Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

সার্ভার জটিলতায় রোগীদের আবেদনে ভোগান্তি

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

সার্ভার জটিলতায় রোগীদের আবেদনে ভোগান্তি

সার্ভার জটিলতায় রোগীদের আবেদনে ভোগান্তি

Swapno

অসংক্রামক রোগীদের জন্য সরকার অনুদান দিলেও নারায়ণগঞ্জে সার্ভার জটিলতায় এর আবেদন করতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সমাজসেবা অফিসে অনেক সময় আবেদন না করেই ফিরতে হচ্ছে তাদের। জেলা সমাজসেবা অফিস স্বীকার করেছে, অনলাইনে আবেদন নেওয়া শুরুর পর থেকে তাদের আবেদনের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেছে। সমস্যা সমাধানে সমাজসেবার সার্ভার সিস্টেম উন্নত করার দাবি জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি।



নগরীর গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা শামীমুজ্জামান সেন্টু। তাঁর ১৮ বছর বয়সী মেয়ে নীর্জনা কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত। সেন্টু দিনমজুরি করেন। তাঁর পক্ষে মেয়ের ক্যান্সারের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। তাই সমাজসেবা অফিসে অনুদানের জন্য আবেদন করেছিলেন। গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় কৃষি ব্যাংকে অনুদানের টাকা তুলতে এসে আবেদনের সময় ভোগান্তির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন তিনি– ‘পরপর তিন দিন নগরীর কালির বাজারে সিটি ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে আবেদনের চেষ্টা করি। 


কিন্তু এক দেড় ঘণ্টা করে প্রতিদিন বসে থেকেও সার্ভার পাইনি। চতুর্থ দিন ভাবলাম, যতক্ষণ বসে থাকতে হয় বসে থেকে আবেদন করব। প্রায় তিন ঘণ্টা বসে থাকার পরে সার্ভার আসল। আরও প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আবেদন করতে পারলাম।’



সেন্টু শেষ পর্যন্ত আবেদন করতে পারলেও এত ভোগান্তিতে বাবার জন্য আবেদন না করেই ক্ষান্ত হয়েছেন নগরীর দুই নম্বর বাবুরাইল এলাকার বাসিন্দা দৃষ্টি আক্তার। তাঁর বাবা স্ট্রোক ও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। দৃষ্টি একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি করেন। চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে তিনিও তিন দিন আবেদনের চেষ্টা করে হাল ছেড়েছেন।  


নগরীর কালির বাজারের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিটি ডিজিটাল সেন্টারের কম্পিউটার অপারেটর হাদিউজ্জামান গালিব সরকারি এসব আবেদনের কাজগুলো করে থাকেন। তিনি জানান, সমাজসেবার এই আবেদনটি যে সাইটে করা হয় শুরু থেকেই সেটির সার্ভার সমস্যা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সার্ভার ওপেন হয় না। ওপেন হলেও তথ্য ইনপুট হয় না। আবার কখনও তথ্য ইনপুট হলেও দেখা যায় ফরম চূড়ান্তভাবে সাবমিট করা যাচ্ছে না। ডকুমেন্ট এটাচড হয় না। দেখা যায় একটা ফরম পূরণ করতে গিয়ে দেড় দুই ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। মানুষ অনেক সময় তাদের ওপর রেগে যায়। হতাশ হয়ে আবেদন না করেই চলে যায়।  



নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) জহিরুল ইসলাম জানান, ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, লিভার সিরোসিসসহ অসংক্রামক রোগগুলো বেড়েই চলেছে। যদিও তাদের এখানে কোনো পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু নিঃসন্দেহে বাড়ছে। কোনো দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এ ধরনের রোগীর চিকিৎসা করা দুরূহ। তাই সরকারি অনুদান এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ক্ষেত্রে সার্ভার জটিলতা দ্রুত নিরসন করা প্রয়োজন।



নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির জেলা শাখার সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলেন, ‘পুরো বিশ্বটা ইন্টারনেটের ওপরে চলছে। কিন্তু আমরা পুরোপুরি এর সুফল ভোগ করতে পারছি না। সার্ভার জটিলতায় জটিল রোগের অনুদান, প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু নিবন্ধনসহ নানা বিষয়ে মানুষকে চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। সরকারের উচিত সার্ভার জটিলতাটি কোথায় তা দ্রুত চিহ্নিত করে সেবা উন্নত করার ব্যবস্থা করা, মানুষের হয়রানি নিরসন করা।  



এ ব্যাপারে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সর্দার সার্ভার জটিলতার কারণে মানুষের ভোগান্তির কথা স্বীকার করেন। তাঁর দেওয়া তথ্যানুযায়ী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে নারায়ণগঞ্জে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক প্যারালাইসিস, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়া– এই ছয়টি জটিল রোগে আক্রান্ত ৪২৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। প্রতি তিন মাসে তিনি এখানে অনুদানের জন্য ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পান। গত বছর অক্টোবর থেকে চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসে অনুদান নেওয়ার জন্য আবেদন পড়েছে ৫৩৯টি।



তিনি বলেন, যখন হাতে হাতে আবেদন নেওয়া হতো, তখন আবেদনের সংখ্যা এর চাইতে অনেক বেশি হতো। কখনও তা তিন মাসেই সাতশ থেকে এক হাজার হয়ে যেত। কিন্তু এখন আবেদন সংখ্যা কমে গেছে। সার্ভার জটিলতা আবেদন কমে যাওয়ার একটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনুদানের বিষয়টি অনলাইনে আসায় দালালদের মাধ্যমে ভুয়া আবেদন করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, অনুদান থেকে কমিশন নেওয়ার মতো দুর্নীতিগুলো কমেছে। সার্ভার জটিলতা নিরসনে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে জানান।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন