বৃহস্পতিবার   ১২ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩১

ওসমানদের পালাতে সহায়তাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে : তরিকুল সুজন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪  

গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেন, আমরা পরিষ্কার বলি বলে, বাংলাদেশের মানুষ আতাঁত পছন্দ করে না। বাংলাদেশের মানুষ ‘তলে তলে’ পছন্দ করে না। কিন্তু আমরা দেখেছি, ৫ তারিখের পরেও তলে তলে নানান কিছু হয়ে এই নারায়ণগঞ্জের খুনী পরিবারটি শামীম, অয়ন, আজমেরীসহ আওয়ামী লীগের বহু নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। কি করে পালালেন? কারণ সেটা আতাঁত করলেন কে তাদেরকে নানানভাবে টাকা পয়সা নিয়ে তাদেরকে পাড় করে দিলেন। সেইটার প্রশ্ন আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারকে করি। যারা তাদের সাথে আতাঁত করে দেশ ছেড়ে পালালো তাদেরকে গ্রেফতার করতে হবে এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে। কারণ যারা পালিয়েছে তারা খুনি।


গতকাল রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪১ মাস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।


তিনি বলেন, বিগত সরকার ছিলো খুনিদের সরকার, মাফিয়াদের সরকার, সিন্ডিকেটের সরকার এবং বাংলাদেশের গুম, খুন, নিপীড়নসহ বাংলাদেশের মানুষের সমস্ত অধিকার কেঁড়ে নেওয়ার সরকার। যারা একটি নূন্যতম মাত্রায় ভোটে যে অধিকার, কিংবা বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা, সেইখান থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে। রাতের আঁধারে ভোট ডাকাতি করে যারা নিজেরাই নিজেদেরকে নির্বাচিত করলো। গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হলো। আমরা সেই ৫ আগস্টের পরে যেই সরকারকে দেখছি, সেই সরকার জনগনের প্রায় সমস্ত পক্ষের মেন্ডেট নিয়ে তারা ক্ষমতায় আছেন। তারা কোনো মাফিয়া সরকার নয়, খুনিদের সরকার নয়, সিন্ডিকেটের সরকার নয়, কিংবা তারা কোনো দলীয় সরকার নয়। তারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছেন। তারা এই বাংলাদেশকে জনগনের আকাক্সক্ষার পথে পরিচালিত করবেন।


তিনি আরো বলেন, গত ১৫ বছরে নারায়নগঞ্জের মানুষের জীবনকে ভয়ৎকর দশায় নিয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে একের পর এক লাশ পাওয়া গিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের খাল, বিল, হাঁট, ঘাট, মাঠসহ সমস্ত জায়গা দখল করে তারা এখনে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেছিলো। সেই জমিদারীর বিপক্ষে নারায়ণগঞ্জবাসী টানা ১২ বছর আমরা এখানে দাড়িয়ে লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি। আমরা কোনো আপোস করিনি। আমরা তাদেরকে মোকাবেলা করেছি। সুতরাং, সেই হিম্মতে আমরা বলতে চাই যে আজকে আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বলে যে আপনারা ত্বকি এবং ত্বকিসহ আশিক, চঞ্চল, মিঠু সমস্ত হত্যাকান্ডের বিচার করবেন। বাংলাদেশের মানুষ এই সমস্ত হত্যাকান্ডের বিচার করবার জন্য আপনাদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়েছে। যদি আপনারা এই জন্য তা না করেন, সময় নষ্ট করেন, কিংবা আপনারা খুনীর সাথে (আওয়ামী লীগের) আতাত করেন, এটার পরিনতি ভয়াবহ হবে।


তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলি, আমরা এমন এক দেশ চেয়েছি, যেই দেশে লালন-সহ এইখানকার মাজারের সংস্কৃতি, হিন্দুরা-সহ সকলের বাংলাদেশ হবে। এই বাংলাদেশে কেউ দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক থাকবে না। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, আমাদের প্রশাসন ঐ আউয়াল-হুজুরদের কাছে তার নথি স্বীকার করে এইখানকার লালনের মালা, কিংবা মাজার, কিংবা নানান সংস্কৃতিক কর্মকান্ড তারা বাধা দিচ্ছেন। তারা অনুমতি দিচ্ছেন না। আমরা প্রশাসনকে বলি, অতীতেও আপনারা এই ক্ষমতাশীলদের দালালী করেছেন। তাদের কাছে মত উজারী ছিলেন। সুতরাং আপনারা সাবধান হন এবং বাংলাদেশের যেই সংস্কৃতি, সেই সংস্কৃতি অনুসারে সকল মানুষ তার শ্রীয় মত নিয়ে এই সমাজে বসবাস করতে পারবেন। আমরা আতঙ্কীত বোধ করি যারা অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দিয়েছে, যারা নেয্যতা দিয়েছে এবং যেসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আছে, আজকে তারাই পায় কেনো, সেটা নারায়ণগঞ্জবাসী জানে।


তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জবাসী জেগে উঠবার আগেই আপনাদের ক্ষমতাচ্যুত করবার আগেই আপনারা জনগণের কাছে কিংবা সমাজের যারা সত্যিকার অর্থে দায়িত্ব পালন করতে পারে, তাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি এই নারায়ণগঞ্জের বুকে নানান শ্রেণী পেশার ব্যবসায়ীরা। তারা খুনী, দালাল, দোসরদের আশ্রয়ে আজকে নারায়ণগঞ্জে এত দায়িত্বে আছেন। আমরা তাদেরকে হুশিয়ার করি। আপনাদের বসবার জন্য, চেয়ারে থাকবার জন্য, বাংলাদেশের হাজত জাওতা জীবন দারি নেই।


তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জবাসীকে বলে আজকে আমরা মোমবাতি হাতে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বলি অনতিবিলম্বে এই বিচার করতে হবে। কারণ এই বিচার করবার জন্যই আপনারা ক্ষমতায় আছেন এবং এই কারণে আমরা আপনাদের সমর্থন করি। সুতরাং এই বিচার করতে হবে এবং এই বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই লড়াই চালিয়ে যাবো।

এই বিভাগের আরো খবর