শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

কাঠব্যবসায়ী থেকে নৌপথের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

 

 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের মতো ঘটনা ঘটে গেলেও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যের অবসান হয়নি। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ধাক্কায় কেবল চেহারায় বদল হয়েছে, কিন্তু বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি। সরকার বদলের শুরুর দিকে কিছুটা বিরতি দিয়ে নতুন পরিচয়ে ধীরে ধীরে আবারও মাঠে নেমে পড়েছে চাঁদাবাজরা। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসায়ীক মহল ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের অত্যাচারে ছিলেন অতিষ্ঠ।

 

 কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সেই সরকারের পতনের পরে নারায়ণগঞ্জের নির্যাতিত মানুষ ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা মনে করেছিলেন তাদের ভাগ্যে বোধ হয় পরিবর্তন আসবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনেক মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আসেনি। বিগত সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জের চাঁদাবাজদের ছেড়ে যাওয়া শূন্য আসন পূর্ণ হতে সময় লাগেনি। সব পয়েন্টেই আবার নতুন করে শুরু হয়েছে দখল ও চাঁদাবাজ। আর এই চাঁদাবাজরাও বর্তমান সময়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু অসাধু নেতার আশীবাদপুষ্ট।

 

বিশেষ করে বিগত আওয়ামীলীগ সরকার আমলে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ ও শীতলক্ষ্যা নদীর নৌ-পথে চলতো ব্যাপক চাঁদাবাজি। আর এই সকল চাঁদাবাজির মূলহোতারা ছিলেন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর পরই নৌ-পথের নামধারী সকল চাঁদাবাজরা এখন রয়েছেন পলাতক। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকার আমলের চাঁদাবাজরা পালিয়ে গেলেও থামেনি নৌ-পথের চাঁদাবাজি। তাদের জায়গায় এখন দখল করে রেখেছেন বিএনপির নামধারী কিছু নেতা। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সগঞ্জ ও শীতলক্ষ্যা নদীর নৌ-পথে প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিন শত কার্গো জাহাজ চলাচল করে। 

 

আর এসকল জাহাজ থেকে বিগত আওয়ামীলীগ সরকার আমলে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের নাম ব্যবহার করে ব্যাপক চাঁদাবাজি করতেন বরিশাল্লাহ সবুজ সিকদার। যাকে নৌ-পথের সকলে চাঁদাবাজ সবুজ সিকদার নামে চিনে। সেই চাঁদাবাজ সবুজ সিকদারের মেইন ঘাটি ছিলো নগরীর পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায়। সেখান থেকেই সবুজ সিকদার তার বাহিনীদের দিয়ে নৌ-পথে চাঁদাবাজি করতেন। আর সেই চাঁদাবাজির অর্থ সেই পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় ভাগ-ভাটার করতেন। 

 

এছাড়াও কোন জাহারের মাস্টার. ড্রাইভার বা সুকানি চাঁদা দিতে না চাই তাদের পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় এনে মারধর করা হতো। বিভিন্ন সময় জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ, শ্রমিকলীগ ও যুবলীগের নেতাদের এনে পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় মিলাদের নামে তাদের সাথে আঁতাত করতেন সেই চাঁদাবাজ সবুজ সিকদার। সূত্রে জানা যায়, সবুজ সিকদারের নৌ-পথের চাঁদাবাজির ভাগ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল ও যুবলীগের সভাপতি সাজনু সহ অনেক নেতাই ভাগ পেতেন। 

 

তাদের সকলের ছত্রছায়াই নৌ-পথে চাঁদাবাজি করতেন সবুজ সিকদার। কিন্তু গত ৫আগস্টের পরে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর পরই সেই চাঁদাবাজ সবুজ সিকদারের অফিসটি দখলে নিয়েছেন মহানগর বিএনপির সদস্য মনোয়ার হোসেন শোখন। বর্তমানে তার নেতৃত্ব এখন চলে শীতলক্ষা নদীতে চাঁদাবাজি। নিজেকে তিনি বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দাবি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন পাঁচ নম্বর ঘাটের পুরো এলাকা। 

 

জানা যায়, বিগত সরকার আমলে পাঁচ নম্বর ঘাট চারারগোপ এলাকায় গাছের কাঠের ব্যবসা করতে বিএনপি নেতা মনোয়ার হোসেন শোখন। সেখানে একটি ছোট দোকানে বসেই গাছ কাঠ বিক্রি করতে। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছেন মনোয়ার হোসেন শোখনের। নিজেকে বিএনপি নেতা থেকে এখন নৌযান শ্রমিক ইউনিয়ের সভাপতি দাবি করে করছেন চাঁদাবাজি। সবুজ সিকদার বাহিনীর সেই পুরানো কিছু চাঁদাবাজদের সাথে নিয়ে এখন করছে চাঁদাবাজি।

 

 এবিষয়ে নৌ শ্রমিকরা জানান, ভাবছি ৫ তারিখের পর থেকে আর কোন চাঁদা দিতে হবে না। কিন্তু দেখতে পারছি আওয়ামীলীগের আমলের মেইল চাঁদাবাজ গিয়ে এখন নতুন চাঁদাবাজ এসেছে। সেই আগের পুরানো কিছু চাঁদাবাজ তাদের নামে চাঁদা তুলছে। সরকার পরিবর্তন হলে নাকি সকলের ভাগ্যে পরিবর্তন হবে, কিন্তু কই আমরা তো সেই চাঁদাবাজদের হাতেই জিম্ভি রয়ে গেলাম। আমরা চাই এই সরকার যাতে নৌ-পথের সকল চাঁদাবাজি বন্ধ করে।

 

এই বিভাগের আরো খবর