
প্রকৃতির নিয়মে বিদায় নিয়েছে শীত এবং ঋতুরাজ বসন্ত তার নিজস্বপ্রাণ সঞ্চার করছে প্রকৃতিতে। ফের বছরঘুরে এসেছে বসন্ত। সাবদি গ্রাম সহ আশেপাশের গ্রামগুলোতে গেলে দেখা যায় নানা ফুলের সমারোহ।
প্রকৃতির নিয়মে বিদায় নিয়েছে শীত এবং ঋতুরাজ বসন্ত তার নিজস্বপ্রাণ সঞ্চার করছে প্রকৃতিতে। ফের বছরঘুরে এসেছে বসন্ত। কারো হাতে গোলাপ গুচ্ছো আবার কারো হাতে হরেক রকমের ফুল দিয়ে সাজানো মাথার মুকুট। গায়ে রঙিন বাসন্তি শাড়ি ফুলের সোন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফুলে ফুলে ভ্রমর করছে খেলা। দক্ষিণা দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। নারায়ণগঞ্জ শহরের অদূরে অবস্থিত বন্দরের সাবদি গ্রামটি নগরীর পাশে হওয়ায় বর্তমানে এটি পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। সেখানে অল্প খরচে দেখা যায় নানা রকমের ফুলের বাগান। ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম দারে সারি সারি নানান ফুলের বাগান। দেখা যায় বর্তমানে ফুল চাষের জন্য বহুল পরিচিত নারায়ণগঞ্জের এই সাবদি গ্রামটি। এই বসন্তে ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের জন্য সাবদি খুবই সুন্দর একটি জায়গা। শীতকালে এখানে সরিষা চাষ করা হলেও ফেব্রুয়ারির দিকে চাষ করা হয় নানা রকমের ফুল। রঙবেরঙের ফুলে ছেয়ে যায় ক্ষেতগুলো। সাবদি গ্রাম সহ আশেপাশের গ্রাামগুলোতে গেলে দেখা যায় গ্রামের বাড়ির আঙিনা ও রাস্তার পাশ ঘেঁষে টগরফুলের গাছ। কয়েক বর্গমাইল এলাকাব্যাপী কাঠমালতি, গাঁদা, ডালিয়া ও জিপসি ফুল চাষ করতে দেখা যায় সেখানে।
সরেজমিনে বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন রঙের গাঁদা, চেরি, চন্দ্রমল্লিকা, জবা, সূর্যমূখী, গ্যালেরিয়া, ডালিয়া, স্টার, মাম, কাঠমালতি, বেলি, ঝাড়বাড়া ও জিপসিসহ অন্তত চল্লিশ প্রকারের দেশি-বিদেশি হরেক রকমের ফুল চাষ হচ্ছে এখানে। তাজা ফুলের সুবাস নিতে ও মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত দর্শনার্থী ভিড় করছেন এখানে। পুরুষ থেকে শুরু করে এই গ্রামের নারী এবং বাচ্চাদেরকেও দেখা যায় বাগানগুলোতে কাজ করতে। তারা কেউ কেউ নিজেদের বাগানে কাজ করে আবার কেউ রোজ হিসেবেও কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। মহিলারা সাংসারিক সুখ-দুঃখের আলাপচারিতার মাঝে ডালা ভরে ফুল তুলে যার যার বাড়িতে ফিরে আসে। কাঠমালতির ফুল দিয়ে ‘গাজরা’ ও নানান ফুলের মিশ্রন দিয়ে মালা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সাবদির মহিলারা। শুক্রবারে বেশি ভীড় জমে এখানে। এখানে উৎপাদনকৃত ফুল রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব প্রান্তের চাহিদা পূরণ করে থাকে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারিতে একাধারে কয়েকটি দিবস পালিত হয়, ভালোবাসা দিবস, ফাল্গুন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই এ সময় চাষীরা ফুল বিক্রি করে বেশ লাভবান হন।
এ গ্রামে রয়েছেন চার শতাধিক ফুল চাষি। এ সময় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ফুল রাজধানীর শাহবাগসহ চট্টগ্রাম ও মুন্সিগঞ্জের ফুলের আড়তেও যায়। সেখানের একজন ফুল চাষী জাহাঙ্গির হোসেনের সাথে কথা বলেলে তিনি জানান, প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করছি। যাদের নুন আনতে পানতা ফুরাতো, তারা এখন স্বচ্ছল। একজনের দেখাদেখি গ্রামের এখন আশেপাশের অনেক মানুষ ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আমি প্রথমেই ফুলের ব্যবসা শুরু করিনি। ডেমরার জুটমিলের চাকরি চলে যাওয়ার পর ঢাকায় ফেরি করে ফুলের ব্যবসা শুরু করি। কাঠবেলী ফুলের চাষ বেশি হয় এখানে। কারণ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও ভালোবাসা দিবসে এর চাহিদা থাকে। গ্ল্যাডিওলাস ফুল এক বিঘা জমিতে চাষ করা হলে প্রায় আট হাজার স্টিক পাওয়া যায়। এছাড়াও এখানে ডালিয়া, জিপসি, আলমেন্ডা, গাঁদা ও রজনীগন্ধা ফুলের চাষও করা হয়। এখন বলতে গেলে দেখা যায় ফুল চাষ করে গ্রামের চিএই পাল্টে গেছে। এ গ্রামের পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।
সাবদী গ্রামের আরেক ফুল চাষী জাকির হোসেন বলেন,আমি ফুল চাষ করেছি ১০-১৫ আনি জমিতে। এখানে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করে থাকি। তার মধ্যে ডালিয়া, সূর্যমুখী , জিপসি, হলুদ গাঁদা, সাদা গাঁধা, খয়েরি গাঁদা, হলুদ চেরি, সাদা চেরি এবং গ্লাডিওলাস। ফুলগুলো বেশিরভাগ আমি ঢাকার শাহবাগে রপ্তানি করি। আমার ১০-১৫ আনি জমিতে ফুল চাষে খরচ হয়েছে আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকার মতো । যদিও এখনো পুরোপুরি ভাবে রপ্তানি শুরু হয়নি তবুও আগের বছরের তুলনায় কম লাভ হবে। আমি কার্তিক মাসে ফুল চাষ করে থাকি। কার্তিক মাসে ফুল চাষ করলে অগ্রহায়ন মাসে ফুল ভালো পাওয়া যায় কিন্তুু অগ্রহায়ন মাসে ঝড়, বৃষ্টি হয়ে জমি অনেকটা তলিয়ে যায় যার ফলে ফুল চাষ এক মাস পর করা হয়েছে। জানুয়ারিতে ফুল ফুটার কথা থাকলেও তা হয়নি।