Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

বাংলামোটরে ঘুরঘুর করছেন হাতেম ও তাঁর ছেলে

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

বাংলামোটরে ঘুরঘুর করছেন হাতেম ও তাঁর ছেলে

ঝুট ব্যবসায়ী হাতেম ও তার ছেলে হাসিন আরমান অয়ন

ওসমানদের দোসর হিসেবে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর সেলিম ওসমানের পদত্যাগপত্রের প্রেসক্রিপশনে শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন বিকেএমইএ'র সভাপতি পদ দখল নেওয়া ঝুট ব্যবসায়ী হাতেম। তিনি সেরিম ওসমানের স্বাক্ষরে সভাপতির পদে আদিষ্ট হওয়ার চিঠিসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির বক্তব্যের (ভিডিও) বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উড়ছে। যাকে ঘিরে বর্তমানে ব্যবসায়ীসহ রাজনৈতিক ব্যক্তি বেশির ভাগই বর্তমানে হাতেমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় চতুমুর্খী চাপে আছেন এই হাতেম। যাকে ঘিরে তিনি ও তার ছেলে হাসিন আরমান (অয়ন)কে এখন প্রায় সময় রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ন টাওয়ারে আশেপাশে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায়।


এর আগে ও বিকেএমইএর সভাপতি পদ বাঁচাতে হন্য হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছেন, নানা জায়গায় অর্থ লগ্নি করেও তদ্বির করানোর চেষ্টা করেছেন তবে কোথাও কেউ আশার আলো দিতে পারেননি। ওসমানদের হয়ে গত ১৬ বছর হাতেম ব্যবসায়ীদের উপর নানাভাবে শোষন, অত্যাচার ও খবরদারি করেছে। ওসমানদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেননি। ওসমানদের বিপক্ষে কোন ব্যবসায়ী নুন্যতম প্রতিবাদ করলে কিংবা তাদের কথার অবাধ্য হলে ওসমানদের দোসর হিসেবে কুখ্যাত ব্যক্তিদের দিয়ে ওই মালিকে ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করা হতো। আবার এই হাতেমকে দিয়েই সেই অসন্তোষ মিটমাট করার কথা বলে ব্যবসায়ীদের সাথে দেনদরবার করা হতো বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। হাতেমের মাধ্যমে ওসমানদের এই চাঁদাবাজি, ফ্যাক্টরিতে অসন্তোষ তৈরিতে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। যার ফলে কেউই তখন ওসমানদের এই সিন্ডিকেটের বিপক্ষে অবস্থান নিতেননা। ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর ২৫ আগস্ট অসুস্থতার কথা বলে পদত্যাগপত্র পাঠান সেলিম ওসমান।



 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওসমানদের ছত্রছায়ায় মোহাম্মদ হাতেম বিসিক এলাকার বহু ব্যবসায়ীকে ব্যবসা ছেড়ে যেতে বাধ্য করে। একদিকে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, আরেকদিকে জমি ব্যবসায় রমরমা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে হাতেম। ওসমান পরিবারের প্রত্যক্ষ ঠিকাদার হিসেবে কাজ করতেন হাতেম। একদিকে সেলিম ওসমান, শামীম ওসমান এবং অয়ন ওসমানের নিয়ন্ত্রিত বাহিনীকে ঝুট বিতরণ করতেন, অপরদিকে আজমেরী ওসমানের সাথে সখ্যতা রেখে তার ক্যাডারবাহিনীর মাধ্যমেও ফ্যাক্টরির ঝুট নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে শুধু ঝুট নয়, বিসিক এলাকায় বিচার- শালিশের নামে ব্যবসায়ীদের উপর নানা অত্যাচারের কথা এখন সেখানকার মানুষের মুখে মুখে। বিসিক এলাকার ওসমানদের হয়ে ব্যবসায়ীদের উপর এমন কোন খড়গ চালানো বাকি রাখতেননা হাতেম। ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ বিসিক এলাকায় ওসমাদের সময় নির্বাচনে ইচ্ছুক ব্যবসায়ীদের নির্যাতনের জন্য টর্চার সেলও করা হয়েছিল। ঝুট ব্যবসায়ী হাতেমের অত্যন্ত ঘনিষ্ট আরেকটি সংগঠনের ওই ব্যক্তির মাধ্যমেই ওই টর্চার সেলটি ব্যবহৃত হতো। এখনো সেই সংগঠনের সভাপতি পদে রয়েছেন ওসমানদের আরেক দোসর। সবদিক বিবেনা করে বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হক, বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মনসুর আহমেদসহ আরো বেশ কয়েকজনকে ঠিক ভরসা করে উঠতে পারেননি সেলিম ওসমান। যার ফলে সিনিয়র সহসভাপতি মনসুরকে বাদ দিয়ে ঝুট ব্যবসায়ী হাতেমকে সভাপতি করার নির্দেশ দেন সেলিম ওসমান।


এদিকে বর্তমানে বৈষম্যের শিকার বিকেএমইএ’র সাধারণ সদস্যদের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছেন প্রীতম নিটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু জাফর আহমেদ এবং কেএএস নিটওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলমগীর কবির। তবে তারা অভিযোগটি দায়ের করলেও অতীতে বৈষম্যের শিকার ও ওসমান পরিবার তথা হাতেম গংদের আগ্রাসনের শিকার বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ীদের সমর্থনেই এই অভিযোগটি দায়ের করেন তারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ওসমানদের সময় থেকেই হাতেমকে যতটা না ব্যবসায়ী বলা চলে, তার চেয়ে বড় দাগে ঝুট ব্যবসায়ী, জমি দখলদার, ভূমিদস্যুতার সেটেলমেন্ট ব্যবসায়ী, ওসমানদের দখলদার বলা চলে। ওসমানদের হয়ে হাতেম গং সিন্ডিকেট জমির দালালিতেও সিদ্ধহস্ত ছিল। বর্তমানে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দফায় দফায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় হাতেমকে রক্ষায় উঠে পরে লেগেছে ওসমান দোসররা। তারা নানাভাবে চেষ্টা করছেন বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে যেভাবে যুগের চিন্তার কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা হয়েছিল তারই পুনরাবৃত্তি করার। চিহ্নিত ঝুট ব্যবসায়ী হাতেমের পক্ষ নিয়ে ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এবং তাদের অপকর্মের দোসর মিনার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল হক, বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সেলিম সারোয়ার এবং বিসিক শিল্প মালিক সমবায় সমিতি লি. এর সহ-সভাপতি আবু তাহের শামীম গত রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে যুগের চিন্তা পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের জন্য আবেদন করেন। আবার স্বৈরাশাসকের দোসরকে ব্যবসায়ীদের জাতীয় নেতা আখ্যা দেওয়ায় অনেক ব্যবসায়ীরা এটা নিয়ে হাস্যরস করছে। বর্তমানে নানা জায়গায় দৌড়ঝাঁপ শেষে বর্তমানে রাজধানীর বাংলামোটর রূপায়ন টাওয়ারের আশপাশের একটি অফিসে নিচে তাকে ও তার ছেলে অয়নকে কয়েকবার দেখা যায়। তারা বাপ-ছেলে সেখানে হন্য হয়ে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন