সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের দখলে পপুলারের সামনের গলি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২২  

 

 

নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশে অবস্থিত পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের মোটরসাইকেল পার্কিং করে রাখার কারণে এবং এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসা রোগীদের লিফটের জন্য রাস্তার ফুটপাতে লম্বা লাইনের কারণে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে কেন্দ্র করে রাস্তার পাশে কয়েকটি দোকানের কারণে প্রতিনিয়ত সৃষ্ট যানজটের কারণে চরম ভোগান্তি পড়াচ্ছেন এই গলি দিয়ে চলাচলকারী পথচারীরা।

 

হাসপাতালের নিজস্ব গাড়ি পার্কিং এরিয়া না থাকায়, হাসপাতালে আগত রোগী এবং বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের বিভিন্ন রকমের যানবাহন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনের গলিতে রাখার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, আমাদের নিজস্ব গাড়ি পার্কিং এর জায়গা নাই। গাড়ি পার্কিং এর জায়গা না থাকার কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা তারা স্বীকার করে বলেন, এখানে যারা আসেন তারা তাদের নিজের গাড়ি বা মোটরসাইকেল বিভিন্ন রাস্তার পাশে রাখেন।

 

এখানকার সিকিউরিটি গার্ডের সাথে কথা বললে তারা বলেন, এখানে আসা ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা এবং রোগীরা তাদের গাড়ি এই গলির পাশে রাখেন অথবা বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশেও রাখেন। তিনি আরো বলেন, এখানে গাড়ি নিয়ে যে রোগী আসেন তারা গাড়ি রাখার জন্য পাশের বালুর মাঠ ভাষা সৈনিক সড়কের পাশে রাখেন। কিন্তু এভাবে বিভিন্ন রাস্তার পাশে মোটরসাইকেল বা প্রাইভেট কার রাখার কারণে রাস্তাগুলো দখল হচ্ছে ফলস্বরূপ সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। এতে হাসপাতালে আগত রোগীরা সহ সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

 

এখানকার বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীরা যানজটের কারণে সময় মতো যেতে পারছেন না ফলে তাদের বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। আসাদুল ইসলাম নামের একজন পথচারী বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু সড়কে এসেছিলাম একটা কাজে। কাজ সেরে ভাষাসৈনিক সড়কের একটি টাইলসের দোকানে যাব। তাড়াতাড়ি যাবার জন্য পপুলারের সামনের এই গলি ব্যবহার করি। কিন্তু ওষুধ কোম্পানির লোকজন এবং মোটরসাইকেল গুলো এমনভাবে জটলা করে রাস্তা বন্ধ করে রাখে যার কারণে যানজট সৃষ্টি হয় আর আমাদের সময়মতো গন্তব্যস্থলে যেতে সমস্যা হয়। যার কারণে আমরা অল্প সময়ে গন্তব্যস্থলে যেতে পারি না। জরুরি মুহূর্তে আমাদের চাষাড়া শহীদ মিনার দিয়ে ঘুরে আসতে হয়।

 

সিরাজুল ইসলাম নামের আরেকজন পথচারী বলেন, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসা রোগীরা লিফট ব্যবহার করে উপরের ঘরে যান। কিন্তু লিফটের সামনের দীর্ঘ সিরিয়াল রাস্তার পুরো ফুটপাথ দখল করে রাখে যার কারণে আমাদের চলাচল করতে অসুবিধা হয়।সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর সামনের এই গলিটি বিভিন্নভাবে দিনের বেশিরভাগ সময়ই সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দখল থাকে। যার কারণে এই গলি দিয়ে চলাচল করতে পথচারীদের সমস্যা করতে হয়। তিনি আরো বলেন, এই গলিতে বিড়ি-সিগারেট সহ পানের দোকান এবং বিস্কুট, চানাচুর ও রুটির ভ্রাম্যমান দোকান গড়ে উঠেছে। যার কারণে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।

 

পথচারী রিয়াজ বলেন, পপুলারের এই গলিতে বিভিন্ন অটো রিক্সা চালকরা যাত্রী ওঠা-নামার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন তারা বলেন, আমরা এখানে আসি সপ্তাহে তিন-চার দিন। আমাদের মোটরসাইকেলগুলো গলির পাশেই রাখি। মোটরসাইকেল রাখার কারণে পথচারীদের সমস্যার কথা তারা অস্বীকার করেছেন।

 

গিয়াসউদ্দিন নামের স্থানীয় একজন ব্যক্তি জানান, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর ডাক্তারদের সঙ্গে বিভিন্ন ডিল করেন। তারা এ গরীবের মোটরসাইকেল গুলো রাখার কারণে এখানে একটা জটলার সৃষ্টি হয় যার কারণে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, এই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের গাড়িগুলো তো এখানে রাখার কোন প্রয়োজন নেই। তারা নির্দিষ্ট স্থানে রাখুক অথবা পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ তাদের গাড়ি রাখার জন্য নির্দিষ্ট এরিয়া ঠিক করে দিক, তাহলে তো সকল সমস্যার সমাধান হচ্ছে। শেষে তিনি বলেন, এই সমস্যা দীর্ঘদিনের এর আগেও অনেকবার লেখালেখি হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায় কিন্তু কোন কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আর আমাদের দেশের প্রশাসন এমন, এসব দৃশ্য দেখার পরেও যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জের একজন অধ্যাপক জানান, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল তাদের কোন গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা নেই। যার কারণে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর সামনের গলিতেই বিভিন্ন ধরনের গাড়িগুলো রাখা হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। তিনি বলেন, এত বড় প্রতিষ্ঠানের গাড়ি পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট জায়গা নেই, এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, এভাবে অবৈধভাবে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি এবং এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসা রোগীদের বিভিন্ন গাড়ি রাখার কারণে সাধারণ মানুষের যে ভোগান্তি হচ্ছে এটা প্রশাসন কেন দেখছেনা। তারা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে। নাকি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের কোন টাকা পয়সা লেনদেন আছে। যার কারণে কর্তৃপক্ষ নিরবতা পালন করছে।

 

পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসা রোগী আসমা খাতুন বলেন, পপুলারে এসেছি ডাক্তার দেখানোর জন্য। কিন্তু পপুলারের সামনের গলি বিভিন্ন গাড়ির কারণে যানজট লেগে থাকার কারণে এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভিতরে যেতে অনেক সমস্যা হয়। যার কারণে অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। এখানে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা না থাকার কারণে অন্য জায়গায় গাড়ি রেখে আসতে হয়। এটা আমাদের গাড়ির জন্য অনেক ঝুঁকি রয়েছে। একদিকে রাস্তায় গাড়ি রাখলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় অন্যদিকে দূরে রাখলে গাড়ি হারানোর ভয় থাকে। গাড়ি হারিয়ে গেলে কি পপুলার কর্তৃপক্ষ গাড়ি কিনে দেবে।

 

ফতুল্লা থেকে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসা রোগী শিউলি বেগম জানান, মানুষ হাসপাতালে কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসে অসুস্থ হওয়ার পর। যাদের বেশিরভাগই সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠা সম্ভব হয় না। তাদের জন্য লিফটের সুবিধা রাখলে সবথেকে বেশি ভালো হয়। কিন্তু এই পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একটি মাত্র লিফট আছে, তাও আবার ধারণ ক্ষমতা কম সম্পন্ন। যার কারণে সিরিয়াল দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বেশিরভাগ সময় এই লাইন রাস্তার ফুটপাত পর্যন্ত গড়ায়। এই লাইনের কারণে সাধারণ মানুষের এবং পথচারীদের চলাচলের অসুবিধা হয়। আরো বলেন, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের উচিত খুব তাড়াতাড়ি এখানকার রোগীদের জন্য গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা করা এবং আরো একটি লিফটের ব্যবস্থা করা। যাতে রোগীদের এবং এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনের গলি দিয়ে যারা চলাচল করে তাদের ভোগান্তি কমে যায়।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জের একজন মানবাধিকার কর্মী জানান, মানুষ অসুস্থ হলে হাসপাতালে আসে। হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের উচিত রোগীরা যেন নির্বিঘ্নে আসা যাওয়া করতে পারে সে ব্যবস্থা করা। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব গাড়ি পার্কিং এরিয়া না রাখার কারণে এখানে আসা রোগীরা সহ এই গলি দিয়ে চলাচলকারী পথচারীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। পাশাপাশি এখানে আসা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের মোটরসাইকেল রাখার কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর