শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

কার্যকর পদক্ষেপের অভাবেই ঝরছে প্রাণ

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৪  

 

# অভিযানের পর আর খোঁজ নেয়া হয় না বলে অভিযোগ
# প্রতিনিয়তই বাড়ছে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু
# রোগীদেরকে জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায়েরও দাবি
# প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে চালু রাখে কি করে
# বন্ধ করার পর কয়টি বন্ধ আছে জানে না প্রশাসন

 

সারা দেশের লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে অবৈধ হাসপাতাল যারই হোক না কেন অনুমোদনবিহীন হাসপাতালের ব্যাপারে কোন ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।

 

গত ১৬ জানুয়ারি সচিবালয়ে দেওয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারির পর একই দিনে নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও ক্লিনিককে বন্ধের নির্দেশ দেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এএফএম মুশিউর রহমান। তবে বন্ধ হওয়া চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো আদতে বন্ধ আছে কিনা সেই বিষয়ে তদারকি হচ্ছে কি না, সে প্রতিষ্ঠানগুলো সত্যিই বন্ধ আছে নাকি প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে দেদারসে চলছে সেই বিষয়ে কেউ কোন ভূমিকা রাখছে না বলে নারায়ণগঞ্জবাসীর অভিযোগ।

 

স্থানীয়দের মতে, নারায়ণগঞ্জ শহরসহ এর আশের পাশের এলাকাগুলোর আনাচে-কানাচে নোংরা পরিবেশে হুটহাট গড়ে উঠছে বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্র। যার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই চিকিৎসার নামে প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে সহজ সরল রোগীদের পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু কিংবা রোগীদের পরিবারকে জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ।

 

এমনকি জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন সরকারি চিকিসাকেন্দ্রের নামিদামি চিকিৎসকগণের অনেকেই কোন বাছবিচার না করেই এসব প্রতিষ্ঠানে সেবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে। আর সুবিধাবাদী প্রতিষ্ঠানগুলো এসব চিকিৎসকদের নামকে বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার করে তাদের অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ গতকাল রোববারও নারায়ণগঞ্জের খানপুরের একটি ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় মোস্তাকিম নামের ৮ বছরের এক নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় একটি টনসিলের অপারেশনের জন্য সেই ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয় সদর উপজেলার বক্তাবলীর মধ্যনগর এলাকার রমজান আলীর ছেলে ও মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র অবুঝ শিশু মোস্তাকিমকে। অপারেশন শেষে মোস্তাকিমের আর জ্ঞান না ফেরায় অপারেশন থিয়েটারে তার মরদেহ রেখেই নাকি পালিয়ে যায় ডাক্তার, নার্সসহ ক্লিনিকের কর্মকর্তাগণ।

 

চিকিৎসকের অবহেলায়ই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে নিহতের পরিবারের অভিযোগ। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি তাদের। ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ঘটনা পরিদর্শন করেন বলে জানায় পুলিশ। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

 

নারায়ণগঞ্জে এ ধরণের হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় মৃতের ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও এ ধরণের একাধিক খবর পাওয়া গেছে। যারপর সেগুলোতে অভিযান হয়, বন্ধ হয় এবং খবর বের হয় এগুলোর বেশিরভাগই লাইসেন্স বা অনুমোদন ছাড়াই চলে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে তারা রোগীদের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অপারেশন চালিয়ে আসছে।

 

সূত্রমতে, যে সব চিকিৎসাকেন্দ্র বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে বন্ধ ঘোষণা করা হয় এখনও সেগুলো দেদারসে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই দাবি করেন এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ওপরের মহলের সাথে আঁতাত করেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তা না হলে প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে এসব প্রতিষ্ঠান চালু রাখার সাধ্য তাদের নেই। এর মধ্যে কোন কোন প্রতিষ্ঠান আছে যাদের কোন লাইসেন্সই নেই, কারও আছে কিন্তু নবায়ন করার প্রয়োজন মনে করছে না।

 

এর বাইরে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, দালালদের ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও রোগীদের আসতে বাধ্য করা, অদক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে ল্যাব পরিচালনা করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অপারেশন পরিচালনা করা সহ সরকারি নিয়মনীতি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না মেনেই সেবার নামে ফায়দা লুটে নিচ্ছে নারায়ণগঞ্জের বেশ কিছু চিকিৎসালয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা এতটাই প্রভাবশালী যে, প্রশাসনও তাদের কিছু করতে পারছে না বলে স্থানীয়দের দাবি।

 

খুব শীঘ্রই এসব প্রতিষ্ঠানে কার্যকর কোন অভিযান বা পদক্ষেপ না নিলে এখানকার সাধারণ ও সহজ সরল পরিবারের সদস্যদের প্রাণঘাতী সংবাদের তালিকা দীর্ঘ হবে বলে সচেতন মহলের ধারণা। ভেস্তে যেতে পারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের স্বপ্ন। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর