মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আশ্বিন ১ ১৪৩১

কালোবাজারি চক্রে সুব্রতের বস সানি সাহা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

 

 

ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়শনে হেন অপকর্ম বাকি নেই লিটন সাহার। সেলিম ওসমান, শামীম ওসমানকে আব্বা ডেকে সে সমৃদ্ধ ব্যবসায়িক সংগঠনের সদস্যদের জিম্মি করে রেখেছে। কথায় কথায় চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে বন্ড সুতার বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে। লিটন সাহার শেল্টারে টানবাজারের সুতার কালোবাজারী ব্যবসা পরিচালনা করতেন সুব্রত সাহা, বিপুল মন্ডল ও তুষার চৌধুরী।

 

কিন্তু তাদের সকলের মূল হোতা ছিলেন এম.এম ট্রেডার্সের মালিক সানি সাহা। প্রতি দিন কোটি কোটি টাকার সুতা চোরাইপথে নারায়ণগঞ্জে আনা-নেওয়া করতেন সানি সাহা। অবৈধ ব্যবসার এই সিন্ডিকেট হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া যাকে বুঝায় তাই যেন সুব্রত সাহা, সানি সাহা। সূত্র বলছে, মাত্র দশ বছরের শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন সানি সাহা। যে কিনা ২০১৩ সালের আগে ছিল স্রেফ এক বেকার যুবক।

 

মামা অঞ্জন সাহার দোকানে শ্রম দেয়া সানি সাহা চোরাই সুতা চালানের ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক। এখন টানবাজার আশা হলের সামনে প্রায় ১১ শতাংশ জমি, ৪টি দামি গাড়ি, জামতলা এলাকায় মালিকানাধীন হিরা ড্রাগন প্যালেস, আমলাপাড়ায় গ্রীন ফার্মা ও পদ্মা সিটি প্লাজার ২য় তলায় রয়েছে নিজের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এম.এম ট্রেডার্স এসোসিয়েশন। এছাড়াও  নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায় তার রয়েছে বিভিন্ন সম্পত্তি।  

 

সানি সাহা, সুব্রত সাহার এসবকিছুর ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অতিদ্রুত খোঁজ নেয়ার দাবি জানিয়ছেন ব্যবসায়ীরা। সূত্র জানায়, এই অবৈধ ব্যবসা মাধ্যমে শত কোটি টাকার ২০১৫ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সংসদ একেএম নাসিম ওসমানের মেয়ে আফরিন ওসমানের স্বামী ঢাকা মহানগর জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইফতেখারুল ইসলামের সাথে পরিচয় হয় সানি সাহা। তারই বছরখানিক পরেই সকল ধরণের অপকর্ম শুরু করেন সানি সাহা।

 

 দেশের বাহিরে বা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চোরাইপথে এলসির কালোবাজারী বন্ডের সুতা নারায়ণগঞ্জে এনে বিক্রি করতেন সানি সাহা। আর এই সকল চোরাইপথে সুতা নারায়ণগঞ্জে আনতে সানি সাহাকে কেয়ারিং করতেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইফতেখারুল ইসলাম। চোরাইপথে আনা-নেওয়া সকল বন্ডের সুতা পুলিশ-প্রশাসনকে ম্যানেজ করতেন ইফতেখারুল ইসলাম। আর এই সকল মালামালের বিক্রির লাভ দুই জনে সমান ভাগে ভাগ করতেন।

 

 এছাড়াও সানি সাহার সাথে এই সকল চোরাই বন্ডের সুতার ব্যবসা করতে বিপুল মন্ডল, সুব্রত সাহা ও শ্রীভাষ সাহা। তারা ছিলেন সানি সাহার ব্যবসায়ীক পার্টনার। বোন জামাতার সাথে কালোবাজারী পার্টনাল থাকায় সানি সাহার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো আজমেরী ওসমান ও তাদের পরিবারের সকলের। যেই কোন জায়গা-জমি দখল, ব্যবসায়ী লেনদেন, হুমকি সহ সকল অপকর্ম আজমেরী ওসমানকে দিয়ে করাতেন সানি সাহা। এছাড়াও প্রতি মাসে সানি সাহার মাধ্যমে টানবাজার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা আজমেরী ওসমান।


এবিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, টানবাজার ধ্বংসের পথে রয়েছে সানি সাহা ও লিটন সাহা। তারা দুই জন শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমানের নামে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা চাঁদা নিতেন। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তাদের দিয়ে হুমকি দিতেন। গত ৫ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর পরই এলসির কালোবাজারী সেন্টিকেটের হোতা লিটন সাহা পালিয়ে যায়, তার সাথে কয়েক দিন গা ডাকা দিয়ে ছিলেন সানি সাহা। কিন্তু কয়েকদিন ধরে আবারও টানবাজার এলাকায় আবার আগের মতো এলসির কালোবাজারী বন্ডের সুতার ব্যবসা করছেন সানি সাহা। আমরা চাই এই সকল কালোবাজারী ব্যবসায়ী যাতে টানবাজার এলাকায় না থাকে। আমরা আগের মতো আমাদের সেই ঐতিহ্যবাহী জমজমাট টানবাজারের সুতার ব্যবসা গড়তে চাই।


অপরদিকে বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি চাঁদাবাজ লিটন সাহার শেল্টারে টানবাজারে এলসির কালোবাজারী পরিচালনা করতেন তারই বন্ধু সুব্রত রায় (এস এস থ্রেড এক্সেসসরিক্স), বিপুল মন্ডল (শুভা এন্টারপ্রাইজ), তুষার চৌধুরী (ওয়াস্টগ্রেড) এরা অবৈধপ্রন্থায় নিজেদের ও বিভিন্ন ব্যাবসায়ীদের এলসি জোর পূর্বকভাবে ক্ষমতা দেখিয়ে ব্যাবহার করে সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে শুল্কমুক্ত কোটায় আমদানি করা সুতা খোলাবাজারে বিক্রি করে টানবাজারের সূতার ঐতিহ্যকে ভূলন্ঠিত করেছে। 

