দিকে দিকে আজ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জয়ধ্বনি। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় উর্দ্ধগতির কারণে বিপাকে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। যার কারণে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর বেঁচে থাকা যেন দায়। বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তারা আজ কিনতে পারছেন না অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির কারণে।
এমন অবস্থায় তারা আজ প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না। বলা হয়ে থাকে প্রোটিনের সব থেকে সস্তা উৎস ব্রয়লার মুরগি। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দফায় দফায় বেড়েই চলেছে এই ব্রয়লার মুরগির দাম। যার সর্বশেষ বাজার মূল্য কেজিপ্রতি আড়াইশো টাকা। কিন্তু এই আড়াইশো টাকা মূল্য তালিকা বেশিরভাগ সময়ে নারায়ণগঞ্জ শহরেই সীমাবদ্ধ থাকে।
শহরের বাইরের বিভিন্ন ব্রয়লার মুরগির বিক্রেতারা এই দামে মুরগি বিক্রি করে না। তাদেরকে এই দামের বাইরে নিজেদের ইচ্ছেমতো দামে মুরগি বিক্রি করতে দেখা যায়। যার কারণে সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে মুরগি কিনতে হয়।
প্রশাসনের তদারকি মাঝে মাঝে শহরেই বিদ্যমান থাকে বিধায় শহরে দোকানিরা মূল্য তালিকা দিয়ে মুরগী বিক্রি করে থাকেন কিন্তু শহরের বাইরে প্রশাসনের তৎপরতা বেশি না থাকায় শহরের বাইরের দোকানিরা নিজেদের ইচ্ছে মতন ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন। এদিকে গরু, খাসি সহ প্রোটিনের সস্তা উৎস খ্যাত ব্রয়লার মুরগির অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির কারণে নিম্নের মানুষ ঝুঁকছেন মুরগির গিলা, কলিজা, গলা,পা আর মাথার উপর।
নারায়ণগঞ্জ শহরের দিগু বাবুর বাজার সহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে মুরগির গিলা কলিজা গলা পা আর মাথার চাহিদা বেড়েছে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এই চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে কারণ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ শহরের দিগু বাবু বাজারের এক গলা কলিজা বিক্রেতা জানান, ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে তাই মানুষ এখন মুরগির গলা আর কলিজার দিকেই ঝুঁকছেন।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ২ মাসের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। একই দোকানে মুরগির গলা কলিজা আর পা কিনতে এসেছেন শিল্পাঞ্চল বিসিকের পোশাক কর্মী নাজমা বেগম।
তার সাথে কথা হলে তিনি যুগের চিন্তা কে জানান একটা সময় ছিল যখন ব্রয়লার মুরগী মানুষ কিনতে চাইতো না ব্রয়লার মুরগির নাম শুনলেই মানুষ না ছিটকাতেন আর এখন সেই ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ২৬০ টাকা। তিনি বলেন দুই মাস আগেও যে ব্রয়লার মুরগী কিনেছি ১৮০ টাকা করে আজ সেই মুরগি ২৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
তিন আক্ষেপ করে বলেন যেভাবে মাছ মাংসের দাম বাড়ছে তারপর এই সাদা ব্রয়লার মুরগির দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে আর আমাদের মাংস খাওয়া সামনে আর হবে না। আমরা মনে হচ্ছে আর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারবো না। একই দোকানে মুরগির পা কিনতে এসেছেন নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ এলাকার মোঃ রাকিব।
তিনি যুগের চিন্তা কে জানান যেভাবে দফায় দফায় ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ছে তাতে আর আমাদের কপালে এই মুরগি জুটবে না। আর গরুর মাংস এ যেন আসমানের চাঁদ বা সোনার হরিণের মতো। এটা আমাদের মত মানুষের জন্য নয়। প্রতিদিনের যা আয় তা দিয়ে চাল ডাল কিনব না তেল কিনব না সবজি কিনব ভেবে পাইনা।
তিনি বলেন আজ বাজারে গেলে দেখা যায় ১ কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় ৭৫০ টাকায় যা আমাদের মত গরিব মানুষের কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাইতো দিগবাবুর বাজারে এসেছি এক কেজি পা কেনার জন্য এটা দিয়েই আমিষের চাহিদা মেটাবো। এই দোকানের পাশে আর একজন দোকানে বিক্রি করেন মুরগির গলা আর কলিজা।
আর সেই দোকানেই মুরগির গলা কলিজা কিনতে এসেছেন শহরের জামতলার বাসিন্দা ইসমত আরা। তিনি বলেন সব শেষ যেদিন মুরগির গলা আর কলিজা মিলিয়ে এক কেজি নিয়েছিলাম দোকানে দাম রেখেছিলেন ১৫০ টাকা কিন্তু আজ কিনতে আসার পর শুনলাম ১৫০ টাকা দিন শেষ এখন নাকি ১৫০ টাকার মুরগির গলা আর কলিজা কিনতে হবে ১৮০ টাকা দিয়ে।
ইসমত আরা হয়যুগের চিন্তা কে বলেন, মুরগির গিলা কলিজার দাম তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ টাকা বেড়েছে। শেষে তিনি বলেন, দিনে দিনে সব কিছুর দাম বাড়ছে। বাড়ছে মাছের দাম, বাড়ছে মাংসের দাম। ভেবেছিলাম মুরগির এই গলা আর কলিজাই বুঝি সম্বল। কিন্তু এটার দামও সময়ের ব্যবধানে বেড়েই চলছে। তাহলে কি কপাল থেকে মুরগির গলা কলিজা উঠে যাবে ?
নারায়ণগঞ্জ শহরের দিগু বাবুর বাজারে যে কয়জন বিক্রেতা মুরগির গোলা আর কলিজা বিক্রি করেন তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় প্রতিদিন কি মুরগির গলা কলিজা বিক্রি হয় আর বিক্রি বা কেমন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা যুগের চিন্তা কে জানান একটা সময় ছিল যখন মানুষ মুরগির গলা কলিজা পা কিংবা মাথা কিন্তু না আর যারা কিন্তু তারা পোষা প্রাণীর জন্য নিয়ে যেত বিশেষ করে কুকুরের জন্য।
আর এখন গরুর মাংস সহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে ব্রয়লার মুরগিরও দাম বেড়ে গেছে আজ বাজারে সব ধরনের বয়লার মুরগির দাম বাড়তি সাদা ব্রয়লার মুরগির দাম এখন ২৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে তাই সাধারণ মানুষ এত দামি কিনতে পারছেন না বিধায় আমাদের দোকান থেকে তারা মুরগির গিলা কলিজা কিনছেন।
বাড়তি দামের ব্যাপারে দোকানিরা জানান, চাহিদা বাড়লে তো দাম বাড়বেই আর তাছাড়া আগের দামের থেকে এখন মুরগির গলা, কলিজা আর পা এখন আমাদেরকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছি। আর আমরা তো বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে পারি না। এন.হুসেইন/জেসি