রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি ধার-দেনায়ও চলছে না সংসার  

নুরুন নাহার নিরু

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩  


পেট ভরে দুমুঠো ভাত খাওয়া এখন সাধ্যের বাহিরে চলে গেছে নিম্ন ও মধ্য শ্রেণির মানুষের। মানুষ কষ্টে রয়েছে তবে কাউকে বলতে পারছে না। সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। মানুষের আয় বাড়েনি তবে ব্যয় বেড়েছে। আবার অনেকে চাকরি হারিয়ে নতুন কাজের সন্ধানে রয়েছে। এ সময়টা চলছে সেই মহামারি করোনা থেকেই।

 

 

টানাটানি করেও সংসার চালানো দায় হয়ে পরেছে। জীবন-জীবিকা নিবার্হে বর্তমানে মানুষ সীমাহীন পরিস্থিতিতে রয়েছে। পেটের দায়ে অনেকেই আপন ভীটা-মাটি ছেড়ে পারি জমিয়ে ছিলো নারায়ণগঞ্জে। করোনা চলাকালীন লকডাউনের কারনে টানা তিন মাস সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ থাকার কারণে  প্রায় অধিকাংশ মানুষ জমানো কিছু সঞ্চয় নিয়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলো।

 

 

ঘরবন্দি থাকার কারনে সঞ্চয় শেষ হলে মানুষ নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজন থেকে দার করে চলেছিলো। পরবর্তীতে লোকডাউন শেষে সকলে নিজ নিজ পেশায় ফিরলেও স্বাভাবিক জীবন তারা ফিরে পাননি।

 


 জানা যায়, বর্তমান বাজারে মানুষের চার ভাগের তিন ভাগ আয় চলে যাচ্ছে বাড়ি ভাড়া, চাল ও খাদ্যপণ্য কিনতে। অন্যদিকে মাছ-মাংস এবং অন্যান্য খরচ চালাতে নির্দিষ্ট আয়ের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সংসারের ভার সামলাতে সামলাতে কীঠন বাস্তবতার মুখে পরছে সাধারণ মানুষরা।

 

 

যারা ব্যবসায়া করেন তারা বলছেন, আগের মসতো এখন আর বেচা-কিনা নাই। যারা দিনমুজুর তারা অনেকেই কাজ হারিয়ে হয়তো কেউ বেকার আবার হয়তো কেউ বিকল্প কিছু খুজে নিয়েছেন।  

 


কয়েকদিন পর পর কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা  সিন্ডিকেট করে আমদানি নেই বলে নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসের বাড়তি দাম বিক্রি করে। এতে সাধারণ নিম্ন শ্রেণির মানুষের ভোগান্তি বৃদ্ধি করে। বার বার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এসব সিন্ডিকেট কারসাজির কথা তুলে ধরার পরও কতৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেয় নি। প্রায় কিছুদিন আগেও কাচা মরিচের সবোর্চ্চ দাম হয়েছিলো প্রায় ৭০০ টাকা উপরে।

 

 

তখন খাদ্য অধিদপ্তর থেকে বাজার মনিটর করার পরও কয়েক ঘন্টার জন্য দাম কমিয়ে বিক্রি করলেও । মনিটর শেষে বাজার তার আগের দামেই ফিওে যায়। বর্তমানে এখন শুধু পেয়াজই নয় কাচা সবজি এবং সাধাণর আমিষের ঘাটতি পূরণের জন্য যা সবচেয়ে বেশি ভূমিকায় রয়েছে।

 

 

সেই ডিমের দামও প্রায় ৬০ টাকা হালি। এসব সিন্ডিরেকটের তৎপরতা বার বার বন্ধ করার কথা বলা হলেও কার্যকর কিছুই হচ্ছে না। যার ফলে লূটে নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা।  

 


কবির নামে এক দিনমুজুর বলেন, আমার আয়ে আমার পরিকবারের ৭ জন সদস্যের পরিবার চলে। করোনা কালীন যে কষ্টে দিন কাটিয়েছি সেসব ভাবলেও দীর্ঘ নিঃস্বাশ ছাড়ি। গ্রামে যাবো তারও উপায় ছিলো না। গ্রামের মানুষরা করোনার ভয়ে বাহিরের কাউকে মহল্লাতে থাকতে দিবে না। কষ্ট করে শহরেই থেকে গিয়েছি।

 

 

কারো কাছ থেকে একটা সাহায্য পর্যন্ত পায়নি। বর্তমানে যে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি আমার মনে হচ্ছে এ দেশে না খেয়ে মানুষ মারা যাবে। বাজারে গেলে মাথায় হাত পরে যায়। যেসব সবজি ২০-৩০ টাকা দাম ছিলো। সেই সবজি এখন ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়। অন্যদিকে মাছ-মাংসের বাজারে তো আমাদের মতো নিম্ন শ্রেণির মানুষরা যেতেই ভয় পায়।

 

 

দেশের এমন পরিস্থিতি কি সরকার জানে না? সে সব জানে কিন্তু কিছু করবো না। মানুষ না খেয়ে মারা যাবে তখন তার শুধু সমবেদনা দেখানো ছারা আর কিছুই করার থাকবে না।  

 


সড়কের পাশে পিঠা বিক্রেতা নাজমা বেগম বলেন, মাসেক আগে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাসে ১ হাজার টাকা করে সুদে ১০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম। প্রতিদিন এলাকাতে পিঠা বিক্রি করে যা টাকা আসতো  তা দিয়ে সুদটা চালিয়ে নিচ্ছিলাম। এছাড়া সংসার খরচ, ছেলে মেয়ের পড়াশোনা অন্যান্য বাকি সব কষ্ট কওে হলেও চালিয়েছি।

 

 

কিন্তু বর্তমানে সবকিছুরই দাম বেশি তাই সামান্য পিঠা বিক্রি করে সংসারের খরচ চালাতেই হিমশিন খাচ্ছি। সুদের টাকা দিবো কীভাবে। এ কারনে প্রতিদিনই সেই লোক এসে নানা ধরনের কথা শুনিয়ে দিয়ে যায়। কতো দিন এভাবে চলবো আল্লাহই বলতে পারেন।              

 


বাজার ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে সব কিছুর দাম বেশি কারন আমদানি কমে গেছে। অন্যদিকে বৃষ্টি হওয়ার কারনে গত বছরের তুলনায় এবছর সবজির দাম বেশি। ক্রেতারা বলছেন, বাজারে এলে সবজির দাম শুনে চোখে ধোঁয়াশা দেখি। যেকোনো পণ্যে দাম বাড়তে এখন কোনো যৌক্তিকতার প্রয়োজন হয় না।   এন.হুসেইন রনী /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর