ওসমানদের দোসর হয়ে ষড়যন্ত্রে মেতেছেন সেলিম সারোয়ার
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম সারোয়ার
বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জে ত্রাস কায়েম করে সর্বমহলে নিয়ন্ত্রণ চালিয়েছে ওসমান পরিবার। ওসমান পরিবারের অন্যতম সদস্য শামীম ওসমান গডফাদার পরিচিতি পাওয়ায় তার কাছে সকল ব্যবসায়ী মহল জিম্মি ছিল। অভিযোগ রয়েছে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী সংগঠনের লোকদের মাধ্যমে সাবেক এমপি শামীম ওসমান সহ পুরো ওসমান পরিবার মিলে দেশের বাইরে চার হাজার টাকা পাচার করেছে। তাদের টাকা পাচারের সাথে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা কিছু ব্যক্তি জরিত রয়েছে। যারা ওসমানদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন। এছাড়া ইতোমধ্যে দদুকের অনুসন্ধানে শামীম ওসমানের কানাডায় এবং দুবাইয়ে বাড়ি রয়েছে তা প্রকাশ হয়েছে। ওসমানদের অনুগত ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় টাকা পাচার করেছে বলে ব্যবসায়ী মহলে গুঞ্জন রয়েছে। ওসমানারা ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের মাধ্যমে নিজেদের চাদাঁবাজির রামরাজত্ব চালিয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের অর্থকারী ফসল সোনালী আঁশ পাটকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে ‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’ হিসেবে পরিচিত ছিল নারায়ণগঞ্জ। ইতিহাস-ঐতিহ্য ও শিল্প- বাণিজ্যে সমৃদ্ধ জেলাটি। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক নগরী। বর্তমানে গার্মেন্টস, নিটিং, হোসিয়ারি সেক্টর ব্যবসায় আধিপত্য রয়েছে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের। দেশের ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসির পরেই বিকেএমইএ, নিটিং ওনার্স এসোসিয়শনের অবস্থান রয়েছে। তার মাঝে বিকেএম তে নেতৃত্বে ছিলেন সেলিম ওসমান এবং বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশনে নেতৃত্বে ছিলেন তাদের অনুগত ব্যক্তিরা। এখনো তাদের ভয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীরা এখনো মুখ খুলতে সাহস পান না। ওসমান সাম্রাজ্যের দোসরদের চাদাঁর টাকা ঠিকই দিতে হয়েছে। তাছাড়া বিকেএমইএ’র সভাপতি হাতেমকে ওসমানদের প্রধান দোসর বলে ক্ষোভ ঝারেন সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন। এছাড়া অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনে ওসমানদের দোসর যারা নেতৃত্বে রয়েছেন তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন ভাবে ভালো লোকদের নিয়ে সাজানোর আহ্বান জানান তিনি।
বিপরীতে বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশনে নেতৃত্ব দিয়েছে ওসমানদের দোসররা। বিগত সময়ে এই ব্যবসায়ী সংগঠনে সেলিম ওসমানের আস্থাভাজন তথা ওসমানদের দোসর মাহবুবর রহমান স্বপন, সেলিম সারোয়ারের নেতৃত্বে ওসমান অনুগত ব্যবসায়ীরা এই সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাছাড়া স্বপন এবং সেলিম সারোয়ারের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের ইছাপুরায় হওয়ায় তারা সহজে ওসমানদের আস্থা অর্জন করে। কেননা ওসমানরা নারায়ণগঞ্জের চেয়ে বাহিরের জেলার লোকদের কাছে ভিড়িয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। এছাড়া তাদের সাথে থাকা ওসমান ঘনিষ্ঠরা হলেন নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি মো. আবুল বাসার মো. কামাল হোসেন, রকিবুল হাসান রাকিব, এছাড়া আরও রয়েছে মো. মিজানুর রহমান (মিজান), আবু বকর সিদ্দিক আবুল মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মো. আবু জাফর হাওলাদার । তারা ওসমানদের দোসর হয়েও এখনো পর্যন্ত দাপটের সাথে ব্যবসায়ী সংগঠনের নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতৃত্বে রয়েছেন। তাদের মাঝে নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম সারোয়ার ছিলেন ওসমানদের সবচাইতে ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।
নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি জানান, ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিষ্ট সরকারের সবচাইতে বড় দোসর ওসমান পরিবারের বড় মিয়া খ্যাত সেলিম ওসমান। তিনি তার নির্বাচনী এলাকার ৭টি ইউনিয়নের ৭টিতেই স্কুল প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষানুরাগী খেতাব নেন। তবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠার করার জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদাবাজি করতেন তিনি। তার দোসের হিসেবে ব্যবসায়ী সংগঠনের যারা ওসমানদেও দোসর হিসেবে কাজ করেছেন তারাই এই টাকা ব্যবসায়ীদের থেকে তুলে নিয়ে দিতেন। তারই অংশ হিসেবে নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম সারোয়ারের নামও রয়েছে। তাই তাকে এই পদ থেকে অপসারণের দাবী উঠেছে।
তাছাড়া তারা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ওসমান পরিবারের চামচা খ্যাত হিসেবে পরিচিত খালেদ হায়দার খান কাজলকে খুশি রাখতে তারা ব্যস্ত ছিলেন নিটিং ওনার্সের সভাপতি সেলিম সারোয়ার। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে সেলিম ওসমান যাকে সভাপতি নির্ধারণ করে দিতেন তাকেই ব্যবসায়ী সংগঠনে বসানো হতো। ব্যবসায়ীদের বলে দেয়া হত সেলিম ওসমানের প্রার্থীকে যেন ভোট দিয়ে জয়ী করা হয়। ওসমানরা একচ্ছত্রভাবে ব্যবসায়ী সংগঠনে আধিপত্য চালিয়েছে। নিজেদের পছন্দমত ব্যক্তিদের নেতৃত্বে বসিয়ে চাদাঁবাজির রামরাজত্ব চালিয়েছে। এছাড়া ওসমানদের টাকা পাচারে সহযোগি হিসেবে কাজ করেছে তাদের দোসররাই।
অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেন, আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন হলেও পরাজিত শক্তির দোসররা দেশে এখনও নৈরাজ্য সৃষ্টির পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে।তারা গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। ষড়যন্ত্রকারীরা ছাত্রজনতার ঐতিহাসিক বিজয়কে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না বলেই নানাভাবে এই সরকারকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাদের দোসরদের ব্যাপারে তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।