বৃহস্পতিবার   ১২ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩১

ওসমানদের জিম্মি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না.গঞ্জ ক্লাব

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০২৪  


টানা সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে দেশের প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের গডফাদার খ্যাত সাবেক এমপি শামীম ওসমান সহ তার পুরো ওসমানীয় সম্রাজ্য আধিপত্য বিস্তার করে যে যেমনে পারছে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে লুটপাট করেছে।

 

 

তার সম্রাজ্যের অলিখিত মাফিয়া ছিলেন শামীম ওসমানের শশুর বাড়ির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় তার শ্যলক তানভীর আহম্মেদ টিটু। তিনি একাধারে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে দখল করে রেখে লুটপাট চালিয়েছে। একই সাথে মাদক কারবারি থেকে শুরু করে চাদাঁবাজিতে তার নাম উঠে এসেছে। কিন্তু এবার ২১ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরী হতে যাচ্ছে। আর এতে করে ওসমান হাতে জিম্মি হতে এলিট শ্রেনীর এই ক্লাবটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে।

 


সুত্রমতে আগামী ২১ ডিসেম্বর সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নির্বাচনের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে এম সোলায়মান ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন। যদিও তিনি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত ষবাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তাছাড়া এর আগেও তিনি সভাপতি হিসেবে ছিলেন।

 

 

অপরদিকে তার বিপক্ষে সভাপতি পদে ১ নং ব্যালট নাম্বার নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন জুলফিকার রি-রোলিং মিলস লিমিটেড এর চেয়ারম্যান মো. মাহববুর রশিদ জুয়েল। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ স্টী রি রোলিং মিলস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এছাড়া সিনিয়র সহ সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মারুফ বাবু ও ইকবাল হাবিব।

 

 

সহ সভাপতি পদে রয়েছেন আমিরুজ্জামান সহ আরও ২ জন প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া সদস্য পদে ৯জন প্রার্থী রয়েছে। আজ থেকে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রাচরনায় নামছেন। তাই ২১ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ ক্লাব নতুন নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছেন।  

 


খোঁজ নিয়ে জানাযায়, এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ক্লাব এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থা ছিল তানভীর আহম্মেদ টিটুর নিয়মিত কাবিখা প্রকল্ডের মত প্রকল্প। যেখান থেকে প্রতি নিয়ত বিভিন্ন নামে বেনামে টাকা সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তার বিপক্ষ প্রার্থীকে ম্যানেজ করে তিনি বিসিবির পদ ভাগিয়ে নেন বলে ক্রীড়া অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে।

 


এদিকে গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তার সাথে আওয়ামী লীগের এমপি মন্ত্রী থেকে শুরু করে তাদের দলীয় নেতৃবৃন্দ আত্মগোপনে চলে যান। এক্ষেত্রে গডফাাদার খ্যাত সাবেক এমপি শামীম ওসমান সহ তার সম্রাজ্যের সাঙ্গপাঙ্গরা পালিয়ে রয়েছেন। তার শ্যলক থানভীর আহম্মেদ টিটুও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করেন নাই। নিজেদের রামরজত্ব ছেড়ে হত্যা মামলার ফেরারি আসামী হয়ে পালিয়েছেন।

 


অপরদিকে তাদের অপকর্ম নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সদস্যরা। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতির পদ দখল করে কিভাবে প্রতারনা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তানভীর আহম্মেদ টিটু। তাছাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঠেকাতে ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ ক্লাব থেকে বের হয়ে অস্ত্র নিয়ে গুলি বর্ষন করেন। যার ভিডিও ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।

 

 

নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না শর্তে জানান, গত ১৫ বছরে জনপ্রতি ১৮ লক্ষ করে টাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে ৪শ সদস্য করেছে তানভীর আহম্মেদ টিটু। যা প্রায় ৭০ কোটি টাকা হিসেবে দাড়ায়। স্বাভাবিক নারায়ণগঞ্জ ক্লাবটি একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত লাভ করে। কিন্তু শামীম ওসমানের শ্যলক এখানকারচেয়ারে বসে তাদের কার্যালয়ের মত করে ব্যবহার করেছে।

 

 

আর এজন্য ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী জয়ের দিন এই ক্লাবেও হামলা, লুটপাটরে ঘটনা ঘটে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ডিজিটাল ভবন নির্মান করার জন্য ঠিকাদারের সাথে ৪৫ কোটি টাকা কন্টেক করে তাকে ৭১ কোটি টাকা দেয়ার নাম করে এখান থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই ভদ্রলেবাসধারি টিটু।

 

 

এছাড়া এই টিটু তার চামচা এস এম রানাকে দিয়ে জেলা প্রসাশকের রাজস্ব, এল এ শাখায়, এসিল্যান্ড অফিস বিশাল সিন্ডিকেট তৈরী করে শত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে। বিশেষ করে পঞ্চবটি মুক্তাপুর ফ্লাই ওভার ব্রীজে একোয়ার জায়গায় সিন্ডিকেট করে সেখানকার বিল উত্তোলন থেকেই শত কোটি টাকা পাসের্ন্টেজ এর নাম করে হাতিয়ে নিয়েছে তাদের সিন্ডিকেট।

 

 

এছাড়া বিভিন্ন জায়গা দখল করে তা খারা দলিল করে নিয়ে নামজারি করে বিক্রি করে দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।যেখানে জায়গা দখলে নিতে পারে নাই। সেখানে চাদাঁবাজি করে টাকা নিয়েছে।

 


এছাড়া শামীম ওসমানের শ্যলক তানভীর আহম্মেদ টিটুর মাদক কারবারিড় সাথে জরিত থাকার খবর উঠে আসে ২০১৯ সনে। তখন নারায়ণগঞ্জের সাবেক এসপি হারুনুর রশিদ ফতুল্লা পাগলা মেরিএন্ডারসনে অভিযান চালিয়ে মদ, ফেন্সিডিল সহ মাদককারবারিদের গ্রেপ্তার করে। পরে গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে ওই মাদককার বারিদের সহযোগি হলেন তানভীর আহম্মেদ টিটু।

 

 

নারায়ণগঞ্জ ক্লাব থেকে টিটু মদ ফেন্সিডিল বিক্রি করতেন বিভিন্ন মদের বারে। এছাড়া ক্লাবে নিয়মিত জুয়ার আসর বসাতেন সাবেক এমপির শ্যলক।তার বিরুদ্ধে এইভাবে একের চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসছে। কেননা নারায়ণগঞ্জ ক্লাব এলিট শ্রেনীর মানুষের ক্লাব হওয়ায় তারা এই সন্ত্রাসী পরিবারের কাছে জিম্মি ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্ত পান নাই।  

 

 

তাদের বিরুদ্ধে এখন একের পর এক হত্যা মামলা হওয়ায় মানুষ মুখ খুলতে সাহস পেয়েছে। তাই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরী হয়ে ওসমানদের জিম্মি হতে মুক্তি পাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব। সেই সাথে ক্লাবের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আসবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।     এন. হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর