রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৮ ১৪৩১

‘এসিপিবি’তে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন নারায়ণগঞ্জের রুমি

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

যুগের চিন্তা ২৪ : আগামী ২৫ অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য এ্যাসোসিয়েশন অফ চেস প্লেয়ারস বাংলাদেশ (এসিপিবি) নির্বাচনে লড়ছেন নারায়ণগঞ্জের ছেলে মোহাম্মদ নাজমুল হাসান (রুমি)। তিনি এনায়েত-আসাদ-রুমি পরিষদে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন।

 

মোহাম্মদ নাজমুল হাসান (রুমি) ‘নাহার চেস একাডেমী’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও দাবা প্রশিক্ষক। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার দাবা ঊপ-কমিটির সদস্য সচিব, ২০১৭ থেকে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক, ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতারের উপস্থাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

তিনি প্রথম ১৯৯৯ সালে নারায়ণগঞ্জের বিবি মরিয়ম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা দাবা খেলোয়াড় সমিতির আয়োজনে ও মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতায় ৩ মাস ব্যাপী একটি দাবা কর্মশালার দাবা প্রশিক্ষক হিসাবে যোগ দেন।

 

পরবর্তীতে রুমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে টানা ১০ বছর বিনা পারিশ্রমিকে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের দাবা শেখান। যেখান থেকে বেরিয়ে আসে আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার শামীমা আক্তার লিজা, মহিলা ফিদে মাস্টার শারমিন সুলতানা শিরিন ও জাতীয় মহিলা দাবাড়ু কিশোয়ারা সাজরিন ইভানারা প্রমুখ।

 

পড়াশুনায় এমবিএ করা রুমি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে কর্মকর্তা হিসাবে চাকরির সুবাদে ২০০৫ সালে বগুড়ায় পাড়ি জমান। কিন্তু দাবার টানে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবারে নাঃগঞ্জ এসে দাবা খেলা শেখাতে থাকেন। পাশাপাশি ২০০৭ সালে বগুড়ায় গড়ে তোলেন মা নুরুন নাহার খানম এর নামে ‘নাহার চেস একাডেমী’।

 

বগুড়ার জলেশ্বরী তলায় রুম ভাড়া করে ছাত্রছাত্রীদের দাবা শেখান। আয়োজন করেন আন্তঃস্কুল দাবা প্রতিযোগিতা। এতে ২৫ স্কুলের মোট ৪০ জন ক্ষুদে দাবাড়ু অংশ নেয়। প্রতি মাসে আয়োজন করেন সান্ধ্যকালীন দাবা টুর্নামেন্ট। চলে দাবা প্রশিক্ষণও। সেখান থেকে তৈরি করেন জাতীয় মহিলা দাবাড়ু প্রতিভা তালুকদারকে।

 

২০০৮ সালে চাকরি ছেড়ে নারায়ণগঞ্জে ফিরে আসেন। এখানে পুরোদমে শুরু করেন নাহার চেস একাডেমীর কার্যক্রম। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ও অন্যান্য ছুটির দিনে চলে দাবা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। প্রতি দু’মাস অন্তর এবং বিভিন্ন দিবসে আয়োজন করেন দাবা প্রতিযোগিতা। 

 

যেখানে জেলার সিনিয়র খেলোয়াড়দের সাথে লড়াই করে এগিয়ে চলে একাডেমীর শিক্ষার্থীরা। এখান থেকে তৈরি হয় জাতীয় মহিলা দাবাড়ু জহুরাতুল জান্নাত জিসা, সুমাইয়া আক্তার, ফাতেমা-তুজ-জোহরা শ্রাবণী, মেহেরুননেসা হিলালী মুনীয়া ও মোসাঃ ঝরনা বেগম।

 

এরপর রুমি দায়িত্ব নেন আর একঝাঁক ক্ষুদে দাবাড়–র। যারা প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর টানা প্রশিক্ষণ নিয়ে হয়ে উঠে দেশসেরা, এশিয়া সেরা কিংবা ঢুকে পড়ে বয়স ভিত্তিক বিশ্ব রেঙ্কিং এ। এদের মধ্যে অন্যতম মনন রেজা নীড়। ২০১৭ সালে রুমির কাছে শেখা অবস্থায়ও নীড় জয় করে ৪টি আন্তর্জাতিক গোল্ড মেডেল, ২টি ব্রোঞ্জ মেডেলসহ অনেক ট্রফি। নীড় হয়ে উঠে দেশ সেরা তথা এশিয়ার সেরা, ঢুকে যায় বিশ্ব রেঙ্কিংএ এবং অর্জন করে ’ক্যান্ডিডেট মাস্টার’এর খেতাব।

 

নীড়ের পাশাপাশি এসময় রুমির প্রশিক্ষণে বেড়ে উঠে আরও অনেক জুনিয়র, সাব-জুনিয়র, মহিলা ও ক্ষুদে দাবাড়ু। এদের প্রত্যেকেই এখন আন্তর্জাতিক রেটেড দাবাড়ু। কেউ কেউ নিজের নামকেও বয়স ভিত্তিক কিংবা ওপেনে বেশ পরিচিত করে ফেলেছে। 

 

এরা হল- মো: মিনহাজুল আলম, মীর মঈনুল ইসলাম, সাদনান হাসান দিহান, মর্তুজা মাহাথির ইসলাম প্রথম,মর্তুজা মুহতাদি ইসলাম পূর্ণ, দিবাকর দিব্য, খুশি আক্তার,নাফিজা আক্তার, আমিনুল হাসান সুদিন, রায়হান ইসলাম, সামিন জাওয়াদ, ফাতেমা হাসান দিয়া, তানজিনা আক্তার চম্পা, আয়শা, সিমন আহমেদ, রুবেল হোসেন প্রমুখ।

 

দাবায় স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ থেকে মোহাম্মদ নাজমুল হাসান (রুমি) ২০১৬ সালে ‘দেশ সেরা দাবা সংগঠক’ এর পুরস্কার লাভ করেন। জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এর হাত থেকে তিনি এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। এছাড়া সেরা দাবা প্রশিক্ষক হিসাবে বিভিন্ন সংগঠন থেকে একাধিক পুরস্কার লাভ করেন।

 

নাজমুল হাসান রুমির প্রশিক্ষণে ১৯৯৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৬ জন আন্তর্জাতিক রেটেড প্লেয়ার ও ৮ জন জাতীয় মহিলা দাবাড়ু তৈরি হয়েছেন। এখনো প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছেন কিছু নতুন মুখকে।

 

তিনি মনে করেন, ‘দেশের দাবাড়ুরা অনেক সচেতন। তারা সৎ, শিক্ষিত, মার্জিত, দক্ষ ও দাবা অন্তঃপ্রাণ ব্যক্তিদের এবার নির্বাচিত করবেন। যোগ্য ব্যক্তিদের দাবা উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিবেন।’ তিনি সকলের নিকট দোয়াপ্রার্থী।
 

এই বিভাগের আরো খবর