যুগের চিন্তার কণ্ঠরোধে কলকাঠি নাড়ছেন সেলিম ওসমান
ঝুট ব্যবসায়ী হাতেমকে রক্ষায় ওসমান দোসররা সক্রিয়
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
ওসমান পরিবার এবং সেলিম ওসমানের বিশ^স্ত সহযোগী ঝুট ব্যবসায়ী হাতেমকে রক্ষায় এবার মাঠে নেমেছেন ওসমান দালালরা। তারা নানাভাবে চেষ্টা করছেন বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে যেভাবে যুগের চিন্তার কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা হয়েছিল তারই পুনরাবৃত্তি করার। চিহ্নিত ঝুট ব্যবসায়ী হাতেমের পক্ষ নিয়ে ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এবং তাদের অপকর্মের দোসর মিনার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল হক, বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সেলিম সারোয়ার এবং বিসিক শিল্প মালিক সমবায় সমিতি লি. এর সহ-সভাপতি আবু তাহের শামীম গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে যুগের চিন্তা পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন। বিকেএমইএ, বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশন এবং বিসিক শিল্প মালিক সমবায় সমিতি লি. এর ২৯৫ জন সদস্য প্রতিষ্ঠানের মালিকের স্বাক্ষর সম্বলিত ১৩ টি শীট সংযুক্ত করে সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ট এই তিন ব্যবসায়ী এই দাবি করেন।
তাদের আবেদনে বলা হয়েছে,‘নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকা ‘দৈনিক যুগের চিন্তা’ পত্রিকায় বিকেএমইএ ও বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে ঝুট ব্যবসায়ী আখ্যায়িত করে তাঁর বিরুদ্ধে লাগাতার নানা প্রকার কুৎসা রটনা ও নির্লজ্জ মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানাই। তারা উল্লেখ করেন, আমরা বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন- বিকেএমইএ, বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশন এবং বিসিক শিল্প মালিক সমবায় সমিতি লি. এর সদস্যগণ এই মর্মে অভিযোগ দিচ্ছি যে, নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক যুগের চিন্তা' বিকেএমইএ ও বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সম্মানিত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে ঝুট ব্যবসায়ী, ভূমি দস্যু আখ্যায়িত করে তাঁর এবং তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে লাগাতারভাবে নানা প্রকার কুৎসা রটনা ও নির্লজ্জ মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে, যা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যাচ্ছেনা, যা একেবারেই বাস্তবতা বিবর্জিত। এতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রপ্তানিখাতের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বিকেএমইএ'র ভাবমুর্তি যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে, আবার সভাপতি মোহম্মেদ হাতেমের মানহানি ঘটছে চরমভাবে। আমরা এ ধরনের ন্যাক্কার জনক নির্লজ্জ মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জনাচ্ছি এবং পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিলের দাবী জানাচ্ছি। উল্লেখ করেন, বিগত সরকারের আমলের নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় ঝুট সন্ত্রাসী ও আরও দুজনকে সাথে নিয়ে তার ঢাকার বাসায় যান। এসময় তাদেরকে ৫টি ফ্যাক্টরীর ঝুট পাইয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি তাতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে চলে যায়। এর পর থেকে তাকে নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার শুরু করে। এর অংশ হিসেবে এসব বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। তারা উল্লেখ করেন, ছাত্র জনতার বিপ্লবের পর সংগঠনের সভাপতি পদে থাকা সাবেক এমপি একেএম সেলিম ওসমান পদত্যাগ করেন। এরপর গত ২৫ আগষ্ট ২০২৪ বোর্ড সভা সর্বসম্মতিতে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করে।
