
প্রিন্ট: ০৩ মে ২০২৫, ০৩:৫৩ এএম

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

তাত্ত্বিক গুরু শামীম ওসমানের সাথে রফিকুল ইসলাম জীবন।
আরো পড়ুন
বিগত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে না.গঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমান নানা কায়দায় সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করার অপচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তার এই কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন তারাই পালিত কিছু মুখোশধারী সাংবাদিক। জুলাই বিপ্লবের সময়ে ওই সাংবাদিকদের নিয়ে গাড়িতে চড়ে ঘুরতে গেছে শামীম ওসমানকে। তাদের অনেককেই শামীম ওসমানের মিছিল থেকে ছাত্র-জনতার উপর গুলি ছুঁড়তে দেখা গেছে।
সাংবাদিক নামধারী এই দুর্বৃত্তরা রাইফেল ক্লাবে বসে প্রতিদিনই শামীম ওসমানের সাথে নানা অপতৎপরতার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর শামীম ওসমানের সাথে কয়েকজন দুর্বৃত্ত সাংবাদিক পালিয়ে গেলেও অনেকেই এখনো খোলস পাল্টিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরেই অবস্থান করছেন। নিজেকে জাহির করছেন জুলাই বিপ্লবের অনুসারী কিংবা বিএনপির সাথে সংশ্লিষ্ট। এই দুর্বৃত্ত সাংবাদিকরা গার্মেন্টস এর জুট নামানো, এখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম, ক্যাবল ব্যবসা, ভূমিদস্যুতা, বিভিন্ন রুটে গাড়ি নামিয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে যাতে কেউ কথা বলতে না পারে সেই অপকৌশল তারা অব্যাহত রেখেছেন।
বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে শামীম ওসমানের দোসর ওই সাংবাদিকদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় যুগের চিন্তার কণ্ঠ রোধে বারবার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। আইসিটি এক্টের ৫৭ ধারাসহ পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা দায়ের করেছিল গডফাদার শামীম ওসমানের প্রেআত্মারা।
যুগের চিন্তার একপর্যায়ে ডিক্লারেশন বাতিল করে দেয়া হয়েছিল। তারপরেও যুগের চিন্তার কণ্ঠ রোধ করতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে শামীম ওসমানের দোসররা। জুলাই বিপ্লবের পর পট-পরিবর্তন ঘটলেও শামীম ওসমানের দোসররা গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে আবারো নানা তৎপরতা চালানোর পায়তারা চালাচ্ছে। সুকৌশলে যুগের চিন্তার কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। গতকাল নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তথাকথিত মানহানির অভিযোগ এনে একটি পিটিশন দায়ের করেছেন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন। আদালত দায়েরকৃত পিটিশনের অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য পিবিআইকে নির্দেশনা দিয়েছে।
দায়েরকৃত ওই অভিযোগে বিবাদী করা হয়েছে যুগের চিন্তার সম্পাদক ও জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোরছালীন বাবলা ও যুগের চিন্তার বার্তা সম্পাদক মাহফুজ সিহানকে। অভিযোগে জীবন উল্লেখ করেছেন, গত ২৯/১০/২০২৪ ইং তারিখে নারায়নগঞ্জ প্রেস ক্লাব দখল প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে । উক্ত ঘটনায় প্রেসক্লাবের একজন সিনিয়র সদস্য আহত হন। ঘটনার প্রেক্ষিতে ১নং বিবাদীর পত্রিকার দুই সাংবাদিককে আসামী করিয়া নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ একটি মোকদ্দমা দায়ের করেন। ঐ দিন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য ১নং বিবাদীর পত্রিকার মেইলে প্রেরণ করিলে ১নং বিবাদী তাহার সম্পাদিত ও মালিকানাধীন দৈনিক যুগের চিন্তায় প্রকাশ না করিয়া পরের দিন উল্টো হামলাকারী ও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবকে পাল্টাপাল্টি মামলা হিসেবে উল্লেখ্য করে ১নং বিবাদীর উল্লেখিত পত্রিকায় প্রকাশ করে এবং ১নং বিবাদীর প্রত্রিকায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করায় ১নং বিবাদী প্রেসক্লাবের কয়েকজন স্থায়ী সদস্যকে ফোনে মামলা করার বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করেন, ১নং বিবাদী কর্তৃক পাল্টা পাল্টি মামলার প্রতিবেদন প্রকাশ ও ১নং বিবাদীর হাউজের রিপোর্টরদ্বয়ের স্বশরীরে হামলাকারীদের সাথে অংশগ্রহণ করার কারণে নারায়নগঞ্জ প্রেসক্লাবের সম্মান ক্ষুন্ন হয়। ১নং বিবাদীর এহেন কর্মকান্ডে প্রেসক্লাবের কর্তৃপক্ষ ক্লাবের গঠন তন্ত্রের ৪ অনুচ্ছেদের ক, ঘ, ছ এবং ট অনুসারে কেন ১নং বিবাদীর বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না জানতে চাইয়া ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে লিখিত জবাব প্রেরণের জন্য ক্লাবের নিয়মানুসারে বাদী/ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক স্বাক্ষরিত বিগত ২৭/০২/২০২৫ ইং তারিখে ১নং বিবাদীকে একটি কারন দর্শনের নোটিশ প্রেরন করেন।
১নং বিবাদী তাহার দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকায় ২নং বিবাদী কর্তৃক প্রদত্ত রিপোর্ট বিগত ১ মার্চ ২০২৫ ইং তারিখে প্রচার ও প্রকাশ করে। রিপোর্টটি দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকায় নারায়ণগঞ্জ ১ মার্চ ২০২৫, ১৬ ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বাংলা ২৯, শাবান ১৪৪৬ হিজরী ৪৬ সংখ্যা রেজি নং ঃ ৪০৩২ ,২৪ তম বর্ষ, পৃষ্ঠা ৪ এর কাভার পৃষ্ঠার উপরিভাগে ‘কথিত টোকাই' সাংবাদিকদের পক্ষে নিউজ করায় যুগের চিন্তার সম্পাদককে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের কারন দর্শানোর নোটিশ’ শিরোনামে প্রকাশিত এবং উল্লেখিত রিপোর্টের উপরে বিগত সরকারের নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের তৎকালিন সংসদ সদস্য এ.কে.এম শামীম ওসমানের সহিত ছবি ছাপিয়া উক্ত ছবির নিচে ‘২০২৪ সালের ৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণ কেন্দ্রের চাষাড়ায় অবস্থিত শহীদ জিয়া হলের ছাদের উপর থেকে রাতের আঁধারে বি.এন.পির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলে শামীম ওসমানের অনুগতরা। এর একদিন পর ৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের গডফাদার সাবেক স্বৈরাচার সরকারের অন্যতম দোসর শামীম ওসমান তাঁর বিশ্বস্ত সহচর সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম জীবন ও বিল্লাল হোসেন রবিনকে পাশে বসিয়ে ম্যুরাল ভাঙ্গার যৌক্তিকতা নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।’ নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, রাজনৈতিক নেতৃবর্গ ছাড়াও যদি কোন সাধারন মানুষ সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করলে একজন সাংবাদিক হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করা ব্যক্তির পাশে বসা এবং তাকে প্রশ্ন করার মাধ্যমে প্রকৃত নিউজ বের করা একজন সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্য। সে ছবিটিতে অত্র মামলার বাদীর সংঙ্গে অন্যান্য কর্মকর্তা সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন। ছবিটিতে থাকা সাংবাদিকদের ফটোশপে ইডিটের মাধ্যমে কেঁটে ফেলে শুধু মাত্র বাদী/ মো: রফিকুল ইসলাম জীবন ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির ছবি মুদ্রায়ন করা হয়। যেহেতু, বিগত ২০২৪ সালের ৩রা এপ্রিল শহীদ জিয়া হলের ছাদের উপর থেকে বি.এন.পির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলা নিয়া তৎকালিন এম.পি শামীম ওসমান সাংবাদিকদের মধ্যে উল্লেখিত ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলার ব্যাখ্যা দিতেছিলেন সেক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকসহ ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন এবং অত্র মোকদ্দমার বাদী/সাধারণ সম্পাদকের বসার রীতি রয়েছে যা কোনভাবেই সাংবাদিক সংগঠনের রীতি বহিঃর্ভূত নয়। বিবাদীগন সম্পূর্ন উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করার মানষে বাদীকে সামাজিক ভাবে খাটো করিয়া তাহার মানসম্মান নষ্ট করার জন্য তৎকালিন এম.পি সহ ধারণকৃত ছবির খন্ডাংশ ছাপিয়া এর প্রচার ও প্রকাশ করে এমনকি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছবির নিচে মুদ্রায়ন করা হয় ‘নারায়ণগঞ্জ গড ফাদার সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের অন্যতম দোসর শামীম ওসমান তার বিশ্বস্ত সহচর সাংবাদিক রকিবুল ইসলাম জীবন ও বিল্লাল হোসেন রবিনকে পাশে বসিয়ে ম্যুরাল ভাঙ্গার যৌক্তিকতা নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।’ বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করার মাধ্যমে বিবাদীগণ বাদীকে লোকচোখে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা করিয়াছেন। বিবাদীগন কর্তৃক তাহাদের প্রচারিত, প্রকাশিত ও পরিচালিত উল্লেখিত পত্রিকায় মিথ্যা, ভিত্তিহীন, কু-রুচিপূর্ণ, মানহানীকর সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে দন্ডবিধি আইনের ৪৯৯/৫০০/৫০১ দঃ বিঃ ধারায় অপরাধ করিয়াছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন জীবন।