প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা
বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশন থেকে সচিবালয়ে আগুন, পোড়েনি কোন নথি
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
আগুনে জ্বলছে সচিবালয়ের ভবন (ফাইল ছবি)
বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশন থেকে সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। এই ঘটনায় কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পায়নি তদন্ত কমিটি। এমনকি এ ঘটনায় কোনো নথি পুড়ে যায়নি বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার পর এ তথ্য জানান তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। ৩১ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
এ সময় নাসিমুল গণি বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল ছিল,
ফায়ার সার্ভিসের বিশেষজ্ঞ দল ছিল, সেনাবাহিনীর দল ছিল এবং পুলিশের সিআইডি
থেকেও কাজ করা হয়েছে। সবাই মিলে একত্রে একমত হয়েছি যে একটি “লুজ কানেকশনের”
কারণে ইলেকট্রিসিটি থেকে আগুনের উৎপত্তি হয়েছে। এটা আমাদের প্রাথমিক
অনুসন্ধান। এতে কোনো ব্যক্তির সম্পৃক্ততা খুঁজে পাইনি।’ এ ঘটনায় কোনো নথি পুড়ে যায়নি কিংবা ক্ষতিগ্রস্তও হয়নি। এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ভাঙতে হবে না বলেও জানান তিনি। অগ্নিকাণ্ডে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে বলে জানান সচিব নাসিমুল গণি।
সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী এ ধরনের ঘটনা
এড়াতে প্রতিবছর সংযোগগুলো একবার পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। সাংবাদিকদের এক
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১০ দিনের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন সুপারিশ
তৈরি করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ
ইউনূস নির্দেশ দিয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবনের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে,
তা মেরামতযোগ্য বলেও জানান তিনি।
তদন্ত কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব হাসান বলেন, পুড়ে যাওয়া ফ্লোরগুলোতে কোনো ধরনের বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি। ডগ স্কোয়াড দিয়ে সার্চ করানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস থেকে যে নমুনা পাওয়া গেছে, তাতেও কোনো ধরনের বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, করিডরে আগুন থাকায় আগুন নেভাতে দেরি হয়েছে, কলাপসিবল গেট থাকায় তা কেটে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কারণে আগুন বেশি ছড়িয়েছে। পর্যাপ্ত পানি ছিল না।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে জানিয়ে সংবাদ
সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা দুটো ভাইটাল
ভিডিও পেয়েছি। যেখান থেকে ক্লু পেয়েছি, কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হলো। বিশেষ
করে যে জায়গা থেকে লুজ কানেকশন হয়েছে, আমরা ধরছি, সেই ভিডিও আমরা পেয়েছি।
ভিডিওটা আমরা রিলিজ করতে পারব। একটা কুকুর মারা গেছে। সেই কুকুর কীভাবে
মারা গেল, সেই ভিডিও পেয়েছি। সেটাও রিলিজ করব।’
উল্লেখ্য, গত বুধবার দিবাগত রাতে সচিবালয়ে ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট টানা ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে ভবনটির চারটি তলায় অবস্থিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র, কম্পিউটার ও আসবাব পুড়ে যায় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছিল।