Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

দুর্নীতির বরপুত্র চার সার্ভেয়ার দুুদকের নজরদারিতে

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

দুর্নীতির বরপুত্র চার সার্ভেয়ার  দুুদকের নজরদারিতে

দুর্নীতির বরপুত্র চার সার্ভেয়ার দুুদকের নজরদারিতে

Swapno

 নারায়ণগঞ্জ জেলার ভূমি অধিগ্রহণ শাখার ডিসি অফিসের কানুনগো এবিএম হাবিব উল্লাহ, সার্ভেয়ার মামুন হোসেন, মো. আনোয়ার হোসেন এবং সড়ক জনপথের সার্ভেয়ার দেওয়ান মো. সোহাগের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই। বর্তমানে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের জমি অধিগ্রহণ ক্ষেত্রে জমির মূল্য বেশী করে দেখানোর দুর্নীতি থেকে শুরু করে আরো বেশ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এর নজরদারিতে রয়েছে এরা এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তদন্ত পক্রিয়াধীন রয়েছে। এদিকে এই চারজন কানুনগো ও সার্ভেয়ার পদে পোষ্টিং পায় তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাধর এমপিদের তদবিরে নারায়ণগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় বদলি হয়ে আসেন। ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর এর পরে বাংলাদেশের ভূমি প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী বদলি হলে ও নারায়ণগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় সার্ভেয়ার মামুন, কানুনগো হাবিবুল্লাহ, সার্ভেয়ার আনোয়ার, দেওয়ান সোহাগ তাদের কোনো ধরনের বদলি হয়নি বিভিন্ন লবিংয়ে।



এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায় তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত বিভিন্ন উপায়ে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের জমি অধিগ্রহণ ক্ষেত্রে জমির মূল্য বেশী করে দেখানোর কথা বলে সাধারণ মানুষ এর কাছ থেকে নাল শ্রেণির জমিকে ভিটি এবং বাণিজ্যিক শ্রেণির জমি দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করছেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনারকে মাসিক চাঁদা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ এলএ শাখায় বহাল তবিয়তে এখনো বহাল আছে।


এদের দূর্নীতির ফিরিস্তি হিসেবে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।  তার মধ্যে রূপগঞ্জ উপজেলায় ২১/২০২১-২০২২ নং এলএ কেসের মাধ্যমে অধিগ্রহণ কার্যক্রম ২০২১ সালে শুরু করা হয় এবং ২০২২ সালে ৪(১) ধারা নোটিশ মাঠে জারী করা হয়। ৪(১) ধারা নোটিশ জারীর পর ৪ (৭) ধারা মোতাবেক নোটিশ জারীর পর অসৎ উদ্দেশ্যে স্থাপনা নির্মাণ বা শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোন পরিবর্তন করা হলে তা যৌথ তদন্তে অন্তর্ভূক্ত না করার নির্দেশনা রয়েছে কিন্তু এ প্রকল্পে ঘুষের বিনিময়ে ৪(১) ধারা নোটিশের পর দীর্ঘ দিন পর পর প্রকল্প সংশোধন করে বাস্তব শ্রেণী পরিবর্তন করতে তারা সহায়তা করেন। অপরদিকে যে টাকা দিয়েছে তাকে বাণিজ্যিক শ্রেণী দেয়া হয়ছে উদাহরণস্বরূপ যেমন বরপা মৌজার ৩৯১ নং দাগে আলামিনের মুদি দোকানকে বাণিজ্যিক কিন্তু সুমি আক্তারের দোকানকে দোকান দেয়া হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৭২ নং দাগে মনিরুল আলমের মার্কেটের মতো দোকানকে দোকান দেয়া হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৭৩ নং দাগে হাজী মোখলেছুর রহমান ৪(১) ধারা নোটিশের পর ফ্যক্টরী সেড নির্মাণ করার পর ও তা উত্তোলন করেন এবং এই সেড দেখিয়ে দাগে ৩ জনের জমিই বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৭৬ নং দাগে ইমাম হোসেনের কোন স্থাপনাই নাই অথচ ইমাম হোসেনের জমিকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৮৪ নং দাগে লোকমান হোসেনের দোকানকে বানিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৮৭ নং দাগে হাজী চিনু বেপারীর দোকান সমূহকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৮৯ নং দাগে আবুল হোসেন সাউদ এর দোকান সমূহকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৯০ নং দাগে শাহ আলম, নুরুজ্জামান, আসলাম ভূইয়া, মোরসালিন ভূইয়া এর দোকান সমূহকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, খাদুন মৌজায় ৯২ ও ৯৫ নং দাগে সিটি গ্রুপের খালী জমিকে বানিজ্যিক দেখানো হয়েছে অথচ আধুরিয়া মৌজায় রাজ্জাক টেক্সটাইল মিলের ও মাহনা মৌজার ৩১, ৩৩, ৩৮, ৩৯, ১১৯, ১২০,১২১ নং দাগে মেট্রো স্পিনিং মিল ও রাজ্জাক টেক্সটাইল মিল এবং টেক্স মেক্স লিঃ এর খালী জমিকে ভিটি দেখানো হয়েছে, খাদুন মৌজার ৪৩২ নং দাগে মাহাবুব আলম এর দোকানকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, আড়িয়াব মৌজার ১০৫ নং দাগে মজিবর ভূইয়ার দোকানের জমিকে বানিজ্যিক দেখানো হয়েছে আবার ১০৬ নং দাগে শাহিন ভূইয়া ও নুরুল হকের দোকানকে দোকান শ্রেনী দেখানো হয়েছে ১০৭ নং দাগে ইমাম হোসেনের দোকানকে দোকান হিসেবে দেখানো হয়েছে, ১৯৫ নং দাগে রিতা রানীর দোকানকে দোকান হিসেবে দেখানো হয়েছে, ১৯৬ নং দাগে লক্ষি রানী ও অভিরাম এর দোকানকে দোকান হিসেবে দেখানে হয়েছে,  এখানে এ কারনে দেখানো হলো যে একই শ্রেনীর জমি ১ জন টাকা দিলো আর তার জমি বাণিজ্যিক হলো আরেকজন টাকা দেয়ানি এ জন্য তার জমি দোকান শ্রেণির রয়ে গেল।


একইভাবে আরো বেশ কয়েকটি মৌজা ও দাগ নাম্বারের নাল জমিকে দোকান হিসেবে দেখিয়ে লুটের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। যাকে ঘিরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য প্রকল্প নারায়ণগঞ্জ জেলার এলএ শাখার কানুনগো এবিএম হাবিব উল্লাহ ও সার্ভেয়ার মামুন হোসেন, সার্ভেয়ার আনোয়ার হোসেন এবং সড়ক জনপথের সার্ভেয়ার দেওয়ান মো. সোহাগ একটি সিন্ডিকেডের মাধ্যমে আনুমানিক প্রায় ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে সরকারের প্রকল্প ব্যায় প্রায় ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বৃদ্ধি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।



ইতিমধ্যে বিভিন্ন্ অনুসন্ধানে সার্ভেয়ার মামুনের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার ফিরিস্তি পাওয়া গেছে। তার নামে পূর্বাচল উপশহরে পাঁচ কাঠা এবং তার স্ত্রীর নামে পাঁচ কাঠা, ঝিলমিল প্রকল্পে তিন কাঠা তার স্ত্রীর নামে, উত্তরা নিগার প্লাজায় রূপসী কালেকশান নামে তার একটি কসমেটিক দোকান আছে। যার বর্তমান মূল্য ৩-৪ কোটি টাকা। ঢাকার মীরহাজারি বাগের রূপসী কালেকশান নামে শীটের দোকান আছে। ঢাকার উত্তরাতে ৬ নম্বর সেক্টরের রোড নং ১১ বিথি অহির নামে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, বর্তমানে ইনটোরিয়রের কাজ চলছে। ঢাকা উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর, রোড নম্বর ৩/এ একটি বায়িং হাউজ খুলছেন তার বন্ধু সুলতানকে এমডি করছেন। আর তার নাম হচ্ছে ইকরা লাইট হাউজ। তাঁর নিজ বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানা শহরের মদনপুরা ইউনিয়নে। তার কৃষক বাবার নামে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার জমি কিনে দিয়েছেন। বাউফল উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট এর একজন নেতাকে সার্ভেয়ার মামুন কোটি টাকা খরচ করে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। বর্তমানে সে পলাতক অনেক মামলার আসামি মামুন তাকে বিভিন্নভাবে টাকা দিয়ে সহযোগিতা ও আশ্রয়-প্রদান করছে। এছাড়া ও ১২ গ্রেডের এই সরকারী কর্মকর্তার ২৪ হাজার টাকা বেসিকে সর্বসাকুল্যে যার বেতন ৪০ হাজার টাকা অথচ তিনি অফিস করেন ব্যক্তিগত টয়োটা প্রিমিও মডেলের খয়েরি কালারের গাড়িতে চড়ে। বর্তমানে সার্ভেয়ার মামুনের অনুসন্ধানি প্রতিবেদনের মতোই বাকি দূর্নীতিরবাজদের বিরুদ্ধে তদন্ত পক্রিয়াধীন।
এ বিষয়ে কানুনগো এবিএম হাবিব উল্লাহ যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমরা কোন দুর্নীতি কর্মকাণ্ডের  সাথে জড়িত নেই। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
সার্ভেয়ার মামুন হোসেন যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘একটি পক্ষ আমাকে ঘায়েল করতে সাংবাদিকদের কাছে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। আমি কোন অপকর্মের সাথে কখনোই জড়িত ছিলাম না।’ 

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন