Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

স্মারকলিপি দিতে গিয়েও হাতেমের স্ট্যান্টবাজি

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

স্মারকলিপি দিতে গিয়েও হাতেমের স্ট্যান্টবাজি

ভুল বুঝিয়ে অনেক ব্যবসায়ীকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে ঝুট ব্যবসায়ী হাতেমের স্ট্যান্টবাজি

 বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ওসমান পরিবার তাদের দোসর হিসেবে ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাতেমকে বিকেএমইএ’র শীর্ষ পদে বসিয়েছিল তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে। তবে সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমানের পদত্যাগের চিঠির সূত্র ধরে ওসমানদের নীলনকশা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় হাতেমকে দিয়ে যে আগামীতে সেটি হচ্ছেনা এটি নিশ্চিত হয়ে গেছে। এদিকে বর্তমানে রাজনীতিক, ব্যবসায়ীবৃন্দ, মিডিয়ার কঠোর সমালোচনার মুখে মোহাম্মদ হাতেম বিকেএমইএর সভাপতি পদ বাঁচাতে হন্য হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছেন, নানা জায়গায় অর্থ লগ্নি করেও তদ্বির করানোর চেষ্টা করেছেন তবে কোথাও কেউ আশার আলো দিতে পারেননি। ওসমানদের হয়ে গত ১৬ বছর হাতেম ব্যবসায়ীদের উপর নানাভাবে শোষন, অত্যাচার ও খবরদারি করেছে। ওসমানদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেননি। ওসমানদের বিপক্ষে কোন ব্যবসায়ী নূন্যতম প্রতিবাদ করলে কিংবা তাদের কথার অবাধ্য হলে ওসমানদের দোসর হিসেবে কুখ্যাত ব্যক্তিদের দিয়ে ওই মালিকে ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করা হতো। আবার এই হাতেমকে দিয়েই সেই অসন্তোষ মিটমাট করার কথা বলে ব্যবসায়ীদের সাথে দেনদরবার করা হতো বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।


বর্তমানে বিভিন্নভাবে চাপে রয়েছেন মোহাম্মদ হাতেম। ওসমানদের এই দোসর হাতেমকে রক্ষায় এবার মাঠে নেমেছেন কয়েকজন ওসমান দালালরা। তারা নানাভাবে চেষ্টা করছেন বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে যেভাবে যুগের চিন্তার কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা হয়েছিল তারই পুনরাবৃত্তি করার। চিহ্নিত ঝুট ব্যবসায়ী হাতেমের পক্ষ নিয়ে ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এবং তাদের অপকর্মের দোসর মিনার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল হক, বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সেলিম সারোয়ার এবং বিসিক শিল্প মালিক সমবায় সমিতি লি. এর সহ-সভাপতি আবু তাহের শামীম গত রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে যুগের চিন্তা পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন। বিকেএমইএ, বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশন এবং বিসিক শিল্প মালিক সমবায় সমিতি লি. এর ২৯৫ জন সদস্য প্রতিষ্ঠানের মালিকের স্বাক্ষর সম্বলিত ১৩ টি শীট সংযুক্ত করে সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ট এই তিন ব্যবসায়ী এই দাবি করেন।

এদিকে গত রোববার বিকাল চারটা থেকে হঠাৎ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে কয়েকজন নিটিং ব্যবসায়ীদের আনাগোনা দেখা যায়। এরই মধ্যে আরো কয়েকজন বহিরাগত তাদের সাথে একে একে আসতে শুরু করে। সে সময় সেখানে একটি সাদা গাড়িতে থেকে নামতে দেখা যায় ঝুট ব্যবসায়ী বিকেএমই‘এ এর সভাপতি ওসমান দোসর মোহাম্মদ হাতেমের ছেলে হাসিন আরমান (অয়ন) কে। সে এসেই সকলের সাথে কথা শুরু করেন। এর মধ্যে অনেকে তাকে চিনেন আবার অনেক বহিরাগতরা তাকে চিনেন না। সে সময় হাতেমের ছেলে আরমান (অয়ন) তার পকেট থেকে ফোন বেড় করে সেখানে উপস্থিতি সকলের ছবি ও (ভিডিও) শুরু করেন। সে সময় আরো অনেকেই তাদের সাথে এসে সংযুক্ত হন। সে সময় একে অপরকে বলতে দেখা যায়, আজকে হঠাৎ কেন ডিসি অফিসে থাকলো কিছুই বুঝতে পারছি না। পাশে জন ও বলে সেটাই হঠাৎ হাতেম ভাই ফোন দিয়া বললো আসতে। এমনভাকে প্রায় ৪০ মিনিট পেরিয়ে গেলে সেখানে হাতেমের ছেলে বারবার বলতে থাকে। এই যে, বাবা আইসা পরতাছে। কাছাকাছি আছে, এই যে, আইসা পরছে। এদিকে সেখানে উপস্থিত হওয়ায় কয়েকজনকে সাইডে এনে জিজ্ঞেস করা হয় এখানে ও কোন বড় পোগ্রাম আছে। তারা উত্তরে বলেন, জানি না তো আমাদের বিকেএমই‘এ এর সভাপতি সাহেব আসতে বলছে জরুরী মিটিং বলে তাই আসলাম। এর আরো প্রায় ২০ মিনিট পর একটি কালো ল্যান্ড ক্সোজার গাড়িতে চরে সেখানে উপস্থিত হন। বিকেএমই‘এ এর সাবেক পরিচালক ও বর্তমান সহ-সভাপতি মো. শামসুজ্জামান, নবগঠিত পর্ষদে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মনসুর আহমেদ। তখনই তাদের সাথে সকলেই জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে যান। সেখানে ওসমানদের বিগত দিনের দাললরা জেলা প্রশাসকের সামনে সারিতে বসেন আর বাকিরা সাইডে-চেয়ারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন। কিন্তু সেখানে প্রথম সারির দুই-চার জন ব্যাত্বিত সেখানে ব্যবসায়ী পরিচয় দেওয়া অনেকেই কেউ তারা কোন সংগঠনের নাকি কোন গার্মেন্টস বা ফ্যাক্টরী ব্যবসায়ী কেউ সেখানে কোনটাই উল্লেখ করেননি। এর বাহিরে এখানে ব্যবসায়ী ছাড়া ও কয়েকজন বহিরাগতদের উপস্থিত লক্ষ্য করা গেছে। সে সময় সামনের সারিতে থাকা কয়েকজন ওসমান দোসর তাদের বক্তব্য রেখে শেষ পর্যায়ে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রধান করেন যেখানে সেউ স্মারকলিপি সেখানে তারিখ দেওয়া ছিলো ১৮/১২/২৪ কিন্তু জমা দেওয়া হয়েছে ২২/১২/২৪।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, শনিবার হঠাৎ হাতেম সাহেব ফোন দিয়ে বললো রোববার বিকালে সকল ব্যবসায়ী ডিসি অফিসে থাকবেন আপনাকে ও থাকতে হবে। আমি বললাম কি বিষয় তখন সে বললো সেটা আসলেই বুঝতে পারবেন। এমন করে বেশ কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করলে তারা সকলেই বলেন এখানে কি বিষয় এসেছি। এটা অজানা, কেউ জানি না। আবার কেউ কেউ মুখ কথায় হাতেমের ছেলে মুখে এখানে এসে শুনেছে কি জানি একটি পত্রিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে ডিসি সাহেবের নিকট। এর বাহিরে কি হচ্ছে না হচ্ছে সকলেই ছিলো অজানা।

এ দিকে জানা গেছে, ঝুট ব্যবসায়ী হাতেম গত ১৫ বছর ধরে ওসমান পরিবারের দোসর হিসেবে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নির্যাতন, দমন-পীড়নের সাথে জড়িত ছিলেন। ওই সময়ে ব্যবসায়ীরা এতো বেশি দমনপীড়নের শিকার হয়েছেন যে, তখন ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেননি। এই ভয়টা এখনো ব্যবসায়ীদের মধ্যে কাজ করছে।

উল্লেখ্য, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ওসমান পরিবারের অন্যতম দোসর হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ হাতেম ৫ আগস্ট স্বৈরশাসকের বিদায়ের পর অবস্থা বুঝে ২৫ আগস্ট সেলিম ওসমানের প্রেসক্রিপশনে বিকেএমইএ’র সভাপতি পদ দখল করেন।খোদ সেলিম ওসমান ২৪ আগস্ট চিঠি দিয়ে ব্যবসায়ীদের চিঠি দিয়ে সভাপতি হিসেবে হাতেমকে গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেন। ২৪ আগস্ট সেলিম ওসমান শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিকেএমইএ'র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনে অপারগতা এবং সেই কারণে বিকেএমইএ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে পদত্যাগ প্রসঙ্গে চিঠি পাঠান। ওই চিঠির শেষ প্যারায় সেলিম ওসমান উল্লেখ করেন, ‘আপনারা সকলেই স্বীকার করবেন যে, বর্তমান নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দীর্ঘদিন ধতে আমাকে, বিকেএমইএ-কে ও নীট সেক্টরের উন্নতির জন্য সহায়তা করে গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি পরিচালনা পর্ষদের সকলের কাছে অনুরোধ রাখতে চাই, আমার বিদায়ের পর পর বিকেএমইএ ও নীট সেক্টরের উন্নয়ন কল্পে মোহাম্মদ হাতেম এর অবদান এবং প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করে তাকে এই নতুন বিকেএমইএ পরিচালনার জন্য সভাপতি'র দায়িত্বভার অর্পণ করা হোক। আপনাদের প্রতি এই আমার বিশেষ অনুরোধ।’ এছাড়া  তবে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর দেশের অন্যতম একটি ব্যবসায়ীক সংগঠন বিকেএমইএ’র শীর্ষ পদ থেকে ওসমান দোসর হাতেমকে অপসারণের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হন ব্যবসায়ীরা। চলতি বছরের ডিসেম্বরের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অন্তবর্তীর্কালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ও বাণিজ্য সচিব বরাবর বিকেএমইএ’র সভাপতি পদ থেকে অপসারণের দাবিতে ব্যবসায়ীদের পক্ষে স্মারকলিপি দেন প্রীতম নিটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু জাফর আহমেদ এবং কেএএস নিটওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলমগীর কবির।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন