাহিরের চেষ্টা করছেন। ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর বিশেষ সাধারণ সভাতেও (ইজিএম) হাতেমের স্ট্যান্টবাজিতে ত্যক্ত-বিরক্ত বিকেএমইএ’র সদস্যরা। ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গ্র্যান্ডবলরুমে বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এই ইজিএম প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রায় ১৫০জন সদস্য অংশগ্রহণ করলেও বেশিরভাগ টেবিলেই হাতেমকে নিয়ে জোর সমালোচনা চলে। উপস্থিত ব্যবসায়ীরা হাতেমের স্ট্যান্টবাজিতে হতবাক ও বিস্মিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ইজিএম অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ হাতেম বারবার ঘোষণা করতে থাকেন বিকেএমইএর এই অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই প্রধান সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠান শুরুর পর থেকে তিনি বলেই যাচ্ছেন এই তো তারা চলেই আসছেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা উপস্থিত হবেন। এই তো তারা লিফটের উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এই তো তারা এক্ষুনি চলে আসবেন। কিন্তু আদতে শেষ পর্যন্ত তাদের কেউই বিকেএমইএ’র এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। বারবার এই স্ট্যান্টবাজির অর্থ ছিল, হাতেম বোঝাতে চেয়েছেন, তার সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতাদের গভীর সম্পর্ক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের এই অনুষ্ঠানে তো তাদের আসারই কথা না। কিন্তু হাতেম এটি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেও কাছের লোক। অথচ তিনি যে, শেখ হাসিনা সরকার ও ওসমানদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তা তো ভিডিও বক্তব্য ও পত্রিকার পাতায় স্পষ্ট প্রমাণ আছে। সারাদেশের মানুষ যে তার অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানে সেটি তিনি ভুলেই গেছেন, আর ব্যবসায়ীরা তো খুব ভালো করেই জানেন হাতেম গত ১৫ বছর যাবৎ ওসমানদের হয়ে কী কী করেছেন। অনেকে টিপ্পনী কেটে কানাঘুষো করেন, কে বসালো হাতেমকে সভাপতির পদে নির্বাচন ছাড়া! তিনি ৫ আগস্টের পর কী করে হর্তাকর্তা বনে গেলেন। আর তার এই কমিটিতে তো অনেক ওসমানীয় বলয়ের লোকে ভরপুর। তিনিও তাদের মধ্যে অন্যতম। গত নভেম্বর মাসেই তো তাকে ফ্যাসিস্টদের দোসর খেতাব দিয়ে কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মনসুর আহমেদসহ আরো একজন। পরবর্তীতে অবশ্য তারা পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেন। পদত্যাগপত্র যে চাপে প্রত্যাহার করা হয়েছিলো সেটি বুঝা গেছে, ইজিএম সভায় মনসুর আহমেদ অনুপুস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশ করার শর্তে ইজিএমে উপস্থিত আরো কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, হাতেম গত ১৫ বছর যাবৎ ওসমান ও আওয়ামী লীগ সরকারের দালালি করেছেন। এখন তিনি নির্বাচন ছাড়াই বিকেএমইএর শীর্ষ পদ দখল করে বসে বড় বড় কথা বলছেন। নিজেকে জাহির করে ছাত্রআন্দোলনে আসা নতুন বিজয়ের অংশীদার হওয়ার চেষ্টা করছেন। সারজিস-হাসনাত কেউ শেষ পর্যন্ত না আসলে হাতেম তড়িঘড়ি করে নিজের ছেলেসহ আরো ৪০জনকে স্টেজে উঠিয়ে তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের পক্ষে ছিলেন দাবি করে পরিচয় করিয়ে দেন। অনেকে ঠাট্টার ছলে বলেন, তিনি (হাতেম) নিজেই যে আওয়ামী লীগের একান্ত অনুগত ছিলেন সেটি পরিচয় করিয়ে দিতে ভুলে গেছেন।
ইজিএমে নারায়ণগঞ্জে বিকেএমইএ ভবনের নির্মাণের বাজেট নিয়েও সমালোচনা করেন টেবিলে টেবিলে ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এতোটুকু জায়গার মধ্যে তৈরি ভবনে ইতিমধ্যে সাড়ে ৩১ কোটি টাকা ব্যয় করার হয়েছে। নতুন করে আরো পৌনে ৬ কোটি টাকার মতো নতুন বাজেট পাশ করানো হয়েছে। এতো টাকা এই ভবনে কোথায় কাজ করলো, এটি নিয়েও বিস্মিত সংগঠনের সদস্যরা। তারা অনেকে হাস্যরস করে বলছেন, এটা আবার আওয়ামী লীগের রূপপুরের পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশ কাণ্ড নয় তো !
ইজিএমে মোহাম্মদ হাতেম বিকেএমইএ’র নির্বাচন এগিয়ে নিয়ে আসারা কথা বলেন। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের আগে নির্বাচন নিয়ে আসার কথা জানান হাতেম। এটি নিয়েও হাস্যরস করেন অনেকে। তারা বলেন, আপনাকেই বা বসালো কে? কো-অপ্ট যাদের করা হয়েছে তাদের অনেকেরই তো ওসমানীয় চেহারা! ওসমানদের খাস লোক খালেদ হায়দার খান কাজলের ডান হাত ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক মোর্শেদ সারোয়ার সোহেলকে এখনো দেখলে ব্যবসায়ীরা অতীতের কথা মনে করে আঁতকে উঠেন।
ইজিএমে অংশগ্রহণ করা অনেক ব্যবসায়ী বলেন, হাতেমসহ বর্তমানে নেতৃত্বে থাকা অনেকেই ব্যবসায়ীদের জীব অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন। এমনিতেই ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো না। এর মধ্যে হাতেমের এই স্ট্যান্টবাজিতে ব্যবসায়ীরা বিরক্ত থাকলেও কিছু বলছেননা কারণ সবাই চাচ্ছে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে হাতেমকে বিদায় করতে। এখন প্রকাশ্যে কিছু না বলার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, যেহুতু ৫ আগস্টের পর তারা তড়িঘড়ি করে সেলিম ওসমানের চেয়ারের বসে পড়েছেন, এখনও নানাভাবে ব্যবসায়ীদের হয়রানির চেষ্টা করা হতে পারে। শিপমেন্টসহ নানা দরকারে বিকেএমএই’তে যেতে হয় বড় বড় ব্যবসায়ীদের। হাতেম সম্পর্কে ভালো করেই জানা ব্যবসায়ীদের। যতদিন না বিদেয় হচ্ছেন, ততদিন নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করবেন তিনি। বিসিক এলাকায় ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিসিকের কী হাল তা যে কেউ খোঁজ নিলেই ভালো করে জানতে পারবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী ও জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে টানা ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনে হয়েছে ক্ষমতার পালাবদল। তবে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন)-তে এখনো রয়ে গেছে সাবেক সভাপতি এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের অদৃশ্য প্রভাব। সরকার পতনের আগ পর্যন্ত টানা ১৪ বছর পর নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে পর্ষদ গঠন করে সভাপতির পদ আঁকড়ে ছিলেন জাতীয় পার্টির এ নেতা।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অজ্ঞাত অবস্থান থেকে নিজের পদত্যাগপত্র বিকেএমইএ’তে পাঠান তিনি। পদত্যাগ করলেও এখনো তিনি যেন সিন্দাবাদের ভূতের মতো চেপে বসে আছেন পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমএইএ'র ঘাড়ে। কাগজে কলমে পদত্যাগ করলেও অদৃশ্যভাবে তিনি এখনো বিকেএমএইএ নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। কোনভাবেই বিকেএমএইএ থেকে তার প্রভাব সরানো যাচ্ছে না। কিছুদিন আগে এক সহসভাপতি পদত্যাগের একদিন পরেই সেই অদৃশ্য হাতের ইশারায় পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
বিকেএমইএ’র বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) উপলক্ষে প্রকাশিত স্যুভেনিয়রে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ৫ ডিসেম্বর ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বিকেএমইএ'র ২০২৩-২০২৪ সালের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) উপলক্ষে প্রকাশিত একটি স্যুভেনিয়রে দেখা গেছে সেলিম ওসমানসহ বর্তমান নেতৃত্বের দুইটি ছবি। বিগতদিনে বিকেএমইএ'তে অনেকেই সভাপতি থাকলেও কারো কোন ছবি না থাকলেও ছবি ছিল সেলিম ওসমানের। এতে ক্ষেপেছেন ব্যবসায়িক সংগঠনটির একাধিক নেতা। তারা বলছেন, সেলিম ওসমানের নিয়ন্ত্রণ থেকে এখনো বের হতে পারছে না বর্তমান নেতৃত্ব।
দীর্ঘদিন একক অধিপত্য বিস্তার করা সেলিম ওসমানের অনুসারীরা এখনও পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। পরিচালনা পর্ষদের ওইসব নেতাদের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারকে সহযোগিতা করারও অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের ‘দোসররা’ এখনও বিকেএমএইএ নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে এখনো সেলিম ওসমানের ছবি থাকছে স্যুভেনিয়রে।
এখনও পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি পদে রয়েছেন সেলিম ওসমানের মেয়ের জামাতা আখতার হোসেন অপূর্ব, ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ মোরশেদ সারোয়ার সোহেল। পরিচালক পদে আছেন মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভুঁইয়া সাজনু। এরমধ্যে মোরশেদ সারোয়ার সোহেল ও শাহাদাত হোসেন ভুঁইয়া সাজনুর বিরুদ্ধে রয়েছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় হত্যা মামলা।
বিকেএমএইএ'র বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। বিএনপির এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘এই হাতেম স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার প্রধান দোসর। তাঁর বক্তব্য, বিবৃতির সবকিছু আছে। তাকে দেখে এখন আপনারা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যবসা দিয়ে নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করছেন। মনে রাখবেন বিএনপির সবাইকে একসাথে করে ফেললেও গিয়াসউদ্দিনের মাথা গিলতে পারবেন না। আপনাদের ছাড় দেওয়া হবে না, অবিলম্বে এই কমিটি ভেঙে দিয়ে যারা ভালো নিরীহ তাদের দ্বারা কমিটি গঠন করতে হবে।’
বিকেএমইএ’র বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ থাকলে ‘বিএনপি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে’ বলে মন্তব্য করে বিএনপির এ নেতা ‘দালালদের বিতাড়িত’ করার আহ্বান জানান।
এদিকে বিসিকের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঝুট নিয়ে হাতেম, তার ছেলে ও দুই ভাতিজার টোকেন বিতরণ নিয়েও বিরক্ত ব্যবসায়ীরা। তবে কৌশলগত কারণে কেউ মুখ খুলছেন না। হাতেমসহ তারঁ ছেলে ও দুই ভাতিজার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে আছে, বিসিকের ৩নং গেইটের সামনে ইনোভেটিভ নীট্যাক্স লিমিটেড, নিমারেক ডিজাইন লিমিটেড, লা রিভ নীটওয়ার লিমিটেড, ফ্ল্যাকজেন ড্রেজ মেকার লিমিটেড, আরফোর ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড, জারা স্টাইল লিমিটেড, সায়েম নীট ফ্যাব্রিক্স, এমএম নীট ওয়্যার, ১নং গলির ইউনাইটেড নীট ফেব্রিক্স, টেক্চার নীট ওয়্যার লিমিটেড, স্টারলেট কম্পোজি লিমিটেড, এমএস ফ্যাশন নীট, ওয়ান ট্যাক্স নীট ওয়্যার, নিউফাতেমা নীট ফ্যাশন, ফায়ার সার্ভিস ডিফেন্স এর প্রথম গল্লিতে সিহাব নিট ওয়্যার, টমাস নীটিং, কিডস ওয়্যার নীট ফ্যাশন, এসএসএস নীট ওয়্যার লিমিটেড, বোরাক নীট ওয়্যার লিমিটেড, এমএস জুথি নীটিং, আহিল নীট ফ্যাব্রিক্স, এসকেও নীট ওয়্যার, জেধার নীটিং, শাহপীর নীট ওয়্যার, মাশফি নীট ওয়্যার, রীতা নীট ওয়্যার, ১নং গেইটের সাফিয়া এপারেলস লিমিটেড, ফাইয়াজ ফ্যাশন লিমিটেড, হাওলাদার এমব্রোডারি, জাস্ট নীট ওয়্যার, টেক্সার নীট ওয়্যার লিমিটেড, অটোমেশন নীটওয়্যার লিমিটেড, ফাহিম টেক্স লিমিটেড, ট্যালেন্ট অ্যাপারেলস লিমিটেড, এবিএফ ফ্যাশন লিমিটেড, এমএস ডাইং ডায়িং ও তার শাখা অনামিকা, স্টারলেট অ্যাপারেলস লিমিটিডে, ট্রাসকো এপ্যারেলস লিমিটেড, ফেইম ল্যাক্সওয়ার লিমিটেড, ৪নং গলির সায়েম নীট ফ্যাবিক্স, এমএস সোয়েব নীট ওয়্যার, মেসার্স ফারদিন নীট, নিহাম অ্যাপারেলস, ডিআর কাটিং, ইয়াং ফোর ইভার টেক্সটাইল লিমিটেড, ইউরো নীট স্পিন গার্মেন্ট প্রমুখ। এসকল প্রতিষ্ঠানের টোকেন ছাড়াও বিসিকের ৫০০ প্রতিষ্ঠানের বড় ১০৮টির বেশি কারখানার ঝুট হাতেম, তার ছেলে ও ভাতিজারা বিভিন্নজনদের বিতরণ করেছেন বলে জানিয়েছে সূত্র।
গত ২৫ আগস্ট এই পর্ষদ গঠনের তিন মাসের মাথায় সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনসুর আহমেদ এবং ডিরেক্টর খুরশিদ আহমেদ তুনিম। তারা দুইজন ২৮ নভেম্বর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট বরাবর তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন। সূত্র জানিয়েছে বর্তমান পর্ষদের আরো বেশ কয়েকজন হাতেমের প্রতি অনাস্থা এনে পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পদত্যাগ করা পরিচালনা পর্ষদের দুজন উল্লেখ করেন, ‘একটি ভারী হৃদয় এবং গভীর হতাশার সাথে যে আমরা বিকেএমইএর পরিচালনা পর্ষদের পদ থেকে অবিলম্বে কার্যকরী পদ থেকে পদত্যাগ করছি। এই সিদ্ধান্তটি এতো সহজে নেয়া হয়নি মোহাম্মদ হাতেমের সভাপতিত্বে বর্তমান নেতৃত্বের বিষয়ে আমাদের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের ফলাফল এই পদত্যাগ। আমরা এমন আচরণ লক্ষ্য করেছি, যা আমাদের দৃষ্টিতে স্বৈরাচারী প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে এবং ন্যায্যতা, অখণ্ডতা এবং গণতন্ত্রের নীতিগুলিকে দুর্বল করে, যা আমাদের সংস্থার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এই ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপগুলি আমাদের মূল্যবোধ এবং নৈতিক মানগুলির বিরোধিতা করে। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের বরাতে তারা উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট মাহাম্মদ হাতেম এবং আরও কিছু সিনিয়র বোর্ড অফ ডিরেক্টর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে (আওয়ামী লীগের) ফ্যাসিবাদকে সহযোগিতা করেছিলেন এবং জুলাই-আগস্টের গণহত্যাকে সমর্থন করেছিলেন এবং বিশেষ করে যারা নিরীহ ছাত্র ও সাধারণ জনগণকে হত্যা করেছিল। পদত্যাগপত্রে তারা বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং আমার বিবেকের আঁকড়ে ধরে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে যারা এই ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করে, তাদের পাশে আমরা কাজ করব না। অবশ্য পরে তারা তাদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেন নেন।
এ ছাড়া ও চলতি মাসের ১ নভেম্বর বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী এলাকায় এম ডব্লিউ স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গনে মাদক-চাঁদাবাজী-সন্ত্রাস রোধে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘অনেকেই জোহা পরিবারের চামচামি করে রাজনীতি করেছেন, আপনারা কি আদৌ স্বপ্ন দেখছেন যে সেই পরিবারকে নিয়ে আবারো রাজনীতি আসবে, কখনোই না। এই পরিবারের দুইটা সন্তান ছিল আজমিরী এবং অয়ন ওসমান। তারা কিন্তু কোন দলে নাম লেখায় নি। তাদের রাখা হয়েছিল সন্ত্রাসী এবং অর্থ লুটপাটের জন্য । গিয়াসউদ্দিন ব্যবসায়ী সংগঠন প্রসঙ্গে বলেন, ওয়ান ইলেভেনের আহ্বান যে ব্যবসায়ী সংগঠন করেছিল, সেই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এদের (আজমেরী-অয়ন) সাহায্য করেছে। ওসমান পরিবারের সাথে সমস্ত মিটিং মিছিলে ছিল। আজ তারা ভিন্ন বেশে সমাজে আসতে চায়, এতটা সহজ নয়। অনেকদিন খেলাধুলা করেছেন কিন্তু এখন বিপ্লব হয়েছে, এখন খেলাধুলা করতে এসে লাফ দিলে আপনার হাড়গোড় ভেঙ্গে যাবে। এখানে যে বিকেএমইএ সংগঠন আছে, সেখানকার সাবেক সভাপতি (সেলিম ওসমান) পালিয়ে গেছে। কিন্তু সহ সভাপতি মো. হাতেম এখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে। এই হাতেম স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার প্রধান দোসর। তার বক্তব্য, বিবৃতি সব আছে। আপনারা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যবসা দিয়ে নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করছেন, মনে রাখবেন বিএনপির সবাইকে একসাথে করে ফেললেও গিয়াস উদ্দিনের মাথা গিলতে পারবেন না। আপনাদের ছাড় দেওয়া হবে না, অবিলম্বে এই কমিটি ভেঙে দিয়ে যারা ভালো নিরীহ তাদের দ্বারা কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি থাকলে বিএনপি বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমার আহ্বান থাকবে এই সমস্ত দালালদের বিতাড়িত করে আপনারা নতুন কমিটি গঠন করেন।'