‘ককটেল রবিনে’র ছায়াতলে গৃহবধূ ফিজা হত্যা মামলার আসামি চুন্নুর সন্ত্রাসীরা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

উপরের ছবিতে ফতুল্লায় গৃহবধূ লামিয়া আক্তার ফিজা হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করছেন স্বজনরা। নিচের ছবিতে বাম দিক থেকে গডফাদার শামীম ওসমানের সাথে ছাত্রলীগ ক্যাডার বিল্লাল হোসেন রবিন ওরফে ককটেল রবিন, পরের ছবিতে শামীম ওসমানের সাথে কুখ্যাত সন্ত্রাসী মোফাজ্জল হোসেন চুন্নু, এরপরের ছবিতে শামীম ওসমানের ক্যাডার শাহনিজামের সাথে সন্ত্রাসী চুন্নুর ভাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৬টি হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি গডফাদার শামীম ওসমানের ক্যাডার ছাত্রলীগ নেতা বিল্লাল হোসেন রবিন ওরফে ‘ককটেল রবিন’ গ্রেফতার না হওয়ায় একের পর এক অপকর্ম করেই চলেছে। গ্রেফতার না হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শামীম ওসমানের আরেক সন্ত্রাসী শাহ নিজামের ক্যাডার বৈষম্যবিরোধী ছাত্রহামলার পলাতক আসামি ফতুল্লার লামাপাড়া দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মোফাজ্জল হক চুন্নুকে সাথে নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে গৃহবধূ লামিয়া আক্তার ফিজা (২১) হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা চলছে। সন্ত্রাসী শাহ নিজামের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী চুন্নু, তার ভাই তোফাজ্জল, মোজাফফরসহ গোটা পরিবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতো। মোফাজ্জল হোসেন চুন্নু নামটি শুনলেই এখনো ভয়ে আতকে উঠে ফতুল্লার লামাপাড়া-নয়ামাটি এলাকার বাসিন্দারা। চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা সহ এমন কোন অপকর্ম নেই যা এই চুন্নু করেনি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে। শামীম ওসমানের প্রধান ক্যাডার শাহ নিজামের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয়ভাবে দাবড়ে বেড়াতো এই সন্ত্রাসী। এখন ছাত্র-হত্যামামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা ককটেল রবিনের প্রত্যক্ষ মদদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলার আরেক আসামি চুন্নুকে সাথে নিয়ে গৃহবধূ লামিয়া আক্তার ফিজা হত্যা মামলায় আসামিদের বাঁচাতে উঠে পড়ে লেগেছে। কয়েকদিন আগে হত্যা মামলায় জামিন পাওয়া মাদকসম্রাজ্ঞী নুরুননাহার, তার স্বামী তোফাজ্জলকে সাথে নিয়ে ককটেল রবিন আবারো লামপাড়া এলাকায় শাহনিজামের হারানো জৌলুস ফেরানোর মিশনে নেমেছেন। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে লামাপাড়া এলাকায়। ইতিমধ্যে একেরপর এক অপকর্ম করে পার পেয়ে যাওয়ায় বিল্লাল হোসেন রবিন ওরফে ককটেল রবিনকে গ্রেফতাদের জন্য নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরবার স্মারকলিপি দিয়েছে সচেনতন সাংবাদিক সমাজ। এছাড়াও জেলা ও দেশের সকল গোয়েন্দাসংস্থার কাছেও ককটেল রবিনের কুকর্ম তুলে ধরে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান সচেতন সাংবাদিক সমাজ। এখন গৃহবধূ লামিয়া আক্তার ফিজা হত্যা মামলাকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করায় ককটেল রবিনকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে নিহত গৃহবধূ ফিজার পরিবারও।
গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ফতুল্লায় গৃহবধূ লামিয়া আক্তার ফিজা (২১) হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন নিহতের স্বজনরা। তারা মানববন্ধন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। এই হত্যা মামলার আসামিরা হলো, আসাদুজ্জামান ওরফে মুন্না (৩১), পিতা মনির হোসেন মনু ২. আকলিমা বেগম (৫২), স্বামী মনির হোসেন মনু, ৩. তোফাজ্জাল হোসেন (৪৮), পিতা-পুইক্কা, ৪. চুন্নু (৫০), পিতা-পুইক্কা, ৫. মুন্নী,স্বামী মুরাদ ৬.মনির হোসেন ওরফে মনু (৫৮) ৭. আব্দুর রশিদ ওরফে মিঠুন (৫০, পিতা আম্বর আলী, ৮.নূর নাহার (৪৪), স্বামী তোফাজ্জল হোসেন, ৯. রাজ্জাক (৪৫), পিতা আমিরউদ্দিন, ১০. রানা (৪০), পিতা তালেব হোসেন, ১১. রিপন (৪৪), পিতা মৃত আম্বর আলী, ১২. গোলাম রহমান জিসান (২৪), পিতা উজ্জল। ককটেল রবিনের প্রত্যক্ষ মদদে এই আসামিদের অনেকে জামিনে বেরিয়ে এসে নিহত গৃহবধূর ফিজার পরিবারকে মামলা উঠিয়ে নিতে নানা হুমকি ধমকি দিচ্ছে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ভুক্তভোগীর পরিবার। তারা বলছেন, ছাত্রলীগ ক্যাডার ককটেল রবিন শামীম ওসমানের মনোনিত হিসেবে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি হয়েছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের ৭ মাস পরেও তাকে প্রেসক্লাব থেকে অপসারণ করেনি নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজ। এখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে গডফাদার শামীম ওসমানের এই ক্যাডার ছাত্রলীগ নেতা ককটেল রবিন পদ পেয়েই ওসমান দোসর সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসন করছে। এতে ব্যাপকভাবে সামনের দিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ককটেল রবিন প্রথমেই সন্ত্রাসী শাহনিজামের ডানহাত কুখ্যাত সন্ত্রাসী চুন্নুর পরিবারকে পুনর্বাসন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এতে লামিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার বাধাগ্রস্ত হবে। সূত্র জানিয়েছে, সন্ত্রাসী চুন্নুর পরিবারকে পুনর্বাসন করতে ককটেল রবিন দফায় দফায় বৈঠক করেছে এবং নানা কূটকৌশল বাস্তবায়নে তার আস্তানায় গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল বেশ কিছুদিন ধরে।
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে লামিয়ার বড় ভাই আরাফাত আল ফাহিম বলেন, ‘গত ২ জানুয়ারি লামিয়াকে তার স্বামী আসাদুজ্জামান মুন্না ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্মমভাবে হত্যা করে। এটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য তারা লাশ ঘরের জানালার গ্রিলের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। কিন্তু ময়নাতদন্ত রিপোর্টে শ্বাসরোধে হত্যার সত্যতা পাওয়ায় থানায় মামলা করা হয়। এ ঘটনার পর আসামিরা সবাই পালিয়ে যায়। পুলিশ তাদের কাউকে ধরতে পারছে না। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।’
লামিয়ার মা ফাহিমা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মুন্না, তার মা-বাবা ও বোনসহ স্বজনরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ পুলিশ প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে আছে। এটা কেমন আইন। মেয়ে হত্যার বিচার পেলাম না। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।’
লামিয়ার বাবা ও মামলার বাদী মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমার মেয়ে হত্যার পর ফতুল্লা থানায় আরও তিনটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যে মূল আসামিদের গ্রেফতার করেছে পুুলিশ। অথচ আমার মেয়ে হত্যার আসামিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে প্রত্যেক দফতরে দফতরে গিয়ে কান্না করতে হচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এই আসামিদের ছায়া দিয়ে রেয়েছে পুলিশ।’ মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন লামিয়ার খালা সুরাইয়া আক্তার মুন্নি, মামা জাহাঙ্গীর আলম, এলাকাবাসী আলাল মাদবরসহ আরও অনেকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান বলেন, ‘পারিবারিক কলহের জেরে লামিয়াকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল আসামি অর্থাৎ নিহতের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ পলাতক। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আসামিরা অনেক ধুরন্ধর প্রকৃতির। তারা এ ঘটনার পর থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে না। কোনও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও অবস্থান করছে না। যার কারণে তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে কষ্ট হচ্ছে।’
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ‘গত ২ জানুয়ারি রাতে ফতুল্লার লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকায় শ্বশুরবাড়ির জানালার গ্রিল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় লামিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় তার স্বামী আসাদুজ্জামান মুন্নাসহ শ্বশুরবাড়ির সবাই আত্মগোপনে ছিলেন।
নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেন, ‘স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক জেনে প্রতিবাদ করায় লামিয়াকে হত্যা করা হয়। ৬ জানুয়ারি ময়নাতদন্ত রিপোর্টে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি উঠে আসে। ৭ জানুয়ারি লামিয়ার বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।’
প্রসঙ্গত, যুগের পর যুগ এক সন্ত্রাসী পরিবারের হাতে জিম্মি ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকার জনপদ। ডাকাতি, হত্যা, অস্ত্রব্যবসা, খুন, মাদকব্যবসা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ব্ল্যাকমেইলিংসহ সবরকমের রোমহর্ষক অপরাধ ফতুল্লার লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকার এই পরিবারের নিত্যদিনের খেলা। পুলিশ-ডিবি-র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়াকে এই সন্ত্রাসী পরিবার নিছক ছেলে খেলায় পরিণত করেছে।ব্যবসায়িক করিডোর হিসেবে পরিচিত ফতুল্লা থানা এলাকার কুতুবপুর ইউনিয়নের লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকার মৃত আবু তালেব হোসেন ওরফে পুইক্কার চার ছেলেই সন্ত্রাসী। পুইক্কার চার ছেলে মোফাজ্জল হোসেন চুন্নু, তোফাজ্জল, রানা, উজ্জল। এরমধ্যে সন্ত্রাসী উজ্জল বেবি ট্যাক্সি (সিএনজির পূর্বে ছিল) চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে মারা যায়। জীবিত তিন সন্ত্রাসী ভাই কখনো যুবলীগ আবার কখনো আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের আমলে গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমানের ডানহাত মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সন্ত্রাসী শাহনিজামের শেল্টারে ছিলো এই সন্ত্রাসী পরিবারটি। এখন ক্ষমতার পালাবদলে ভোল পাল্টে বিএনপির শেল্টারে গিয়ে আগের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে লামাপাড়ার ত্রাস এই সন্ত্রাসী পরিবারটি।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুর্ধর্ষ এক সন্ত্রাসী এই পুইক্কার চার ছেলে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড হওয়ার পর পুইক্কার চার ছেলের মূলকাজই ছিল মহাসড়কে ডাকাতি করা। শিবু মার্কেট থেকে জালকুড়ি পর্যন্ত পুইক্কার দুই ছেলে চুন্নু ও তোফাজ্জল ডাকাত বাহিনী নিয়ে ডাকাতির নেতৃত্ব দিতো। খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, জমি দখল, জুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, মাদকব্যবসা, ছিনতাই, অস্ত্রব্যবসা, সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যামামলাসহ ৩০টির বেশি মামলা রয়েছে পুইক্কার ছেলে মোফাজ্জল হোসেন চুন্নুর বিরুদ্ধে। কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বা ভোল পাল্টে একের পর এক কুখ্যাতসব অপরাধ কর্মকাণ্ড যুগের পর যুগ চালিয়ে যাচ্ছে চুন্নু ও তাঁর ভাইয়েরা। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেই যে পুইক্কা পরিবারের এক সময় যার নুন আনতে পান্তা ফুরাতো, এখন বিশাল বিত্ত বৈভবের মালিক, সাথে অস্ত্রভাণ্ডারে সজ্জিত এক বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী।
সূত্র জানিয়েছে, চুন্নুর হাতে রয়েছে বিশাল অস্ত্রের ভাণ্ডার। লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকার এক সময়ের ত্রাস ও মূর্তিমান আতঙ্ক রেকমত ও ফজল হকের ক্রসফায়ারের পর তাদের অবৈধ অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় র্দুর্ধষ সন্ত্রাসী, মাদক বিক্রেতা, ডাকাত সর্দার ও ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতা পুইক্কার ছেলে মোফাজ্জল হোসেন চুন্নুর হাতে। ক্রসফায়ারে রেকমত বাহিনীর প্রধান রেকমত নিহতের পর তাঁর অস্ত্রের ভাণ্ডার হাতে পেয়ে গোটা লামাপাড়া এলাকায় র্দুর্ধষ সন্ত্রাসীতে পরিণত হয় চুন্নু। শুধু দুই ভাই তোফাজ্জল ও রানার নেতৃত্বে সব ধরণের অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিশাল বাহিনী গড়ে তোলে। গডফাদার শামীম ওসমানের ক্যাডার সন্ত্রাসী শাহ নিজামের শেল্টারে আরো র্দুর্ধষ হয়ে ওঠে এই চুন্নু। গোটা লামাপাড়ায় ক্রসফায়ারে নিহত রেকমতের মতোই আতঙ্ক তৈরি করে চুন্নু ও তার দুই ভাইয়ের বাহিনী। বারবার র্যাব পুলিশের হাতে অস্ত্র, মাদকসহ গ্রেফতারও হয়েছিলো চুন্নুসহ তার সন্ত্রাসী ভাইয়েরা। তবে প্রতিবার গ্রেফতারের পর সে আরও বেশি দুর্র্ধষ হয়ে ফিরে আসে এলাকাতে। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাঁকে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মিছিল নিয়ে যোগ দিতে দেখা গেছে। লামাপাড়া এলাকায় সাংসদ শামীম ওসমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুনও টাঙিয়েছিলো সে নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করে। সেসব ফেস্টুনে সাঁটানো ছিলো তাঁর নিজেরও ছবি।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পুরোটা সময় স্থানীয় মিল ফ্যাক্টরীর ঝুট সেক্টর থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসার একচ্ছত্র অধিপতি ছিল এই দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী চুন্নু। এছাড়াও এলাকার শীর্ষ ভূমিদস্যু হিসেবেও তাঁর কুখ্যাতি ছিল। এছাড়াও বিদেশী মদ থেকে শুরু করে ইয়াবার পাইকারি ব্যবসায়ীও সে। তাঁর রয়েছে মাদকের বিশাল নেটওয়ার্ক। নিজ বাড়ি পুরোটাই সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এছাড়াও তাঁর বাড়ির পথের দিকে বেশ কিছু স্থানে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি খুব সহজেই সে অনুমান করতে পারে। আর এভাবেই গোটা পরিবার নিয়ন্ত্রণ করে অপরাধ জগতের এই সাম্রাজ্য।
৩০টির বেশি মামলা থাকলেও একের পর এক অপরাধ করে বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে নির্ভার ছিল চুন্নু ও তার গোটা সন্ত্রাসী বাহিনী। সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের গত ২০ এপ্রিল রাতে চুন্নুকে কুতুবপুর নয়ামাটি এলাকার তার নিজ বাসার সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় চুন্নুকে ছাড়িয়ে নিতে তার বাহিনীর সদস্যরা পুলিশ উপর হামলা চালালে ৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। তাদেরকে খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। এর আগে বিদেশী পিস্তল, ম্যাগাজিন, ৬ রাউন্ড গুলি ও বিদেশী মদ বিয়ারসহ ২০১৫ সালের ৩ মার্চ ফতুল্লার লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকা থেকে মোফাজ্জল হোসেন চুন্নুকে গ্রেফতার করে র্যাব-১১।
ওই সময় পুরাতন কোর্ট এলাকার র্যাব-১১ এর সিপিসি-১ এর এএসপি মাসুদ আনোয়ার জানিয়েছিলেন, চুন্নু একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনী দ্বারা সে ভূমি দখল ও মাদক বিক্রি করাতো। চুন্নু গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর অস্ত্র ভাণ্ডারের সন্ধানে নামে র্যাব-১১। এর আগেই র্যাব জানতে পেরেছিলো চুন্নু তাঁর স্ত্রীর মাধ্যমে তাঁর অস্ত্র নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছে।
এরপরই একই বছরের ১৪ মার্চ র্যাব-১১ চুন্নুর শ্যালিকা সুমাইয়া আক্তার মুন্নির চোধুরী বাড়ি এলাকার বাড়িতে অভিযান চালায় এবং সেখান থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন, ৮ রাউন্ড গুলি ও চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করে।
২০১৭ সালের ৩ আগস্ট চুন্নু ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন লামাপাড়া এলাকার মো. হাবিব মিয়া। এখানে হাবিব মিয়া দাবি করেছিলেন চুন্নু ও তাঁর বাহিনী অস্ত্র নিয়ে তাঁর উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং তাঁর কাছ থেকে নগদ টাকাসহ মোবাইল ফোন লুটে নেয়।
একই বছরের ১০ নভেম্বর ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আতাউর রহমান চুন্নুকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়। এসময় চুন্নুর বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে তাঁকে আটক করলেও তাঁর সহযোগিরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে তাঁকে ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় চুন্নু পালিয়ে গেলেও তাঁর সহযোগি আরফান মাদবরকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনার ঠিক সাড়ে তিন বছর আগে চুন্নুর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড রাফেদ আলীকে একই থানার এসআই জিন্নাহর উপর হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নিয়েছিলো চুন্নু বাহিনী। পরে ২৫ অক্টোবর এই রাফেদ আলীকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের ২ নম্বর ঢাকেশ্বরী এলাকার আবু বক্করের নির্মাণাধীন বাড়ির দোতলা থেকে মাদক সেবনরত অবস্থায় চুন্নুকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ।
এর আগে ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় ফতুল্লার লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী মোফাজ্জাল হোসেন চুন্নুকে (৪৪) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল, চুন্নু ও তার দুই ভাই তোফাজ্জল ও রানা বাহিনীর অত্যাচারে এলাকায় কোন সাধারণ লোক অথবা ব্যবসায়ীরা নয়ামাটি এলাকায় শান্তিতে বসবাস করতে পারেন না। নয়ামাটি এলাকায় কেউ বাড়ি করলে সেই বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়। কেউ ব্যবসা করলে প্রতিমাসে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে কাউকে শান্তিতে বসবাস করতে দেয় না তারা। চুন্নুর কারণে নয়ামাটি, লামাপাড়া এলাকায় কেউ নতুন বাড়ি করতে সাহস পায়না। তাকে ও তাঁর বাহিনীকে মোটা অংকের টাকা চাঁদা না দিলে কেউ বাড়ি বা ফ্যাক্টরীতে একটি ইটও লাগাতে পারেনা। নতুন জমি বেচাকেনাতেও চুন্নু বাহিনীকে মোটা অংকের টাকা দিতে হত। আশেপাশের এলাকায় জমির দাম বাড়লেও চুন্নু বাহিনীর চাঁদাবাজীর কারণে এই এলাকায় এখনও জমির দাম অনেক কম। এরকারণ চুন্নু ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী। আওয়ামী লীগের পতনের পর এখন ভোল পাল্টে আবারো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে মৃত পুইক্কার সন্ত্রাসী পরিবারটি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চুন্নু সাম্রাজ্যে পতনের পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেন নয়ামাটি-লামাপাড়া এলাকাবাসী।