শামীম ওসমানের অপকর্মের আস্তানা ছিল রাইফেল ক্লাব

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

শামীম ওসমানের অপকর্মের আস্তানা ছিল রাইফেল ক্লাব
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সবচেয়ে জঘন্যতম নিকৃষ্ট অত্যাচারের উদাহরণ ছিল আয়না ঘর। যেখানে আওয়ামী লীগের বিরোধী লোকদের ধরে এনে আয়না ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়েছেন। এমনকি অনেককে হত্যা করতেও কর্ণপাত করেন নাই। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আয়না ঘর পরিদর্শন শেষে জানিয়ে ছিলেন, সবক্ষেত্রে আইয়্যামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠা করে গেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
যারা এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার করা হবে। এই বছরের (১২ ফেব্রুয়ারি) আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা জানান। নারায়ণগঞ্জেও গডফাদার শামীম ওসমানও তার বিরোধীদের দমন করার জন্য আয়নাঘর বানিয়ে ছিলেন। ২০২৪ সনের বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পতন হলে শামীম ওসমানের এই আয়না ঘরের তথ্য বেরিয়ে আসে। নারায়ণগঞ্জের সরকারি সম্পদ রাইফেল ক্লাবের গোপন কক্ষে ছিল শামীম ওসমানের তথা ওসমান সাম্রাজ্যের আয়না ঘর। তাছাড়া তার আয়না ঘর নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিবিদরাও মুখ খুলেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে ঠেকাতে দফায় দফায় মিটিং করে ব্যর্থ হয়েছে সাবেক এমপি শামীম ওসমান। সর্বশেষ গত বছরের ৩১ জুলাইয়ে শামীম ওসমান তার অনুসারীদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে মিটিং করেন। তার আগে সারাদেশে গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমানের নেতৃত্বে ১৯ জুলাই শহর জুড়ে অস্ত্র নিয়ে গুলি চালান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে। ২০২৪ সনের ৫ আগষ্ট যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে যায় তখন নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমান সহ তার অনুসারীরাও পালিয়ে যায়।
তথ্যমতে,নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের মতের বিরোধী থেকে শুরু করে তাকে কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে রাতের আধারে ধরে এনে রাইফেল ক্লাবের নিচ তলার কক্ষে আটকে নির্যাতন চালাতেন তার সাম্রাজ্যের গুন্ডাবাহিনী। এই ভবনের নিচ তলার অর্ধেক অংশ দখল করে গোপন কক্ষে আয়না ঘর বানিয়ে ছিলেন। যেখানে লোকজন ধরে এনে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। এমনকি ত্বকী হত্যা সহ নানা হত্যার পরিকল্পনা এখানে বসে নকশা তৈরী করা হয়। বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ধরে এনে আটকিয়ে রেখে চাঁদা আদায় করা হত। রাইফেল ক্লাবকে শামীম ওসমানের টর্চার সেল রুম ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল কøাবকে নিজের রাজনৈতিক দলীয় কার্যালয় বানিয়ে ব্যবহার করেছে সাবেক এমপি শামীম ওসমান। এমনকি এই ভবনের নিচ তলায় গোপন কক্ষে তার আয়না ঘরের মত বানিয়ে মতের বিপক্ষে যাওয়া বিরোধী দলের থেকে শুরু করে নিজ দলের নেতা কর্মীদের শায়েস্তা করতেন এখানে বসে। তার সকল দলীয় মিটিং মিছিলসহ গোপন বৈঠক এখানে বসে পরিচালনা করা হত। নেতাকর্মীরা এটা শামীম ওসমানের কার্যালয় মনে করতেন। যদিও রাইফেল ক্লাব সরকারি সম্পত্তি।
গত ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিরোধ করার জন্য সাবেক এমপি শামীম ওসমান সহ তারা পুত্র ওয়ন ওসমান রাইফেল ক্লাব থেকে বের হয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে মানুষের উপর গুলি ছোড়েন।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ৪ আগষ্ট বিক্ষোভের দিন নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে আগুন দিয়ে সব কিছু জালিয়ে দেয়া হয়। প্রতিটি রুমের দরজা খুলে নিয়ে রুম গুলো এখন ভূতুড়ে অবস্থা হয়ে রয়েছে। যেখানে গত ৩১ জুলাই ছাত্র জনতার আপন্দোলন ঠেকাতে মিটিং হয়েছে আজ সেটা নিরব খালি পরে রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর এই সম্পত্তিকে শামীম ওসমানের টর্চার সেল হিসেবেও ব্যবহার করা হত। যার জন্য রাইফেল ক্লাব নিয়ে মানুষের মাঝে ক্ষোভ তৈরী হয়ে রয়েছে।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড.সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, শুধু রাইফেল ক্লাব নয় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ৫ম তলায় তার টর্চার সেল ছিল। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাদেরকে ধরে এনে তার নিজের তৈরী করা আয়না ঘরে ওই সকল লোকদের নির্যাতন চালানো হত।
নারায়ণগঞ্জ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির আহ্বায়ক নিরব রায়হান জানান, নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবকে ওসমান পরিবার নিজেদের আয়না ঘরের মত বানিয়ে ছিলেন। এখানে বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন এনে নির্যাতন করে চাদাঁর টাকা, মুক্তিপনের টাকা আদায় করা হত। এমনকি কোন নেতা কোন এলাকার চেয়ারম্যান হবে তা এখানে বসে করা নির্ধারণ করা হত।