এসব ব্যবসায়ী দাবি করেন, আমাদের জানা মতে, মোহাম্মদ হাতেম কখনো কোন রাজনৈতিক দল বা কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। ফলে যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল তার বিপক্ষ দলের তকমা দেওয়ার চেষ্টা করেছে কুচক্রী মহল, এখন যেমন তাঁকে স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর বানাবার চেষ্টা করা হচ্ছে, তেমনই ২০১০ সালে যখন বিকেএমইএ নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে গেলেন তখন তাকে এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জামায়াত-বিএনপি বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। বিকেএমইএ'র যে দু'জন সদস্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে পত্র দিয়েছেন বিকেএমইএ তে বা দেশের পোশাক খাতে বিগত ২৮ বছরে তাদের কী ভূমিকা ছিল তা অনুসন্ধান করতে আমরা বিনীত অনুরোধ করছি। একই সাথে মোহাম্মদ হাতেম সম্পর্কে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা, ব্যবসায়ী মহলে খোঁজ নিলেই আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
এসব ব্যবসায়ী স্মারকলিপিতে দাবি করেন, বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ৫ আগষ্ট ২০২৪ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে স্বৈরাচারী- ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে পোশাক শিল্পের যে ৪৮ জন তরুন উদ্যোক্তা বিবৃতি দিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের এক দফা দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল তার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিল মোহাম্মদ হাতেমের ছেলে হাসিন আরমান (পরিচালক, এমবি নীট ফ্যাশন। ১ম সহ-সভাপতি, 'বাংলাদেশ এ্যাপারেলস ইয়ুথ লীডার্স এলায়েন্স)। এছাড়া তার পরিবারের অন্যান্য বিবৃতিদাতারা ছিল- তার ভাতিজা ইকবাল হাসান (পরিচালক, ফেয়ার এ্যাপারেলস লি)।
এদিকে ঝুট ব্যবসায়ী হাতেম গত ১৫ বছর ধরে ওসমান পরিবারের দোসর হিসেবে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নির্যাতন, দমন-পীড়নের সাথে জড়িত ছিলেন। ওই সময়ে ব্যবসায়ীরা এতো বেশি দমনপীড়নের শিকার হয়েছেন যে, তখন ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেননি। এই ভয়টা এখনো ব্যবসায়ীদের মধ্যে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ওসমান পরিবারের অন্যতম দোসর হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ হাতেম ৫ আগস্ট স্বৈরশাসকের বিদায়ের পর অবস্থা বুঝে ২৫ আগস্ট সেলিম ওসমানের প্রেসক্রিপশনে বিকেএমইএ’র সভাপতি পদ দখল করেন।খোদ সেলিম ওসমান ২৪ আগস্ট চিঠি দিয়ে ব্যবসায়ীদের চিঠি দিয়ে সভাপতি হিসেবে হাতেমকে গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেন। ২৪ আগস্ট সেলিম ওসমান শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিকেএমইএ'র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনে অপারগতা এবং সেই কারণে বিকেএমইএ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে পদত্যাগ প্রসঙ্গে চিঠি পাঠান। ওই চিঠির শেষ প্যারায় সেলিম ওসমান উল্লেখ করেন, ‘আপনারা সকলেই স্বীকার করবেন যে, বর্তমান নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দীর্ঘদিন ধতে আমাকে, বিকেএমইএ-কে ও নীট সেক্টরের উন্নতির জন্য সহায়তা করে গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি পরিচালনা পর্ষদের সকলের কাছে অনুরোধ রাখতে চাই, আমার বিদায়ের পর পর বিকেএমইএ ও নীট সেক্টরের উন্নয়ন কল্পে মোহাম্মদ হাতেম এর অবদান এবং প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করে তাকে এই নতুন বিকেএমইএ পরিচালনার জন্য সভাপতি'র দায়িত্বভার অর্পণ করা হোক। আপনাদের প্রতি এই আমার বিশেষ অনুরোধ।’
এছাড়া তবে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর দেশের অন্যতম একটি ব্যবসায়ীক সংগঠন বিকেএমইএ’র শীর্ষ পদ থেকে ওসমান দোসর হাতেমকে অপসারণের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হন ব্যবসায়ীরা। চলতি বছরের ডিসেম্বরের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অন্তবর্তীর্কালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ও বাণিজ্য সচিব বরাবর বিকেএমইএ’র সভাপতি পদ থেকে অপসারণের দাবিতে ব্যবসায়ীদের পক্ষে স্মারকলিপি দেন প্রীতম নিটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু জাফর আহমেদ এবং কেএএস নিটওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলমগীর কবির।। ওই আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, চিঠিতে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, বিগত ১৪ বছরে সেলিম ওসমান তার অনুগতদের নিয়ে বিকেএমইএর কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, যেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার লঙ্ঘন হয়েছে। তার পদত্যাগের পরও অনুগত পর্ষদ দিয়ে মোহাম্মদ হাতেমকে সভাপতি হিসেবে বসানো হয়েছে, যা সংগঠনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
চিঠিতে মোহাম্মদ হাতেমকে সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করার প্রক্রিয়াকে ব্যবসায়ীরা ‘প্রহসন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা মনে করেন, হাতেমকে সভাপতি হিসেবে তৈরি করার উদ্দেশ্যে ২০২১ সালে নির্বাহী সভাপতির একটি নতুন পদ সৃষ্টি করে সেখানে তাকে বসানো হয়। বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলের পুরোটাই সেলিম ওসমানের অনুগত থেকে মোহাম্মদ হাতেমও পুরোপুরি ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করেছেন বলে তারা উল্লেখ করেন।
মোহাম্মদ হাতেম বিগত সরকারের কতটা আজ্ঞাবহ ছিলেন তার প্রমাণ হিসেবে গত ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামনে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা উল্লেখ করেছেন। ওই বৈঠকে বিকেএমইর তৎকালীন নির্বাহী সভাপতি (বর্তমান সভাপতি) মো. হাতেম বলেন, “এরকম একটি সংকটকালে আমরা এমন সিচুয়েশন দেখবো সেটা আশা করিনি। যে তান্ডব আমরা গত কয়েক দিনে দেখেছি, আমরা আশা করবো, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য যারা আছেন, তারা তা উদঘাটন করবেন এবং আইনের আওতায় আনবেন। আমরা সরকারের পাশে সবসময়ই ছিলাম, এখনো আছি ভবিষ্যতেও থাকবো।” ব্যবসায়ীদের মতে, সেলিম ওসমান এবং তার অনুগতদের নেতৃত্বে বিকেএমইএতে কোটি কোটি টাকার লোপাট ও দুর্নীতি হয়েছে। তারা মোহাম্মদ হাতেমের বিরুদ্ধে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ এবং নারায়ণগঞ্জ বিসিক অঞ্চলে জায়গা-জমি দখলের অভিযোগ ও করেছেন। তাদের দাবি হাতেমের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে তিনি সরকারের প্রতি অতিমাত্রায় অনুগত থেকেছেন, যা সংগঠনের স্বার্থের পরিপন্থী।’
মাঝে গত ২৮ নভেম্বর নির্বাহী সভাপতির বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন বিকেএমইএ’র শীর্ষ দুই নেতা। তাদের মধ্যে মনসুর আহমেদ বিকেএমইএ’র জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং খুরশীদ আহমেদ তনিম পরিচালক পদে ছিলেন। মজার বিষয় হল এই মনসুর আহমেদ গতকাল জেলা প্রশাসকের কাছে হাতেমের পক্ষে যুগের চিন্তা পত্রিকা বন্ধের দাবি জানিন। অথচ ২৮ নভেম্বর তার দেয়া পদত্যাগপত্রে তারা বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর বা সহযোগী’ উল্লেখ করে বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী আচরণ এবং অনৈতিক কার্যক্রমের অভিযোগ তুলেছেন। তাদের অভিযোগ ছিল, ‘বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের নেতৃত্বে সংগঠনের মূল্যবোধ ও নৈতিক মানদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বলেন, "আমরা লক্ষ্য করেছি যে বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে এমন কিছু কর্মকাণ্ড ঘটছে যা আমাদের আমাদের সংগঠনের মূলনীতি- ন্যায়পরায়ণতা, সততা এবং গণতান্ত্রিক চর্চাকে লঙ্ঘন করছে।” গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের বরাতে সংগঠনের এ দুই পরিচালক বলেন, “বর্তমান সভাপতি এবং কিছু সিনিয়র বোর্ড সদস্যরা ফ্যাসিজমকে সহযোগিতা করেছে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও সাধারণ ছাত্র-জনগণের ওপর নির্যাতনকারী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।” শুধু পদত্যাগই নয়, এই দুই নেতা আগামী ৫ ডিসেম্বরে ডাকা সংগঠনের বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) ও বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) বাতিলের আহ্বান জানান। তারা আরও বলেন, “মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং আমাদের বিবেকের তাড়নায়, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, যারা এই ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করে, তাদের সঙ্গে আর কাজ করব না।” এরদুইদিন পর আবার কোন কারণ ব্যাখ্যা না করেই দুইজন তাদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেন। ধারণা করা হয়, সেলিম ওসমানের চাপেই তারা দুইজন পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেন।
এদিকে হুট করেই গত ৫ ডিসেম্বর বিকেএমইএর ইজিএমে হাতেম নিজের ছেলেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষের সাইবার যোদ্ধা দাবি করেন। আদতে ফ্যাসিস্ট সরকারের সর্বমহলে ঘনিষ্ট ছিল তার ছেলে। এই দাবি করার পর তার ছেলের সাথে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠতার ছবি ভাইরাল হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ইজিএম অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ হাতেম বারবার ঘোষণা করতে থাকেন বিকেএমইএর এই অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই প্রধান সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠান শুরুর পর থেকে তিনি বলেই যাচ্ছেন এই তো তারা চলেই আসছেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা উপস্থিত হবেন। এই তো তারা লিফটের উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এই তো তারা এক্ষুনি চলে আসবেন। কিন্তু আদতে শেষ পর্যন্ত তাদের কেউই বিকেএমইএ’র এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। বারবার এই স্ট্যান্টবাজির অর্থ ছিল, হাতেম বোঝাতে চেয়েছেন, তার সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতাদের গভীর সম্পর্ক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের এই অনুষ্ঠানে তো তাদের আসারই কথা না। কিন্তু হাতেম এটি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেও কাছের লোক। অথচ তিনি যে, শেখ হাসিনা সরকার ও ওসমানদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তা তো ভিডিও বক্তব্য ও পত্রিকার পাতায় স্পষ্ট প্রমাণ আছে। সারাদেশের মানুষ যে তার অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানে সেটি তিনি ভুলেই গেছেন, আর ব্যবসায়ীরা তো খুব ভালো করেই জানেন হাতেম গত ১৫ বছর যাবৎ ওসমানদের হয়ে কী কী করেছেন। অনেকে টিপ্পনী কেটে কানাঘুষো করেন, কে বসালো হাতেমকে সভাপতির পদে নির্বাচন ছাড়া! তিনি ৫ আগস্টের পর কী করে হর্তাকর্তা বনে গেলেন। আর তার এই কমিটিতে তো অনেক ওসমানীয় বলয়ের লোকে ভরপুর। তিনিও তাদের মধ্যে অন্যতম। গত নভেম্বর মাসেই তো তাকে ফ্যাসিস্টদের দোসর খেতাব দিয়ে কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মনসুর আহমেদসহ আরো একজন। পরবর্তীতে অবশ্য তারা পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেন। পদত্যাগপত্র যে চাপে প্রত্যাহার করা হয়েছিলো সেটি বুঝা গেছে, ইজিএম সভায় মনসুর আহমেদ অনুপুস্থিত ছিলেন।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ও ওসমান পরিবারের কতটা আজ্ঞাবহ ছিলে ঝুট ব্যবসায়ী হাতেম সর্বশেষ তার প্রমাণ দিয়েছেন গত ২২ জুলাই। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে বিকেএমইর তৎকালীন নির্বাহী সভাপতি (বর্তমান সভাপতি) মো. হাতেম বলেন, 'এরকম একটি সঙ্কটকালে আমরা এমন সিচুয়েশন দেখবো সেটা আশা করিনি। যে তান্ডব আমরা গত কয়েক দিনে দেখেছি, আমরা আশা করব, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য যারা আছেন, তারা তা উদ্ঘাটন করবেন এবং আইনের আওতায় আনবেন। আমরা সরকারের পাশে সবসময়ই ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো।’