সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৮ ১৪৩১

কালাম পরিবারের অশনি সংকেত

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৯ মে ২০২৪  

 

 

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে ওসমান পরিবারের ব্যাপক ঐতিহ্য রয়েছে। এই পরিবারের যেমন সুনাম রয়েছে তেমনি নানা সময় সমালোচনায়ও থাকেন। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের চার বারের প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের হাত ধরে জাতীয় পার্টি সু সংগঠিত হয়েছে। তিনি জীবিত থাকা কালিন সদর বন্দরে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

 

তাছাড়া জেলার অন্যান্য থানার চেয়ে বন্দর উপজেলায় প্রয়াত নাসিম ওসমানের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ছিল আওয়ামী লীগের চেয়ে শক্তিশালী। যা এখনো এখানে জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির সাথে প্রতিযোগিতা করে বিএনপিও এক সময় বন্দরে শক্তিশালী ঘাটি তৈরী করে। কেননা বন্দরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্য বন্দরের পরিচিত মুখ জালাল হ্জাীর মাধ্যমে বিএনপি সু সংগঠিত হয়। যা পর্যায় ক্রমে তার পরিবারের লোকজন তা ধরে রাখেন।


এ দিকে জানা যায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের চার বারের প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমান ১৯৮৬ সনের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯১ সনে সংসদ সদস্য হিসেবে জয়ী হন। পরবর্তিতে ২০০৮ সনের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। তবে ২০১৪ সনে নাসিম ওসমান এমপি নির্বাচিত হলেও বেশি দিন থাকতে পারেন নাই। আর এই সময়ে তিনি কর্মীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে বন্দর উপজেলাকে জাতীয় পার্টির ঘাটি হিসেবে তৈরী করেন।

 

তার হাতে গড়ে উঠা নেতা কর্মীরাই এখনো জাতীয় পার্টিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। যদিও প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমান মারা যাওয়ার পরে তার জায়গায় উপ নির্বাচনে ব্যবসায়িক নেতা সেলিম ওসমান এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ব্যবসায়িক নেতা হওয়ায় রাজনৈতিক ভাবে এখানে জাতীয় পার্টিকে তেমন ভাবে গড়ে তুলতে পারেন নাই। এমনকি দলীয় ভাবে এখানে জাতীয় পার্টির নতুন নেতৃত্ব তৈরী করতে পারেন নাই।

 

বন্দর উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা কর্মী আছে তারা নাসিম ওসমানের হাতে গড়া। তারাই বন্দরে রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। তারই চিত্র ফুটে উঠেছে নাসিম ওসমানের হাতে গড়ে উঠা জেলা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি মাকসুদ হোসেন গতকাল বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। তার সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করে দ্বিতীয় হন সাবেক বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল।


জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের বন্দরে বিএনপির ঘাটি হিসেবে তৈরী করার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছেন জালাল হাজ্বী পরিবারের। তারই উত্তর সুরি হিসেবে সুনাম ধরে রেখেছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম। তিনি এখানে তিনবারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপি থেকে। বন্দরে তাদের পরিবারের ব্যপক পরিচিত রয়েছে।

 

সদ্য গতকাল অনুষ্ঠিত হওয়া বন্দর উপজেলা নির্বাচনে আবুল কালামের ভাই আতাউর রহমান মুকুল পরাজীত হন। তিনি এর আগে বন্দর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব করেন। ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত বন্দর উপজেলায় বিএনপি ব্যপক শক্তিশালী হিসেবে গড়ে  উঠে। তখন সদর বন্দর নিয়ে গড়ে উঠা মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন জালাল হাজ্বী পরিবারের অন্যতম সদস্য সাবেক এমপি আবুল কালাম। তার ভাই আতাউর রহমান মুকুলও বিএনপির হেভিওয়েট নেতা ছিলেন। তিনি জাতীয় নির্বাচনে সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ করায় দল থেকে বহিস্কার হন।

 

তাছাড়া বন্দর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সানাউল্লা সানু পরাজীত হলেও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টির নেতা মাকসুদ নির্বাচিত হয়েছেন। এতে করে এখানে জাতীয় পার্টির শক্তিতে তেমন কোন প্রভাব পরে নাই। কিন্তু গত ১৫ বছর টানা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বন্দরে এখন আর আগের মত বিএনপির জনপ্রিয়তা কিংবা দাপট নেই।

 

তাই তাদের অবস্থান এখন তলানীতে রয়েছে। তাছাড়া জালাল হাজ্বী পরিবারের সদস্য সাবেক এমপি আবুল কালামের ছেলে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আবুল কাউছার আশা নাসিক ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে বর্তমানে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তবে তিনি বিএনপি পরিবারের সদস্য হওয়ায় তার তেমন একটা দাপট নেই।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে বন্দর উপজেলায় এখন সাবেক এমপি কালাম পরিবার অশনি সংকেতে রয়েছে। তাদের এখন আর আগের মত দলের মাঝে যেমন দাপট নেই তেমনি এলাকায় তাদের অবস্থান তলানীতে রয়েছে। যার জন্য সব কিছু মিলিয়ে বিএনপির সাবেক এমপি আবুল কালাম পরিবার এখন অশনি সংকেতে রয়েছে।

 

এই বিভাগের আরো খবর