
সামাজিক অবক্ষয়ে বেড়েছে অপরাধ
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হয়ে মার্চ মাসের অর্ধেক পার হয়ে গেলেও এখনো পাঠ্যবই পায়নি অনেক শিক্ষার্থী। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় সবাই সব বই পেলেও মাধ্যমিকের বিশেষ করে অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখনো সব বই পায়নি। ফলে বেশকিছু বিষয়ে এখনো পড়ালেখা শুরু করতে পারেনি ওই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।
এতে শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়নে জটিলতা সৃষ্টির শঙ্কা করছেন শিক্ষকরা। তাছাড়া বিগত সময়ে করোনা মহামারির কারণে র্শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। তার প্রভাব অন্তবর্তি সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরেও এইচ এসসি, এসএসসি শিক্ষার্থীরা অটো পাশে আন্দোলন করে। যা আওয়ামী লীগ আমলে শুরু করে। তখন দীর্ঘ দিন শিক্ষা থেকে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পরে। তাদের অনেকেই এখন নানা অপরাধে জরিয়ে পড়ছে। যা ছিনতাই, চুরি, মাদককারবাড়িতে জড়িয়ে যাচ্ছে। পারিবারিক সামাজিক অবক্ষয়ে এই অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণীর কিশোররা। তাছাড়া তারা ধর্ষণ অপরাধও বাদ পড়ছে না।
এদিকে জেলা শিক্ষা শাখার তথ্য অনুযায়ী স্কুল কলেজ সহ ২শ’৮২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭ লক্ষ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বন্ধ ছিল করোনা কালিন সময়ে। শিক্ষাবিদদের মতে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী পড়া থেকে দুরে সওে গেছে। তার প্রভাভে বিশেষ করে কিশোর বয়সী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অপরাধে জরিয়ে পরছে। তার মাঝে কিশোর গ্যাংয়েরর বাহিনী তৈরী করে কিশোর বয়সী শিক্ষার্থীরা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ, মাদক অপরাধে জরিয়ে পড়ছে। এমনকি অনেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুনের ঘটনায় জরাচ্ছে।
সচেতনমহল মনে করছেন আর্থিক অভারে কারনে অনেক শিক্ষার্থী অপরাধে জরাচ্ছে। এতে এক দিক দিয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে জরে পরছে আরেক দিক দিয়ে অপরাধে জরিয়ে পরছে। তাই শিক্ষাবিদরা মনে করছেন এই সকল অপরাধের মূলে শিক্ষার সঙ্কট ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারন। আর এ জন্য ছাত্র ছাত্রীদের পড়া লেখায় মনোযোগি করতে কষ্ট লাগব হবে বলে মনে করেন শিক্ষক সমাজ। আওয়ামী লীগ আমলে তৈরী হওয়ায় সামাজিব অবক্ষয় এখনো প্রতিকার মিলে নাই। বরং আরও মহামারী আকারের দিকে যাচ্ছে। তাছাড়া সম্প্রতি ক্ষমর্তাচ্যুত দলের একটি অংশ দেশের মাঝে প্রতি নিয়ত বিশৃঙ্খলা তৈরীর জন্য নানা ভাবে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যার জন্য প্রতি নিয়ত ছিনতাই, চাদাঁবাজি, ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।
শিক্ষায় নানা ধরণের বৈষম্য, বিশৃঙ্খলা, যথেচ্ছ অনৈতিক মুনাফাবাজির কারণে পুরো শিক্ষাকাঠামো কার্যত ভেঙ্গে পড়েছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রত্যেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক একটি অনৈতিক প্রতিযোগিতা ও মুনাফাবাজি ও জিম্মিদশায় উপনীত হয়েছে। আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ণের মূল উৎসই হচ্ছে অনৈতিক শিক্ষা কারিকুলাম, বিশৃঙ্খল ও বৈষম্যপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা এবং নীতিহীন-দলবাজ শিক্ষক সমাজ।
অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইদানিং নগরী সহ আশ পাশের এলাকা গুলোতে চুরি, ছিন্তাই, ডাকাতি বেরে গেছে। এমনকি ছোট ছোট কারনে খুনের ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে ধর্ষণের ঘটনা বেরেই চলছে। পুলিশ প্রশাসনের তথ্যমতে গত মাসে নারায়ণগঞ্জে ৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও তার মাঝে সবকটি ঘটনা জরিত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার।
প্রশাসনের তথ্যমতে, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। রাজধানী লাগোয়া এই গুরুত্বপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ জেলাটিতে গত ৭ মাসে ঘটেছে ৭৩টি খুনের ঘটনা। সেই সঙ্গে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণের মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটছে।
পুলিশ সূত্রে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে জানা যায়, গত আগস্ট মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সর্বমোট ৭৩টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ৫২টি চুরি, ১৩টি ডাকাতি, ৩১টি ছিনতাই এবং ২৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত মাসেই ইতোমধ্যে ১৩টি খুন, ১২টি চুরি, একটি ডাকাতি, ৩টি ছিনতাই বাদেও একাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরবতায়, শিক্ষায় ব্যবস্থা থমকে যাওয়া সহ শহরের প্রতিটি এলাকায় লাগামহীন চুরি, ছিন্তাই, সন্ত্রাস, খুন ধর্ষনের ঘটনায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নগরবাসি। দলমত নির্বিশেষে নগরীর প্রায় সব মানুষই এই ভয়াবহ অবক্ষয় ও এর পাশবিকতার বিস্তার নিয়ে শঙ্কিত-সংক্ষুব্ধ। সচেতন মহল মনে করেন বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারনে এই সকল অপরাধ বেরেছে।
ভয়ঙ্কর সব হত্যাকান্ডের ঘটনা জনসমাজে উন্মোচিত হয়ে পড়ার পরও যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরা এসব দুর্র্ধষ অপরাধিরা কারাগারে-আদালতে বিশেষ মর্যাদা নিয়ে আয়েশে দিন কাটাতে পারে আর নানাভাবে বিচারকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা করে তাহলে তাদের শেঁকড় কতটা মজবুত আর কতটা বিস্তৃত তা সহজেই অনুমেয়।
শত কিশোর গ্যাং ও গ্যাং কালচার গড়ে ওঠার পেছনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কারণ নিয়ে এখন নানামুখী বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। সেখানে বারংবার উঠে আসছে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কথা। সেই সাথে পারিবারিক সঠিক শিক্ষার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
আজকের সামাজিক অস্থিরতা, অবক্ষয়, দুর্নীতি, নারী ও শিশু ধর্ষন, কিশোর গ্যাং কালচার, মাদকাসক্তি, পর্ণগ্রাফির মত সামাজিক-মানবিক সমস্যাগুলোর জন্য সমাজ ব্যবস্থার অবক্ষয় ও ব্যর্থতার কথা বলা হলেও এর উত্তরণের জন্য যদি কোনো সুনির্দিষ্ট সেক্টরের কথা বলা যায়, তা হচ্ছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষানীতি ও শিক্ষাদর্শন।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান বিশৃঙ্খলা, বৈষম্য, দলীয়করণ, মুনাফাবাজি, জাতীয়-সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে লক্ষ্যহীন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অনৈতিক শিক্ষা কারিকুলাম আমাদের আজকের সর্বব্যাপী অবক্ষয়ের মহামারীর জন্য দায়ী। তবে এর থেকে বের হওয়ার জন্য নানা উপায় খুজা হলেও তার জন্য সঠিক নির্দেশনা পাচ্ছে না অভিভাবক মহল। সচেতন মহলের মতে সামাজিক, পারিবারিক ভাবে সকল অপরাধে মানুষকে সবার আগে সতর্ক হতে হবে । সেই সাথে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পাশা পাশি সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের সজাগ থাকতে হবে।