রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

এক বছরে পাঠ্যবই তিনবার কিনিয়েছেন শিক্ষকরা

আরিফ হোসেন:  

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২৪  

# আমরা কাউকে পাঠ্যবই কিনতে বাধ্য করিনি, শিক্ষার্থীরাই কিনেছে : ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক
# অভিযোগটি গুরুত্বের সাথে দেখছি, যে শিক্ষকই করুক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে : ইউএনও সদর

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুরে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাদের লিস্ট দেওয়া গাইড বই কিনতে বাধ্য করছে শিক্ষার্থীদের। জানা গেছে, পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এর আগে তারা প্রশ্ন পত্রের শিট দেয় যেই শিটের সাথে লেকচার গাইডের উত্তর পত্রের সাথে মিলে যা আগে থেকে শিক্ষকদের প্লান মোতাবেক হয়েছে। তবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী আগে থেকেই গাইড বই যে যার মতো কিনে ফেলেছে তাই তারা নতুন করে আর গাইড বই তাদের কাছ থেকে কিনবেনা এমনটি জানায় তবে বেশ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের গাইড বই কেনার জন্য বাধ্য করছে। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার গাইড বই কেনার সামর্থ বেশিরভাগ পরিবারেরই নেই। শিক্ষার্থীদের পরিবাবের সদস্যরা অনেকেই অভিযোগ করেছে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয় আর্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্যই মূলত এই কাজটি করতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছে।

 

বেশ কিছুদিন যাবৎ এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই  ব্যপক ভাবে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে অনলাইন মিডিয়াতেও এটি নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেছে। দেখা গেছে পাগলা  উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, সামাজিক ব্যক্তিত্ব জাহের মোল্লা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোষ্ট করে আর সে তার পোস্টটিতে লেখেন, আমার মেয়ে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে অধ্যয়নরত প্রথম অনুপম কোম্পানীর গাইড পাঠ্য করে এর কিছুদিন সংসদ বই পাঠ্য করে দেয় আবার ছলছাতুরির আশ্রয় নিয়ে লেকচার গাইড কিনতে বাধ্য করে।

 

আমার কথা হতো আমার তেমনটা সমস্যা না হলেও আমাদের এলাকার বেশিরভাগ অভিভাবক নিম্ন ও মধ্যবিত্ত তাদের জন্য তিন থেকে চারশ টাকা দিয়ে প্রতিটি গাইড কেনা অনেক কষ্টের হয়ে যায়।তারপরও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে এবং সম্মানিত শিক্ষকদের চাপের কারনে কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এখানে বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের প্রশ্ন কার সার্থে সরকারি নিষেদ থাকা সত্বেও এই নিষিদ্ধ গাইড শিক্ষকরা পাঠ্য করলেন। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বের করে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচার করতে হবে তাই ইউএনও মহাদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

 

এ বিষয়ে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সাইফ উদ্দিন শাহিন তার বক্তব্যে বলেন, আসলে আমার মেয়েও পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে, প্রথমে আমার মেয়ে অনুপম গাইড ক্রয় করে তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনুপম গাইড বাদ দিয়ে লেকচার বই কিনতে বলে। আসলে দুইবার করে গাইন বই কেনো কেনা লাগছে এটা আমার কাছে বোধগম্য নয়। যেহেতু আমাদের এই এলাকাতে বেশির ভাগ নিম্ন বিত্ত লোক বসবাস করে সেই ক্ষেত্রে তাদের পক্ষে দুইবার গাইড বই কেনা সম্ভব নয় বিষয়টি আমার কাছে দুঃখজনক মনে হচ্ছে।

 

এ বিষয়ে জানতে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের  সেলিনা  জানান, আমরা কাউকে পাঠ্য কিনতে বলিনাই, শিক্ষার্থীরাই যে যার মতো করে পাট্য কিনছে। তবে তাদের কিনতে কোন শিক্ষক পরামর্শ দিচ্ছে জানিনা। এমনও হতে পারে শিক্ষার্থীরা যে সকল শিক্ষকদের কাছে কোচিং করতে যায় তাদের পরামর্শে কিনতে পারে। এ বিষয়টি আমিও কিছুটা শুনেছি এই আজ এ বিষয় নিয়ে আমরা একটা মিটিং ও করেছি।

 

এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, আমি এই বিষয় এখনো জানিনা। যদি শিক্ষার্থীদের সাথে এমনটি হয়ে থাকে সেটা অবশ্যই দু:খজনক। আমি এই বিষয়টি নিয়ে এখনি খোজ নিচ্ছি। যদি এই কোন শিক্ষক জরিত থাকে তাহলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষ ব্যস্থা নেওয়া হবে।

 

আরও জানা গেছে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে কোন কমিটি না থাকার কারনে বিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষক মিলে গ্রুপিং তৈরী করে নিজেদের জাহির করার চেষ্টা চােিয় যাচ্ছে।

 

আরও জানা যায়, পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্টজন ছিলেন তাই মেয়াদ শেষ হলেও তিনি ক্ষমতার পাওয়ার দেখিয়ে বছরের পর বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন অবস্থায় বিভিন্ন  অনিয়ম সহ নানান কারনে আলোচনা সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়েছে। তবে ছাত্র জনতার গণঅভ্যূত্থানের পরপরই পাগলা উচ্চ দিব্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যায়। তবে তার চলে যাওয়াতে তার যায়গাতে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে এখন দায়িত্ব পালন মোসাম্মৎ সেলিনা কিন্ত কয়েকমাস যেতে না যেতেই তিনিও বিভিন্ন অনিয়মে জরিয়ে পরার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।