বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১

অস্থিরতা ঠেকাতে প্রস্তুত ইসলামী দলগুলো

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২৪  

 ক্ষমতাচ্যুত সরকার পতনের পর থেকেই নানা দাবী নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ রাজপথে নেমে মিছিল করছেন। সেই সাথে বিভিন্ন দাবী আদায়ের নামে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে অস্থিশিল করে তুলছে একটিগোষ্টি। সসম্প্রতি সম্প্রতি ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে সারাদেশে অস্থিরতা তৈরী হয়। তার প্রভাব নারায়ণগঞ্জেও পড়েছে। অন্যান্য জায়গার ন্যায়  ২৬ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিপরীতে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ইসলামী দলগুলোও মাঠে নেমেছে। সেই সাথে তারাও মাঠে নেমে হুঙ্কার দিয়ে বলছে ইসকনের কাধে ভর করে একটি গোষ্টি দেশে দাঙ্গা তৈরী করার জন্য নানা ভাবে পায়তারা করছে, আর প্রতিহত করার জন্য এই দেশের জনতাকে নিয়ে তারা প্রস্তুত রয়েছে। যদিও ইসকন নেতা গ্রেপ্তার ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ হয়েছে নারায়গঞ্জে।


তার মাঝে ২৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর হেফাজতে ইসলাম আয়োজনে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র দাঙ্গা হাঙ্গামা  সৃষ্টির অপচেষ্টা ও এড. সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সভা করেন। এই সভায় হেফাজতে ইসলামের নেতারা যে কোন অস্থিতিশিলকে প্রতিহত করতে হুঙ্কার প্রদান করেন।


এই সভায় বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় সহ প্রচার সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তারা বিভিন্ন ভাবে স্লোগান দিয়ে দেশে অস্থিতিশিল তৈরী করতে চাচ্ছে। এই রাষ্ট্র ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে তাদের কর্মকান্ডের  কারণে। ইসকনের কাধে ভর করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় একটি গোষ্টি। তাদের হুশিয়ারি করে বলতে চাই, তোমরা বাঙালি মানুষের চিন্তাভাবনা জানো না। ১৯৭১ সালে রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। আবার দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে পিঠের চামড়া থাকবো না। আমাদের ল্যাং মেড়ে মাঠে নামাতে চাচ্ছে দেশে দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। আমাদের বোকা ভাবলে চলবো না। রাষ্ট্র আমরা স্বাধীন করেছি আমরাই সংস্কার করে আমরাই কাঠামো তৈরি করে সুশৃঙ্খল ভাবে পরিচালনা করে দেখাবো। তোমারা ১৫/১৭ বছর লুটপাট করে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছো। রাষ্ট্রকে পুনরুদ্ধার করে পরিচালনা করে দেখিয়ে দিবো।


ইসলামী আন্দোলনের মহানগর সাবেক সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন ইস্যু তৈরী করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরীর চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের উপর সম্রাজ্যবাদী শকুনের প্রখর দৃষ্টি পড়েছে। এই চিন্ময় একজন উগ্রবাদী। তিনি হিন্দু ধর্মের কোন প্রতিনিধিত্ব করেন না। দেশের যে কোন অস্থিতিশিল করতে চাইলে আমরা তা প্রতিহত করার জন্য আবার রাজপথে নামতে প্রস্তুত রয়েছি। সেই সাথে দেশবিরোধি সকল ষরযন্ত্রকে প্রতিহত করবো।


তাছাড়া এড. আলিফ হত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, চিন্ময়ের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা হয়েছে। বাংলাদেশের বিচারবিভাগ স্বাধীন। তার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে, সেই মামলায় জামিনের আবেদন করায় তা মঞ্জুর হয়নি। রাষ্ট্র পক্ষের শুনানি করার কারণে সাইফুল ইসলাম আলিফকে জবাই করে নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়েছে। আইনজীবীদের কোন দল নাই, মত নাই। তারা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়। আমরা বলে দিতে চাই, এই দেশে আমরা হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌধ, মুসলিম বাস করি। আমরা সবাই ভাই, এদেশের নাগরিক। একে অপরের উপর কাঁধে কাঁধ রেখে জীবন যাপন করবো। এই দেশকে গড়ে তুলবো। ২৯ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর খেলাফত মজলিস দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র দাঙ্গা হাঙ্গামা  সৃষ্টির অপচেষ্টা ও এড. সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সভা করেন। দেশ বিরোধী চক্রান্ত রুখে দেয়ার জন্য তারা যে কোন সময় মাঠে নামতে প্রস্তুত।


খেলাফত মজলিসের নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তি স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র চলছে। ধর্মীয় সংগঠনের আবরণে ইসকন দেশে উগ্র হিন্দুত্ববাদ ছড়াচ্ছে। এদের উগ্র আস্ফালনে প্রাণ হারাতে হলো এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে। চট্টগ্রাম আদালত চত্ত্বরে এই গোষ্ঠী সেদিন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। মসজিদের মুসল্লী সহ নিরীহ পথচারীদের উপর হামলা করেছিল। উক্ত ঘটনার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে খুনীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। শহীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং হতাহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি। যে সংগঠন এই ধরণের অপকর্ম বারবার করছে তার ব্যাপারে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের যে কোন ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে দেশবাসীকে সচেতন থাকার ও ধৈর্য্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানাচ্ছি।


খেলাফত মজলিস নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ষড়যন্ত্র বন্ধে ফ্যাসিস্ট ও খুনী হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। অভিযুক্ত ইস্কন নেতাকে মদদ দান সহ বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বাংলাদেশের মাটিতে কোন উগ্রবাদী ও রাষ্ট্রদ্রোহী সংগঠনের অপতৎপরতা চলতে দেয়া হবে না। ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে।


গতকাল জুমার নামাজের পর নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়কের ডিআইটি মসজিদের প্রধান গেটের সামনে এক সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা আব্দুল আউয়াল।


আব্দুল আউয়াল বলেন, "ইসকন একটি উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠন। তাদের কার্যক্রম দেশকে অশান্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, ইসকনকে নিষিদ্ধ করা হোক। অন্যথায়, দেশের জনগণ নিজেদের হাতে আইন তুলে নিতে বাধ্য হবে।"


তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইসকনের কারণে সম্প্রতি হেফাজতের এক সদস্য সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হয়েছেন। দ্রুত এই ঘটনার তদন্ত ও সুবিচারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "মুসলিম জাতি মৃত্যুকে ভয় করে না। তারা নিজেদের ইমান ও ইসলামের পক্ষে দাঁড়াবে।"


আব্দুল আউয়াল দাবি করেন, দেশের স্বাধীনতার সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির রক্ষায় হেফাজতের সদস্যরা ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বলেন, "আমরা মন্দিরে গিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। তবে এখন ইসকন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে দেশের পরিবেশ অশান্ত করছে।" তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, "আপনারা আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ পরিচালনায় সহযোগিতা করুন।"
এর আগে ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে। এসময় সনাতনী জাগরণ জোটের নেতারা বলেন, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দোসরাসহ প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা ও হিন্দু বিদ্বেষী মনোভাব সম্পন্ন কিছু চক্র বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি দেশ ও আন্তর্জাতিকভাবে নষ্ট করতে শ্রীমান চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে। গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম যাওয়ার সময়সময় ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে শ্রীমান চিনময় দাস ব্রহ্মচারী প্রভুকে গ্রেফতার করে ডিবি অফিসে নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়। তার মুক্তির দাবিতে ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনকারীদের উপর একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তী সহ কিছু আন্দোলনকারীদের উপর আচমকা অতর্কিত বর্বরোচিত হামলা পরিচালনা করে তাদের মাথা ফাটিয়ে দেয়। তাই অন্তর্র্বতী সরকার সহ রাষ্ট্রের নাগরিকদের সুরক্ষা করা প্রতিটা সরকারের পবিত্র দায়িত্ব।
 

এই বিভাগের আরো খবর