মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩১

এই নির্বাচনে কেন এত দ্বন্দ্ব

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২৪  


# সভাপতি মোহসীন ভূইয়া কাউন্সিলর নির্বাচনে রুহুলের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন
# স্ট্যান্ডের গাড়ি থেকে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ
# সংগঠনের উছিলায় এখানে মোহসীনের একক আধিপত্য ছিল
 
সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকার চৌধুরী বাড়ি ব্যবসায়ী এসোসিয়েশন এর নির্বাচন-২০২৪ নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে নির্বাচন হওয়া ও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে তৈরি হওয়া দুটি পক্ষের মধ্যে একটি পক্ষে আছেন এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোহসীন ভূইয়া এবং তার বিপরীত পক্ষে আছেন এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহসীন। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই দ্বন্দ্বে চলে এসেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা ও ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকনের নাম। যদিও এই সংগঠনের বর্তমান কার্যক্রম কিংবা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সাথে কাউন্সিলর খোকনের নাম প্রকাশ্যে তেমন একটা না আসলেও এর পেছন থেকে তিনি ইন্ধন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন নাসিকের ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা। তাছাড়া নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রথম থেকেই কাউন্সিলর রুহল আমিনকে একটি পক্ষের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। একটি দোকান ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে এত দ্বন্দ্ব, পাল্টাপাল্টি মারামারি, পক্ষ বিপক্ষ সৃষ্টি হওয়া একই সাথে স্থানীয় কাউন্সলরদেরও এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে শুধু ব্যবসায়ীদের মধ্যেই নয়, আলোচনা ও বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহলে। সচেতন মহলসহ স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনও বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে বলে এখানকার ব্যবসায়ীদের সূত্র থেকে জানা গেছে। তাই এই নির্বাচনের গুরুত্ব, নেতৃত্ব হাতে পেলে এমন কি-ই-বা অর্জন হতে পারে কিংবা নেতৃত্ব ছুটে গেলে এমন কি ক্ষতি হতে পারে এসব বিষয় নিয়ে এখন স্থানীয়দের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
 
এই নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্ব ও মারামারি তৈরি হওয়াসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে স্থানীয়রা জানায়, এখানে যারা নেতৃত্বে থাকে এই এলাকাটা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। চৌধূরীবাড়ি স্ট্যান্ড থেকে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজিসহ এখানে অবস্থিত আরকে টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানে তারা আধিপত্য বিস্তার করে বলেও জানান তারা। বিগত সময়ে এই সংগঠনের উছিলায় চৌধূরীবাড়িসহ আশেপাশের এলাকার আধিপত্য কমিটির নেতৃত্বের দখলে ছিল। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও এই সংগঠনের কারণে এখানে প্রভাব বিস্তারের কোন সুযোগ পাননি। তাছাড়া বিগত নির্বাচনগুলোতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে লড়াই করেছেন চৌধুরী বাড়ি ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের সদ্য সাবেক সভাপতি মোহসীন ভূইয়া। স্থানীয়রা জানান, মোহসীন ভূইয়া একদিকে কাউন্সিলরের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী, অন্যদিকে এখানকার ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা হওয়ায় মোহসীনের কারণে এখানকার স্ট্যান্ডসহ ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে প্রভাব বিস্তারের কোন সুযোগ পাইতেছিলেন না রুহুল আমিন। কোন প্রকার ইজারা ছাড়াই এই স্ট্যান্ডের বিভিন্ন যানবাহন থেকে প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকার চাঁদাবাজির একটি সুযোগেরও বিষয়ও আছে। তাই এবার যখন ব্যবাসায়ীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয় এবং ব্যবসায়ীদের অনেকেই সভাপতি হিসেবে মোহসীনকে অপছন্দ করতে শুরু করেন, ঠিক সে সুগোগটি-ই কাজে লাগাতে মোহসীনের এন্টি পক্ষের সাথে হাত মিলিয়েছেন নাসিকের ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা।
 
তবে এই বিষয়টিতে নিজের কোন প্রকার হাত নেই বলে দাবি করেন নাসিক ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকন। তিনি বলেন, আমি এই এসোসিয়েশনের নির্বাচনের বর্তমান কার্যকলাপে কোন প্রকার ভূমিকা রাখিনি। বেশ কিছুদিন আগে যখন আমার কাছে বিষয়টি জানানো হয় তখন আমি দুই পক্ষকে একসঙ্গে করে অর্থাৎ সাবেক সভাপতি মোহসীন ও আহবায়ক কমিটির পক্ষ হতে সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করে নির্বাচন দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। তাতে যে-ই নির্বচিত হতো তাকেই যেন মেনে নেওয়া হয়, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। তাই বিষয়টি নিয়ে আর আমি এগোইনি।
 
ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা যায় চৌধুরী বাড়ি বাস স্ট্যান্ড এলাকার এই ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১২ সালে। সে সময় সভাপতি পদে নির্বাচিত হন মোহসীন ভূইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন কাজী মোহসীন। ব্যবসায়ীরা জানান এর কিছু দিন পর থেকেই সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তাছাড়া আগের সভাপতি ব্যবসায়ীদের কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেননি বলেও অভিযোগ করেন তারা। উপরন্তু ব্যবসায়ীদের কোন নতুন দোকান নেওয়াসহ বিভিন্ন উসিলায় তাদের কাছ থেকেও চাঁদা নেওয়া হতো বলেও দাবি করেন তারা।

এই বিভাগের আরো খবর