শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

কার আশকারায় খোলা অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক

লিমন দেওয়ান

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২৪  

 

নারায়ণগঞ্জ শহরের আনাচে কানাচে নোংরা পরিবেশে হুটহাট ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যাদের এগুলো পরিচালনা করার ক্ষেত্রে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নেই কোন কাগজ নেই, তারপরও সকল বাধাবিপত্তি অতিক্রম করেই দেদারসে খোলা রাখা হয়েছে অবৈধ পতিষ্ঠানগুলো।

 

একই সাথে দালালদের মাধ্যমসহ নারায়ণগঞ্জে থাকা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্থানে থাকা চেম্বারের ডাক্তারগুলোকে ম্যানেজ করে নানা পরীক্ষার নামে বিভিন্ন কায়দায় এনে তাদের কাছে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে। চিকিৎসার মান নিয়ে ও রয়েছে নানা প্রশ্ন। তারপরেও জেলা সিভিল সার্জন এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে নিরব রয়েছে।

 

তা ছাড়া নানা চাপে কিছুদিন পূর্বে শহরের খানপুরে ৩টি লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালগুলো সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে সিলগালা করলেও সাথে সাথেই বাধা উপক্ষো করে আবারো তালা খুলে চালু রেখেছে খানপুরের নানা সমালোচিত ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টার যার নাম ও স্থান পরিবর্তন করে নাম রাখা হয়েছে আহিল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেডি লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এরা সিলগালার পরে ও কোন সাহসে তাদের অবৈধ ডায়াগনস্টিক খোলা রেখেছে তা নিয়ে শহর জুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

 

এদিকে কোন সাহসে সিলগালার পরে ও ডায়াগনস্টিকগুলো খোলা জানতে চাইলে তারা বলেন, সিভিল সার্জনের কর্মকতা মামুন ভাইয়ের সাথে আমাদের ভালো সখ্যতা সেই হিসেবেই আমরা আমাদের কার্যক্রম অবহৃত রেখেছি, তারা আরো উচ্চস্বরে বলেন যদি আমরা ডায়গনস্টিক খোলা না রাখি তাহলে কাগজ পাবো কিভাবে। অপর দিকে মিশনপাড়ায় লাইসন্সেবিহীন ডায়াবেটিক হাসপাতাল, দেওভোগে এনসিসি-এসবিএফ কিডনি ডায়ালেসিসসহ এমন আরো বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এখন অবৈধতার তালিকায় থেকে ও দেদারসে চালু।

 

এদিকে সিভিল সার্জনের অভিযানকে তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে চালু রেখেছে অপর দিকে অনেকে সিলগালা করার পরে ও কোথা থেকে তারা এই সাহস পায় আর চাবি পায়, নিশ্চই তারা প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির প্রশ্রয়ে তারা আছে তা না হলে, সিভিল সার্জন অফিসের সাথে তাদের ভালো লেনদেন আর তা না হলে সিভিল সার্জন অফিসকে তারা কোনভাবেই তোয়াক্কা করে না এমনটাই প্রশ্ন উঠছে জনমনে।

 

এদিকে জানা গেছে, দ্বাদশ নির্বাচন ও নতুন মন্ত্রনালয় গঠনের পর পরই নবাগত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন দেশের বিভিন্ন লাইসেন্সহীন সকল হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দেন। আর এমনকি তার প্রথম থেকেই পুরোদমে তৎপর হয়ে আছেন দেশের সকল প্রকারের লাইসেন্সেবিহীন হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে।

 

এদিকে তার ঘোষণার পরদিন থেকেই লাইসেন্সহীন না থাকা, সনদ নবায়ন না করা, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, অনুমোদনবিহীন ল্যাব পরিচালনা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অপারেশন পরিচালনাসহ বিভিন্ন অভিযোগগুলোকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বেশ কিছু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের লিস্ট করে সেগুলো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জের লাইসেন্সেবিহীন অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন তার পর থেকেই বহু হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে বন্ধের নোটিশ পাঠিয়ে দেন।

 

কিন্তু তারা সেই আলোকে বাস্তবায়ন না করেই তাদের কার্যক্রম অবহৃত রেখেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত (২৭ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে শহরের খানপুরে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি দল লাইসেন্সেবিহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলাতে অভিযান দেন সেখানে তারা অভিযুক্ত আয়েশা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইমন যার বর্তমান নাম আহিল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সিলগালা করে দেওয়া হয়।

 

কিন্তু গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা মিলে, সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে সিলগালা করে দেওয়ার পর ও কিন্তু দিব্বি চলমান খানপুরের ইমন ওরফে আহিল ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তা ছাড়া আরো জানা গেছে, এলাকার সেবা নিয়ে থাকে কিন্তু সকলেই যানে এটার বৈধ একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিন্তু এটা যে অবৈধর খাতায় নাম চলে গেছে এমনটা তো জানা নেই এলাকা ও আশেপাশের কাউরই। এদিকে তাদের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে মানুষের কাছ থেকে নানা বিভিন্ন পরীক্ষার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

 

এদিকে যদি লাইসেন্স না থাকা অবস্থায় কোন ভূল চিকিৎসায় হতাহতের ঘটনা ঘটে তাহলে এই দায়ভার নিবে কে? তা ছাড়া কোন প্রকারের কাগজ বা অনুমোদন ছাড়া কার নির্দেশে এই হাসপাতাল আবারো খোলা কেন এটা বোধগাম্য নয় কাউর। অপর দিকে খানপুরের সাবেক ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টার যার বিরুদ্ধে ছিলো নানা অভিযোগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে তারা দিব্যি তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন দালালদের মাধ্যমে ছলছাতুরি করে শহরের ৩শ শয্যা হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে আসে। একই সাথে দালালদের মাধ্যমে রোগি এনে তাদের কাছে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে। অন্যদিকে চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভোগীরা ও অভিযোগ রয়েছে ক্লিনিকগুলো যেন কসাই খানা খুলে বসেছে। তাদের কাছে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা করাতে গেলে অতিরিক্ত টাকা নেন। তাছাড়া গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারী না করে তাদের সিজার করার পরামর্শ দেয়া হয়। সিজারের অপারেশন করে ক্লিনিক হাসপাতাল গুলো মোটা অংকের বাণিজ্য করে আসছে।

 

অনেক সময় ভুল রিপোর্টের কারণে চিকিৎসার ব্যাঘাত ঘটছে। অনেকের ভুল চিকিৎসার কারণে রোগী পর্যন্ত মারা ও গিয়েছিলেন। তাদের ছিলো না ডিজি হেলথের কাগজপত্র সেই সাথে পরিবেশ দপ্তরের অনুমোদন। যাকে ঘিরে নানা সামালোচনার পর সেই ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরে তারা খুলেছে এখন নাম ও স্থান পরিবর্তন করে আরেকটি অবৈধ প্রতিষ্ঠান যার ও নেই কোন প্রকারের কাগজ তার নাম আহিল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এটা ও সিভিল সার্জন বন্ধ করলে ও মালিক রবিনের নির্দেশনায় চোর-পুলিশ খেলা চালিয়ে চলছে এই আহিল।

 

মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজাদুল ইসলাম (আজম) তিনিও কাগজ ছাড়াই চালাচ্ছে ডায়াগনস্টিক সিলগালার পরেও নানা লবিংয়ে আবারো খোলা তার এই অবৈধ প্রতিষ্ঠান। অপর দিকে কাগজ ছাড়াই মিশন পাড়ায় এলাকায় ডায়াবেটিক হাসপাতাল ইউনিট-২ দেদারসে দাবড়িয়ে চলছে। অপর দিকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দোহাই দিয়ে এনসিসি-এসবিএফ কিডনি ডায়ালেসিস সেন্টার কাগজ ছাড়াই চালু রেখেছে কিন্তু সিভিল সার্জনের নেই কোন অভিযান।

 

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান যুগের চিন্তাকে বলেন, অবৈধ হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অবহৃত রয়েছে। আর যাদের আমরা সিলগালা করেছি তারা যদি আমাদের তোয়াক্কা না করেই চালু রাখে আমরা এটার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিবো। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর