সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

অনিয়ম করে মার্কেট করলে; গুড়িয়ে দেয়ার আল্টিমেটাম

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০২২  



# জায়গা আত্মসাতের চেষ্টায় লিপ্ত ভূমিদস্যুরা : রফিউর রাব্বি
# কালো হাত আমরা ভেঙে দিতে চাই : এড. মাসুম


নারায়ণগঞ্জ ১নং রেলগেটে ৪৭২০০ বর্গফুট জমিতে মার্কেট নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ভূমি রক্ষায় সম্মলিত নাগরিক পরিষদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল ১১ নভেম্বর বিকাল ৪ টায় চাষাঢ়া শহিদ মিনারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, আমরা যে জায়গাটি নিয়ে এখানে কথা বলছি। আপনারা ইতিমধ্যে শুনেছেন ১০ বছর আগেও এই জায়গাটিকে আত্মসাৎের জন্য তথা কথিত রেলওয়ে শ্রমিক কল্যান ট্রাস্ট এর নামে এই সংগঠন তারা আত্মসাৎ করতে চেয়েছিল।

 

 

এবং এই নাগরিকদের প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে এটির পরিকল্পনা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। সেই টিয়ারসেল গুলির ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছিল। আমরা দেখিছি আমাদের নারায়ণগঞ্জে এক শ্রেনীর ভূমিদস্যু রয়েছে। আমাদের এই নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সংসদ সদস্যদের ছত্র ছায়ায় তারা সিন্ডিকেট করে রাজউকের জায়গা রেলওয়ের জায়গা বিআইডব্লিউটিএ’র জায়গা, হাইওয়ের জায়গা এই সমস্ত জায়গাগুলো তারা দীর্ঘদিন ধরে আত্মসাৎ করে আসছে।

 

 

আমরা বিভিন্ন সময় এর বিরুদ্ধে সেখানে কথা বলেছি আন্দোলন, সংগ্রাম করেছি। আমাদের পেছনের যে জায়গাটি আপনারা জানেন, রাজউকের বালুর মাঠের এই জায়গাটি এবটি বিশেষ সিন্ডিকেটের লোকজনই আত্মসাৎ করে দখল করেছে। এই ভূমিদস্যুদের তৎপরতায় আজ নারায়ণগঞ্জের মাটিতে আবার শুরু হয়েছে।

 

 

এই নির্মাণ কাজ যদি বন্ধ না করা হয়, তাহলে কিভাবে এই কাজ বন্ধ করতে হয় সেই অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। আমরা এই মার্কেট নির্মাণ অবশ্যই বন্ধ করবো। এবং সেই কর্মসূচিতে যদি কোন সহিংসতা হয়, তবে সেই কর্মসূচির জন্য আামদের সরকার এবং প্রশাসন দায়ি থাকবে। আমরা কোন সহিংসতায় যেতে চাই না।

 

 

অনিয়ম করে জনগণের অধিকারকে আপনারা ভুলুণ্ঠিত করবেন না। আমরা হুঁশিয়ার করলাম দ্রুত এই মার্কেট নির্মাণ কাজ বন্ধ করেন নয়তো আমরা এই মার্কেটকে গুড়িয়ে দেব। এই মার্কেটকে গুড়িয়ে দিয়ে আমরা নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য ব্যবহার করার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবো।

 


রফিউর রাব্বি আরো বলেন, “নারায়ণগঞ্জে রেলওয়ে, রাজউক, বিআইডব্লিউটিএ, জেলা পরিষদ, রোডস এন্ড হাইওয়ে সহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের অব্যবহৃত জমি আত্মসাতের জন্য দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কতিপয় ভূমিদস্যু তৎপর রয়েছে। চক্রটি সিন্ডিকেট করে ইতিমধ্যে চাষাঢ়া বালুরমাঠে রাজউকের জমি সহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের বহু ভূমি আত্মসাৎ করেছে।

 

 

এখন ১ নং রেলগেটে ৪৭ হাজার দুইশ বর্গফুট জমি রেলওয়ের অসাধু কর্মকর্তাদরে সাথে যোগসাজসে তথাকথিত ‘রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্টের’ নামে আত্মসাতের প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত হয়েছে।”

 

 

তিনি বলেন, “রাজউক দেশের বিভিন্ন জায়গায় জরিপ করে টেকসই উন্নয়নের জন্য নদীবন্দর সংলগ্ন ২১টি জেলায় নৌ-বন্দর, রেল-স্টেশন ও বাস-টার্মিনাল একই জায়গায় তৈরীর জন্য ডিটেল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) প্রনয়ণ করেছে। সে পরিকল্পনায় নারায়ণগঞ্জের এই নৌ-বন্দর, রেল-স্টেশনটি ও বাস-টার্মিনালটি রয়েছে।

 

 

ড্যাপের এ পরিকল্পনা সরকারের স্ট্রেটিজিক ট্র্যান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) দ্বারাও অনুমোদিত। অথচ সরকারী প্রতিষ্ঠান হয়েও সরকারের এ পরিকল্পনাকে উপেক্ষা করে রেলওয়ের অসাধু কর্মকর্তারা অনৈতিকভাবে স্থানীয় ভূমিদস্যূদের সাথে নিয়ে এই জায়গাটি আত্মসাতের প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয়েছে।”

 

 

এ সময় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, “আমরা হতাশার কথা বলতে বলতে আর হতাশাগ্রস্থ হতে হতে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। যেদিকে তাকাবো সেদিকে হতাশার চিত্র। আমরা একটা সুন্দর শান্তিময় নারায়ণগঞ্জ চাই। কিন্তু সুন্দর শান্তিময় নারায়ণগঞ্জ আমাদের লড়াই সংগ্রাম করে আদায় করতে হয়।

 

 

কোথাও কোন আসার বানি নাই কোথায় কোন আসার কথা নাই। চাষাঢ়ার দিকে তাকালে যানজট ওই মৌমিতাকে জেলা প্রশাসক স্টেডিয়ামের পানিতে চোবাবেন। কিন্তু দেখলাম জেলা প্রশাসক ম্যানেজ হয়ে গেছেন। মৌমিতা চলছে দূর্বার গতিতে; হকাররা ফুটপাত দখল করে বসে আছে।

 

 

আর যানজটে সারা নারায়ণগঞ্জের অতিষ্ট অবস্থা। অটোরিক্সা নানা রকম স্ট্যান্ডবাজি, চাঁদাবাজি করে আজকে আমরা নারায়ণগঞ্জে মানুষ কেমন যে একটা অবস্থার মধ্যে আছি! যে আমরা কারো কাছে কিছূ বলতে পারি না! আমারা কিছু বলতে গেলেই আমাদের দৃশ্যে মানুষ পটে বেশি আটে আন্দোলন আর লড়াই সংগ্রামের কথা।

 

 

আজকে থেকে ১০ বছর আগে আন্দোলন করে যে জিনিস নারায়ণগঞ্জবাসী থামিয়ে দিয়েছিল। আবার ১০ বছর পর কার ইশারায় কাদের ইঙ্গিতে কাদের প্রভাবে আজকে এই রেল ভূমিদস্যুরা দখল করে রেলওয়ে কল্যান ট্রাস্ট এর নামে জমি দখল করে ওই জমিতে দোকান করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছে, এরা কারা? ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজি করে বড় ভাই, এরা কারা?

 

 

রেলওয়ের সম্পত্তি দখল করে, এরা কারা? একটা পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে আছে আজকে নারায়ণগঞ্জবাসী। যেখানেই যাবেন তাদের কালো হাত। তাদের এই কালো হাত আমরা ভেঙে দিতে চাই। আমরা সকল অপশক্তির কালো হাত ভেঙ্গে দিতে চাই। এ জন্য নারায়ণগগঞ্জবাসীকে আমরা বলবো প্রস্তুত হন।”

 

 

“আমরা কিন্তু রাজনীতি করি না রাজনীতিক দলগুলো জাতীয় ভিত্তিক আন্দোলন করে। আমি রেল কর্মকর্তাকে বলতে চাই. আপনারা দয়া করে এই কাজ বন্ধ রাখুন। আজকে এই ভূমিদস্যুর কবলে পড়ে আমরা হারাতে বসেছি। আমরা যারা এখানে আছি সবাই মিলে রেলওয়ের ভূমিদস্যুদের সাথে লড়াই সংগ্রাম করবো। আর এখানে যত বড় গডফাদার হোক তাদের কালো হাত আমরা ভেঙ্গে দেব। আর নারায়ণগঞ্জকে একটি শান্তিময় নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলবো।”

 

 

এ সময় ন্যাপ নেতা এড. আওলাদ হোসেন বলেন, “এই মঞ্চে রাজউক থেকে পৌরসভার ভুমি রক্ষা করার জন্য সমাবশে হয়েছিল । সেই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. কামাল হোসেন এবং সিটি কর্পোরেশনর পক্ষে হাইকোর্ট মামলা পরিচলনা করে সেই মামলার ইস্তগিত দিয়েছিলেন। আমাদের নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি পুপলারের পিছনের জায়গাটি তার ছত্রছায়ায় তার লোকজনের কাছে অবৈধ টেনডারের মাধ্যমে বিক্রি করেছে।

 

 

এখন ও সিটি কর্পোরেশনের মামলা চলে। পপুলারের মালিক সেই জায়গা ক্রয় করেছে আমরা নারায়ণঞ্জবাসী শুধু সমাবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে নারায়ণগঞ্জের কোন জায়গা রক্ষা পাবে না। পার্লামেন্টে দাড়িয়ে কখানো আমাদের এই ৫ জন এমপি বলে নাই নারায়ণগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় নাই। নারায়ণগঞ্জে মেডিকেল কলেজ নাই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নাই।

 

 

তারা এই কথা বলার সাহস নাই। প্রভাবশালী অনেকে ফুটপাত দখল করে রাস্তায় ডিপো করে বাসের ব্যবসা করে। সোনারগাঁয়ে বালু সন্ত্রাস করে। তারা ইট খোলায় চাঁদাবাজী করে। গার্মেন্টসে জুটের ব্যবসা করে। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। শুধু সমাবেশে সীমাবদ্ধ না থেকে আমাদের কাছে যতটুকু তন্ত্র আছে রেলওয়ের জায়গার মধ্যে মাওরা হোটেলকে লিস দিয়েছে।

 

 

সেখানে নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল নারায়ণগঞ্জ কলেজ। ছাত্রদের বেড়িয়ে আসার পরে একটি পার্ক নাই বাসার জায়গা নাই। খেলার মাঠ নাই একটা দৃষ্টিনন্দন কিছু নাই। একজন টোকাই সাধারণ মানুষের কাজ থেকে টাকা নিয়ে দোকান বরাধ্য দিচ্ছে। রেলওয়ের কর্মচারিদের সাথে আঁতাত করে প্রভাবশালী এমপির সাথে যোগাযোগ করে।

 

 

এটাকে শুধু প্রতিবাদ করলে চলবে না আসুন আমরা প্রতিরোধ করি। তাহলে তারা পালানোর কনো সুযোগ পাবে না। যে টোকাই আজকে এমপির সাথে সম্পর্ক করে তাকে দিয়ে ফোন করিয়ে রেলওয়ের অসৎ দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীদের দিয়ে সেখানে মার্কেট তৈরি করে আমরা সেটা প্রতিরোধ করবো।”

 

 

অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, ‘এই মার্কেটটি নির্মাণের জন্য কল্যাণট্রাস্ট রাজউক বা সিটি কর্পোরেশন কারো কাছ থেকেই অনুমোদন নেয় নাই। তিনি প্রশ্ন রাখেন, অনুমতি ছাড়া সরকারী জায়গায় কী করে এভাবে মার্কেট নির্মাণ হতে পারে?  

 

 

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকারী সব প্রতিষ্ঠানের নারায়ণগঞ্জের সকল জমিই বিভিন্ন সময় নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছ থেকে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য সরকার অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু সে প্রয়োজনে যে সব জায়গা-জমি ব্যবহৃত হচ্ছেনা তা বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর অসাধু কর্মকর্তারা আইন ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিক্রি করে দিচ্ছে।

 

 

অথচ নারায়ণগঞ্জে নাগরিকদের প্রয়োজনে উন্নতমানের উচ্চতর শিক্ষ প্রতিষ্ঠান, মেডিকেল কলেজ, শিশুদের বিনোদনের জন্য পার্ক, মিউজিয়াম, চিড়িয়াখানা সহ বহুকিছুই করা যাচ্ছেনা জায়গার অভাবে। বক্তারা বলেন, নারায়ণগঞ্জবাসী যে কোন মূল্যে ভূমিদস্যুদের হাত থেকে নিজেদের জমি রক্ষা করবে।

 

 

দ্রুত ১ নং রেলগেটে মার্কেট নির্মাণের কাজ বন্ধের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তারা বলেন, নতুবা উদ্ভূত সকল পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী থাকতে হবে। সমাবেশে বক্তারা যে কোন মূল্যে এই মার্কেট নির্মাণ প্রতিহত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে।’ 

 

 

সংগঠনের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এড. এবি সিদ্দিক, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ নূরউদ্দিন, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম, শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলার অসিত বরণ বিশ্বাস। 

 

 

এবং বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক নিখিল দাস, সিপিবি নারায়ণগঞ্জ শহর সভাপতি আবদুল হাই শরীফ, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ওয়ার্কার্স পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলা সম্পাদক হিমাংসু সাহা।

 

 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা সংগঠক নাসির হোসেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল ও সামাজিক সঙগঠন সমমনার সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ সাহা। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন শাহীন মাহমুদ। এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর