Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

একটি পাথরের জন্য ১১টি গুলি!

Icon

টিআরটি ওয়ার্ল্ড

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

একটি পাথরের জন্য ১১টি গুলি!

একটি পাথরের জন্য ১১টি গুলি!

Swapno

দখলকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের তুরমুস আইয়ায় ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ সেটেলারদের গুলিতে ১৪ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কিশোর আমের রাবি নিহত হয়েছেন। মার্কিন নাগরিক আরও দুই কিশোর গুরুতর আহত হয়েছেন। ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে থাকা রাবির আত্মীয়-স্বজনরা প্রশাসনের কাছে অনেক প্রশ্নের জবাব চাইছেন।


রামাল্লার কাছে তুরমুস আইয়ায় জায়তুন ও বাদাম বাগানের মাঝে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। কিন্তু গত ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় সেই সুর ডুবে যায় চিৎকারে। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে সেই মুহূর্ত এক কিশোর মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। আমের রাবির দেহে ১১টি গুলি লাগে। পেটে ২টি, পায়ে ১টি, হাতে ২টি, বুকে ২টি, কাঁধে ২টি এবং মুখে ২টি। বাদাম তোলার জন্য বন্ধুদের সঙ্গে বাগানে গিয়েছিল সে।


আমেরের বাবা মোহাম্মদ রাবি বলেন, প্রতিবেশীর ফোন পেয়ে বাগানে ছুটে যাই। সেখানে দেখি, আমার ছেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। আহত আরও দুই বন্ধু আইয়ুব ইগবারা (১৪) ও আবেদ শেহাদা (১৫)। আইয়ুবের দেহে রক্তক্ষরণ হয়। ইসরায়েলি চেকপয়েন্টে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখায় চিকিৎসা পেতে দেরি হয় তার। আমেরের লাশ ইসরায়েলি সেনা ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করতে হয় পরিবারকে।


ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, কিশোররা গাড়িতে পাথর ছুড়ছিল। তাদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমেরের পরিবার এই যুক্তি মানতে নারাজ। মোহাম্মদ রাবি বলেন, একটি পাথরের জন্য ১১টি গুলি? বুকে ২টি? এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না। নয়।


নিউ জার্সির গভর্নর ফিল মারফি ইসরায়েলি সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। সিনেটর কোরি বুকার ও অ্যান্ডি কিম তদন্ত ও সেটেলারদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়েছেন। কংগ্রেসম্যান বনি ওয়াটসন কোলম্যান আমেরের মৃত্যুকে ‘নৃশংসতা’ বলে উল্লেখ করে প্রশ্ন তুলেছেন, একজন আমেরিকান কিশোরকে হত্যার কী ন্যায্যতা হতে পারে?



তুরমুস আইয়ার ৮০ শতাংশ বাসিন্দা মার্কিন নাগরিক। গত জুনে ইসরায়েলি সেটেলাররা এখানে ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছিল। মেয়র লাফি শালাবি বলেন, শিলো বসতি থেকে সশস্ত্র সেটেলাররা প্রায়ই হামলা চালায় সেনা সুরক্ষায়। স্থানীয় ইয়াসের আলকামের কথায়, সেনারা যখন গুলি করে, ৮০ শতাংশ শঙ্কা থাকে তারা আমেরিকান নাগরিককে গুলি করছে। কিন্তু মার্কিন দূতাবাস চোখ বন্ধ করে রাখে।



আমের রাবি নিহত আমেরিকান-ফিলিস্তিনির তালিকায় সর্বশেষ নাম। এর আগে, সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ (২০২২, জেনিন),
কিশোর তাওফিক আব্দুল জাব্বার ও মোহাম্মদ খদুর (২০২৪, পশ্চিম তীর), প্রবীণ ওমর আসাদ (২০২২, সেনা আটকে রাখার পর), কর্মী র‌্যাচেল করি (২০০৩, গাজায় বুলডোজারের নিচে), তুর্কি-আমেরিকান আইসেনুর এজি ইয়গি (২০২৪, বিক্ষোভে গুলি)।



আমেরের জানাজায় শতশত মানুষ নীরবে মিছিল করেছেন। তার বাবা কালো চশমা পরে এগিয়ে যান। আমেরের চাচা রামি জবারা বলেন, সে ক্লাসে প্রথম ছিল। ভদ্র, মেধাবী। নিউ জার্সিতে তার ভাগ্নির জন্ম দেখে এসেছিল মাত্র।


মোহাম্মদ রাবি বলেন, আমি দূতাবাসে ফোন করলাম। তারা আমার পাসপোর্ট নম্বর চাইলো। আমি বললাম, আমার ছেলেকে উদ্ধার করুন, সে বেঁচে থাকতে পারে! পরদিন তারা ফোন করে জিজ্ঞেস করল, কিছু দরকার? আমি বললাম, সে মারা গেছে। এখন কী করব?

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শোক প্রকাশ করেছে। কিন্তু তুরমুস আইয়ার বাসিন্দাদের প্রশ্ন:  আমেরিকান রক্তের মূল্য কি ইসরায়েলের কাছে এতই সস্তা? সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন