মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

অবশেষে চাঁনমারি বস্তি উচ্ছেদ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২১  

# প্রশাসনের সহায়তায় উচ্ছেদ কার্যক্রম চালায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ


# মাদক ব্যবসায়ীদের পাড়া মহল্লায় ছড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা, এলাকাবাসির মিছিল


# মাদকের আস্তানা কিংবা মাদক বিক্রেতার স্থান হবে না : এসপি


# ১৪০ কোটি টাকা মূল্যে ২০০ শতাংশ জায়গায় দ্রুত বাউন্ডারি দেয়ার অনুরোধ


 
নারায়ণগঞ্জের মাদকের হাট হিসেবে পরিচিত চাঁনমারি বস্তি। দিনে দুপুরেও বস্তিতে প্রকাশ্যে চলতো মাদক ব্যবসা। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী অভিযান চালিয়ে মাঠ পর্যায়ের কিছু মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার ও মাদক উদ্ধার করলেও রাঘোব বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায় নিয়ন্ত্রণ হচ্ছিল না এই বস্তির মাদক ব্যবসা। বিষয়টি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সমন্বয় সভায় বারংবার উত্থাপিত হয়। বস্তিটি সড়ক ও জনপথের জায়গায় গড়ে উঠায় তা উচ্ছেদের পরামর্শ দেয় জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।

 

এতে সম্মতি জানায় জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ এবং প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ অন্যান্য কর্মকর্তারাও। অবশেষে গত ২৮ জুলাই সন্ধ্যা থেকে জেলা পুলিশের সহযোগিতায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ চাঁনমারী বস্তিটি উচ্ছেদ শুরু করেন। জানা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ছয় লেনের কাজ চলমান। এর ফলে লিংক রোডের দুই পাশেই সড়ক ও জনপথের জায়গায় গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ শুরু হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে চাঁনমারির গোটা বস্তি উচ্ছেদের প্রস্তাব দেয় জেলা প্রশাসন। রোজার ঈদের পরপরই বস্তিটি উচ্ছেদের কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে সেই কার্যক্রম যথা সময়ে সম্পন্ন হচ্ছিল না। তা নিয়ে দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এক পর্যায়ে গত পরশুদিন থেকে চানমারির বস্তি উচ্ছেদ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এই কাজে তাদের সহযোগিতা করেন জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসন।

 

এদিকে, চানমারি বস্তি উচ্ছেদ হলেও বস্তিতে যারা মাদক বিক্রি করত, তারা এখন আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে তাদের মাদক ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। ইতিমধ্যেই উত্তর চাষাঢ়া এবং চানমারি এলাকার সাধারণ বাসিন্দারা মিছিল করেন। তাদের দাবি, বস্তিতে উচ্ছেদ হওয়া মাদক কারকারিদের যেন বাসা ভাড়া দেয়া না হয়। এলাকাবাসীর শঙ্কা- এই মাদক কারবারিরা অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়ে আবারও তাদের মাদক ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে।

 

অবশ্য এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে কোনো মাদকের স্পট, মাদকের আস্তানা কিংবা মাদক বিক্রেতার স্থান হবে না। কেউ মাদক নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তা করে থাকলে এখনিই সচেতন হউন। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাঁদমারী বস্তি উচ্ছেদ কার্যক্রম শেষ করে সাংবাদিকের একথা জানান তিনি। এসপি বলেন, এই চাঁদমারী বস্তি ছিল মাদকের স্পট। এখানে মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলতো। মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার, সাঁজা দেয়া, বন্দুকযুদ্ধের মত ঘটনাও এখানে ঘটে। মাদক বিক্রেতারা এই এলাকাটিকে বেছে নিয়েছিল মাদকের হাট হিসেবে।

 

প্রায় ২০০ শতাংশ জমিতে এখানে ছিল অবৈধ স্থাপনা। আমরা এটিকে উচ্ছেদ করেছি এবং সড়ক ও জনপদকে বলেছি তাদের জমিতে যেন দ্রুত তারা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন। যেন কেউ আর এখানে অবৈধ স্থাপনা করতে না পারে। জানা যায়, চানমারি বস্তি এলাকার  ২০০ শতাংশ জমির দাম প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। এই জমিটি প্রভাবশালীরা দীর্ঘদিন দখলে রেখে এখানে মাদক বিক্রেতাদের রেখে তাদেরকে দিয়ে মাদক ব্যবসা করাতেন। এখন এটি উচ্ছেদ হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন নগরবাসী। সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়টি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড সংলগ্ন চাঁনমারি বস্তির পাশে অবস্থিত। একই স্থানে রয়েছে আদালত পাড়া ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়।

 

অথচ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আদালত পাড়া ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ের পাশে চাঁনমারী বস্তিতে দীর্ঘদিন চলেছে মাদক কেনা-বেচা। কয়েক দশক ধরে এই চাঁনমারি বস্তিই মাদক ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচালিত হচ্ছিলো। এরপরও অদৃশ্য কারণে চাঁনমারিতে মাদক ব্যবসার মূল উৎপাটন করা যাচ্ছিল না। এবার লিংক রোড ছয় লেনে উন্নিত হওয়ার কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে এবং জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের প্রচেষ্টায় সেই মাদকের হাট তথা চাঁনমারি বস্তি উচ্ছেদ করা হলো।    

এই বিভাগের আরো খবর