 

এমনকি তাদের এই সকল অপকর্মের কারণে সরকার মাসে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এদিকে বিগত দিনে সুব্রতসাহা এলসির কলোবাজারী ব্যাবসায় জড়িত না থাকলে ও গত ১৫ বছর যাবৎ চাঁদাবাজ লিটন সাহার সেকেন্ড ইন কমান্ড হওয়ার পর থেকেই ক্ষমতার অপব্যাবহার করে চালিয়ে যাচ্ছেন এই অপকর্ম। টানবাজার জুড়েই এই সিন্ডিকেট মেম্বাররা করেছেন অবৈধভাবে গুদাম যেখানে টনে টনে রাখা হয় এই অবৈধ সূতা। 

 

এই বন্ডের সুতা খোলাবাজারে চলে যাওয়ার ফলে দেশীয় শিল্প যথেষ্ট হুমকির মুখে পড়েছে। দেশীয় শিল্প ও হারাচ্ছে দেশের রাজস্ব। এদিকে ক্ষমতায় থাককালীন সময়ে এই বন্ডের সুতা খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগে সুব্রত রায় ও বিপুল মন্ডলের বিরুদ্ধে হয়েছিলো মামলা। কিন্তু সে সময় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমানের মাধ্যমে লিটন সাহা সেই মামলা থেকে তাদেরকে রক্ষা করেন। 

 

তার পর থেকেই অবৈধভাবে ব্যবসা তাদের আরো জমজমাট হয়ে পরে। এই কতিপয় আসাধু ব্যবসায়ী ব্যাক টু ব্যাক এলসির জন্য আনা সুতা চোরাইপথে টানবাজারে বিক্রি করে বিশেষ করে সুব্রত রায় রাতারাতি কালো টাকার পাহাড় করে ফেলেন। বর্তমানে ও লিটন সাহার ভয় দেখিয়ে ইয়ান মার্চেন্টের নামে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে  চাঁদাবাজি অব্যহৃত রেখেছেন। তা ছাড়া ও বন্ড সুতার সেই সিন্ডিকেটে লিটন সাহার ২৫ কোটি টাকার বেশি লঘ্নি করা টাকার বিশাল অঙ্কের সুদ সাধারণ ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আদায় করছেন।

 

এদিকে গত ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ২০ জন সুতা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে কাস্টমস অ্যান্ড কমিশনারেট। কাস্টমস অ্যান্ড কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের মামলায় আসামী হয়েছিলেন সুব্রত রায় (এস এস থ্রেড এক্সেসসরিক্স) ও বিপুল মন্ডল (শুভা এন্টারপ্রাইজ)। 

 

তা ছাড়া তাদের এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনায় পারসেন্টেস পেতেন পেতন আওয়ামী লীগের সমালোচিত সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও তার ভাই সাবেক এমপি সেলিম ওসমান, উভয়ের ভাতিজা আজমেরী ওসমান ও  নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল। এদিকে বহু বছর যাবৎই টানবাজারে অবৈধ এলসির ব্যবসা পরিচালনা হলে সে সময় সেখানে বিপুল মন্ডল (শুভা এন্টারপ্রাইজ), তুষার চৌধুরী (ওয়াস্টগ্রেড) 

 

এদের মাধ্যমে পরিচালনা হলে ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পরই লিটন সাহার কথায় তার বন্ধু সুব্রত রায় (এস এস থ্রেড এক্সেসসরিক্স) তাকে জয়েন করা হয়। পরবর্তীতে টানবাজারে এলসির পার্সোনাল অফিস অন্য সাইডে থাকলে ও বর্তমানে প্রভাবে পদ্মা সিটি প্লাজার নিচ তলায় অফিস স্থাপন করেন। মেখান থেকেই তাদের অপকর্মের কার্যক্রম পরিলাচনা হয়। তা ছাড়া বর্তমানে লিটন সাহার বন্ধু পরিচয়ে বন্ডের গডফাদার হিসেবে পরিচিত হয়েছেন সুব্রত সাহা সেই এলসির ব্যবসা পুরোই পরিচালনা করেন টানবাজার আশা হলে সামনে সামনে তার (এস এস থ্রেড এক্সেসসরিক্স) সেই অফিস থেকে। তা ছাড়া ও টানবাজারে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট চক্র প্রতিদিন অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বন্ড সুতা বিক্রি করলে ও তাদের সকলের মূল হোতা হিসেবে রয়েছেন সুব্রত সাহা, বিপুল মন্ডল, তুষার চৌধুরী।

 

এদিকে গত ৫ আগষ্টে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এমপি শামীম ওসমান সহ তার ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান ও টানবাজারের চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের মূল হোতা লিটন সাহাসহ তাদের সকলের পুরো পরিবার পলাতক রয়েছে।

 

 ইতোমধ্যে তারা সকলেই হত্যা মামলায় আসামী হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করতে খুজে বেড়াচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু তাদের পৃষ্টপোষকতায় যারা বিগত দিনে ব্যাবসা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন তাদের ছড়ানো সেই ভয়-ভীতি এখনো সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাঝে রয়ে যাওয়া ও বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দৃঢ়গতি হওয়ায় সেই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে ভোল পাল্টে বহাল থেকে তাদের অত্যাচারের তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছেন।


 

এই বিভাগের আরো খবর