Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

কোন বৈরিতার শিকার বন্দরবাসী

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

কোন বৈরিতার শিকার বন্দরবাসী

কোন বৈরিতার শিকার বন্দরবাসী

Swapno



# রাজনৈতিক হীনমন্যতার কারণে সেতুটি আজ পর্যন্ত নির্মাণ হয়নি : আবুল কালাম
# এরই মধ্যে শীতলক্ষ্যার উপর পাঁচটি সেতু নিমার্ণ হলেও হয়নি আাকঙ্খিত সেতু
# নকশা জটিলতা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বঞ্চিত বন্দরবাসী



শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে শুধুমাত্র একটি সেতু নির্মাণের দাবি ছিল নারায়ণগঞ্জ এর সৃষ্টি সঙ্গী বন্দরবাসীর। যে সেতুতে শহরবাসীর সাথে বন্দরবাসীর একটি মেলবন্ধনের সৃষ্টি হবে। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ পেশাগত বিভিন্ন সমস্যায় যা দেবদূতের মতো কাজ করবে। বন্দরবাসীর কিছুটা হলেও বৈষম্য ঘুচবে শহরবাসীর সাথে। বন্দরবাসী সেই আশা আকাঙ্খা এখন অনেকটাই নিরাশায় পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় অর্ধ ডজন (৫টি) সেতু।


কিন্তু সেখানে জায়গা পায়নি বন্দরবাসীর আকাঙ্খিত সেই সেতুর অবস্থান। সম্প্রতি নির্মাণ করা বন্দরের মদনগঞ্জ কয়লারঘাট ও সদর উপজেলার সৈয়দপুর এলাকার তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুকে বন্দরবাসীর সেই কাঙ্খিত সেতু ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে তাদের বুকের চাপা কষ্ট বাড়িয়ে দেওয়া হয়ে বহুগুণে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে শহরের সূধীজন থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবন্দও বন্দরবাসীর টানে আবেগ, আশারবানী, প্রীতি ও ভালোবাসায় মন উথলে উঠে


দরদ দেখিয়ে অশ্রুহীন কান্নায় ভাসে সূধী সমাজের কিছু মুখ চেনা লোক। তবে তাদের দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্খা পূরণের এই দাবিতে দেখা যায় অনেক নাটকীয়তা। যেখানে অনুমোদন হয়, জরিপ হয়, নকশাও হয় কিন্তু বাস্তবায়ন আর হয় না। তারপরও কেন হয় না বন্দরবাসীর কাঙ্খিত সেই সেতু। কীসের বৈরিতার শিকার হচ্ছে বন্দরবাসী। সেই মনোকষ্টে অনেকটাই আশাহত তারা।


এর আগে গত ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের মেয়াদান্তে এই কাঙ্খিত সেতু নির্মাণের উদ্দেশ্যে শহর সংলগ্ন হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকার হাজীগঞ্জ এলাকায় ভিত্তিপস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। তবে এরপর বিএনপি আর ক্ষমতায় আসীন হতে পারেনি, তাই তারা সেতু নির্মাণে ব্যর্থ হয়। এরপর ২০০৯ সালে জাতীয় পার্টি মনোনী তৎকালীন সাংসদ একেএম নাসিম ওসমান এই সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার করেন।


কিন্তু বাস্তবায়ন করেননি। ২০১১ বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তৎকালীন মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী এই শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার করেন বলেও জানা যায়, কিন্তু তার আর বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর একে একে সেলিম ওসমান ও মেয়র আইভী বেশ কয়েকবার এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও তা আর বাস্তবায়ন করেননি কেউ। 


তবে একে একে মন্ত্রী ও মেয়রসহ শহরের কিছু সুবিধাবাদী সচেতন মহল এই সেতু নিয়ে বিভিন্ন নাটকীয়তার সৃষ্টি করে বন্দরবাসীর সাথে প্রতারণা করেছেন বলেও বন্দরবাসীর অভিযোগ। এখানে কেউ রাজনৈতিক স্ট্যন্টবাজি আবার কেউ দলীয় স্ট্যন্টবাজি করেছেন বলেও অভিযোগ বন্দরবাসীর।


বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বন্দর থেকে বিভিন্ন কারণে শহর ও আশেপাশের এলাকায় দৈনিক প্রায় তিন লাখ লোকের যাতায়াত। যার কিছু লোক সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকেও আসে। শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল খেয়াঘাট দিয়েই প্রায় দুই লাখ লোকের যাতায়াত বলে জানা গেছে। যা দেশে বিভিন্ন খেয়াঘাটের চলাচল করা লোকের তুলনায় সংখ্যায় বেশি। এর বাইরে নবীগঞ্জ খেয়াঘাট দিয়ে পঞ্চাশ হাজারেরও উর্ধে বলে জানা যায়। 


এরই মধ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে পর পর সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর সেতু, রূপগঞ্জের তারাবো সেতু, গাজী সেতু ও কাঞ্চন সেতু নির্মিত হলেও কোন এক অজানা কারণে এতবছর বন্দর উপজেলার মধ্যদিয়ে কোন সেতু নির্মাণ করা হয়নি। গত ২০২২ সালে প্রথম এই উপজেলার মধ্য দিয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। যা তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নামে পরিচিত। তবে এই সেতু বন্দরবাসীর কল্যাণে নির্মাণ না করেও দলীয় নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং শহরের এক শ্রেণির সচেতন মহল ও মিডিয়া তা বন্দরবাসীর সেই বহুল আকাঙ্খিত সেতু বলে প্রচারণা চালায়। 


অথচ এর মধ্যে ২০১৭ সাল থেকেই সিটি কর্পোরেশন ও এলজিইডি’র যৌথ্য প্রচেষ্টায় দুটি সেতু নির্মাণের কথা প্রচার হয় এবং তা তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। এরই মধ্যে আরেক নাটকীয়তার জন্ম দেন নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। পর পর বেশ কয়েকবার নকশা পরিবর্তন করে এবং ওসমান পরিবারের বাধাসহ অন্যান্য বেশ কিছু বাধার মুখে তা বাস্তবায়ন করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 


তবে বন্দরবাসীর মতে এখানে নকশার চেয়ে বেশি প্রয়োজন আন্তরিকতা ও সততা। কারণ মূল শহরের বুক দিয়ে করতে গেলে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ এলাকা দিয়ে এই সেতু নির্মাণে ব্যয় ও বাধা দুটিই কম হতো বলে মনে করেন তারা। তাছাড়া বিএনপি এই এলাকা দিয়ে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছে বলে এখানে করা যাবে না রাজনীতিতেও এমন কেনা বাধা নেই। তাই বিষয়টিকে স্ট্যন্টবাজি হিসেবে মনে করেন তারা।


এত বছরেও এই সেতু নির্মাণের ব্যর্থতা এবং নবীগঞ্জ দিয়ে সেতু না করার কারণ জানতে চাইলে জাতীয় সংসদের বিএনপি মনোনীত তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও খ্যাতিমান আইনজীবী এডভোকেট আবুল কালাম যুগের চিন্তাকে বলেন, অনেকেই বলেন, আমরা শীতলক্ষ্যা সেতু করতে ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু এখানে একটি ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে। ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণের জন্য নবীগঞ্জ ঘাট এলাকায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। আমি বলবো শুধুমাত্র রাজনৈতিক হীনমন্যতার কারণে এই সেতুটি আজ পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়নি। আমি এখানে আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করবো না। 


কারণ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন তার শাসনামলে চাষাঢ়া বালুর মাঠে আসেন তখন এই ব্রিজ নির্মাণের প্রথম দাবি তুলেছিলেন আমার পিতা হাজী জালাল উদ্দিন। এরশাদ সরকারের আমলে এই ব্রিজ নিয়ে কেউ কোন বক্তব্য রাখছেন বলে আমার জানা নাই। এমনকি ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগও এই ব্রিজ নির্মাণের বিষয় কোন তৎপরতার প্রমাণ দিতে পারবে না। 


বিএনপি সরকার ২০০১ সালে পুরনায় ক্ষমতায় আসার পর আমি লিখিতভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই ব্রিজের বিষয়টি সরকারের নিকট তুলে ধরি। যার ধারাবাহিতায় ২০০৬ সালে ভিত্তিপ্রস্থত স্থাপন করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত আমরা এরপর আর ক্ষমতায় যেতে পারিনি। তাই এই ব্রিজ না করার দায় আমরা কীভাবে নিতে পারি। আমরা বরঞ্চ বলতে পারি যে, আমরা সূচনা করেছি কিন্তু এই ১৬ বছর দায়িত্বে ছিলেন তারা এই সেতু করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ওনারা যদি করতে পারতেন তাহলে হয়তো ওনারা ক্রেডিট নিতে পারতেন।


তিনি বলেন, বন্দরের বিশাল একটি জনগণকে তাদের প্রয়োজনেই শহরে যেতে হয়। সেই হিসেবে শহর বন্দরের মাঝে যে কয়টা ঘাট (খেয়াঘাট) আছে তারমধ্যে টার্মিনাল খেয়াঘাট ও নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ খেয়াঘাট দিয়েই সবচেয়ে বেশি লোকজনের পারাপার। টার্মিনাল ঘাটটি সেন্টারে থাকায় এই জায়গাটি ব্রিজের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কিন্তু এখানে শহরের দিকে অনেক বেশি অবকাঠামো আছে। ব্রিজ এর দুই পাশে অনেকখানি জায়গা ব্যবহার করতে হয়। 


তাছাড়া এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সেতুটি বের হয়ে রাস্তাটি যাবে কোন দিকে। এখানে স্পেস অনেক কম। তাই আমরা শহর ও বন্দরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে নবীগঞ্জকে বেছে নিয়েছিলাম। এখানে সেতুর দুই পাশ দিয়েই অনেকটা লম্বা দূরত্বের সোজা জায়গা পাওয়া যাবে। চিটাগাংরোড, শিবু মার্কেটসহ মূল শহরে প্রবেশের মুখ করতে সহজ হতো। 


অন্যদিকে ঐতিহাসিক গ্র্যান্ডট্রাক রোডের সরল সড়কটি ব্যবহারে বন্দর এলাকার একদিক দিয়ে মদনগঞ্জ অন্যদিকে মদনপুর এবং সরাসরি সোনারগাঁয়ের দিকে সংযোগ দেওয়া সহজ হবে। তাই অনেক কম বাজেটে মূল ব্রিজসহ দুই পাশের কাজ শেষ করা যাবে।


জায়গা পেতে কম ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এতে একটি বিকল্প রাস্তার সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে মূল শহরে কোন প্রকার চাপ সৃষ্টি না করেই যানবাহনগুলো চলাচল করতে পারতো। এতে শহরের গতিশীলতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম হতো। বিষয়টি ব্যক্তি স্বার্থে না, জনস্বার্থেই নেওয়া হয়েছিল। আমার মতে ব্রিজটি হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ এলাকায় না হয়ে ৫নং ঘাট এলাকায় নেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে।


Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন