আ.লীগের সেই বিতর্কিত চেয়ারম্যানরাও অধরা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে নেতাকর্মীরা পলতাক রয়েছে। এই ছয়মাসে এখানকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে হত্যা সহ ১শ’ মামলা হয়েছে। এমনকি বাধ যায় নাই আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরাও। কিন্তু মামলা হলেও এখানকার কোন জনপ্রতিনিধি গোলাম দস্তগীর গাজী ছাড়া অন্যান্য এমপি কিংবা চেয়ারম্যানরা কেউ গ্রেপ্তার হন নাই। তবে অন্তবর্তি সরকার ছয় মাস পরে এসে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে এই অভিযানেও নারায়ণগঞ্জের চেয়ারম্যানরা ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে।
এদিকে সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের দমনে সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ অপারেশন যৌথভাবে পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপারেশনে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পতিত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন নষ্ট করতে না পারে সেই জন্য এ অপারেশন পরিচালনা করা হচ্ছে। ইংরেজি শব্দ ডেভিল অর্থ শয়তান আর হান্ট অর্থ শিকার। ফলে ডেভিল হান্ট-এর অর্থ দাঁড়ায় শয়তান শিকার করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত ডেভিল হান্ট বলতে দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের বোঝানো হয়েছে।
অপরদিকে বিগত সময়ে ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যানরা জনপ্রতিনিধি হয়ে নিজ এলাকায় একেকজনে ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তুলেন। ভুমিদস্যুতা, মাদকারবারিতে শেল্টার সহ নানা অপকর্ম চালিয়েছে বিগত সময়ের আওয়ামী লীগের নৌকার চেয়ারম্যানরা। কিন্তু তাদের নামে একাধিক হত্যা মামলা হলেও তারা কেউই গ্রেপ্তার হন নাই।
জানা যায়, জেলা পরিষদে নৌকা নিয়ে একক ভাবে চেয়ারম্যান হয়ে ছিলেন বাবু চন্দন শীল। যদিও তা এখন বিলুপ্ত করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৬টিতে নৌকার চেয়ারম্যান হন। তার মাঝে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হন সাইফ উল্লাহ বাদল। বক্তাবলীতে নৌকার চেয়ারম্যান ছিলেন শওকত আলী। তারা দুজনেই ফতুল্লার সন্ত্রাসীদের গডফাদার ছিলেন। এছাড়া ফতুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন ফাইজুল ইসলাম, আলীরটেক ইউনিয়নে নৌকা নিয়ে চেয়ারম্যান হন জাকির হোসেন। তবে এনায়েত নগর ইউনিয়নে আসাদুজ্জামান নৌকার চেয়ারম্যান হলেও তার নামে কোন মামলা হয় নাই। তবে সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজর আলী নৌকার না হলেও তার নামে একাধিক হত্যা মামলা হওয়ায় তিনিও পলাতক রয়েছে।
বন্দর উপজেলায় নৌকার চেয়ারম্যান ছিলেন এম এ রশিদ। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেও রয়েছেন। এছাড়া মদনপুর ইউনিয়নে নৌকার চেয়ারম্যান হন এম এ সালাম। তাছাড়া সোনারগাঁ উপজেলায় নৌকার চেয়ারম্যান হন মাহফুজুর রহমান কালাম। তবে তিনি বেশি দিন চেয়ারম্যানের স্বাদ নিতে পারেন নাই। এছাড়া পিরোজপুর ইউনিয়নে নৌকার চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুম, কাচপুর ইউনিয়নে নৌকার চেয়ারম্যান মোশারফ, সনমান্দিতে নৌকার চেয়ারম্যান হন মো. জিন্নাহ, জামপুরে নৌকার চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির, বারদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হন মো. বাবুল ওরফে চুম্মা বাবুল।
সুত্রমতে, এই সকল চেয়ারম্যান শামীম ওসমানের দরবারের মুরীদ হয়ে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান হন ২০২১ সনের স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে। তাদের মাধ্যমে শামীম ওসমানও মনোনয়ন বাণিজ্য করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। তার বিনিময়ে তারা চেয়ারম্যান হয়ে নিজ এলাকায় ত্রাসের রাহত্ব কায়েম করে।
বিশ্লেষকদের মতে, সাতখুন-পাঁচখুন খুন সহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড-চাঁদাবাজি, রাহাজানি মাদককারবারি সহ শত অপরাধের কুখ্যাতির কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলাকে সারাদেশে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হতো। গডফাদার শামীম ওসমান সগ গোটা ওসমান পরিবার মিলে এই চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে সন্ত্রাসী সাম্রাজ্য গড়ে তুলে। তাই সচেতন মহল থেকে বিগত সময়ের নৌকার চেয়ারম্যান তথা শয়তানদের গ্রেপ্তারের দাবী উঠেছে। ডেভিল হান্ট অভিযানে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান নামক শয়তানদের যেন গ্রেপ্তার করা হয়।