মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

কিছু আছে, কিছু নেই

তুষার আহমেদ

প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২১  

# ডিএনডি অধ্যুষিত অঞ্চল হলেও প্রজেক্টে নেই সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুল-হাজীগঞ্জ খাল


# ডিএনডি সড়কের অর্ধেকে থেমেছে নাসিকের লেক, বাকি অংশ পরিকল্পনায় নেই



ডিএনডি বাঁধ অধ্যুষিত অঞ্চল সিদ্ধিরগঞ্জের ডিএনডি বা আদমজী সড়ক (হাজীগঞ্জ টু চিটাগাংরোড)। এই সড়কটির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ডিএনডির খাল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আট কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের পাশ্চিম পার্শ্বে বয়ে যাওয়া খালটির প্রায় ৮০ শতাংশ জায়গা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের। বাকি অংশ পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে।

 


সরেজমিনে দেখা যায়, ডিএনডি রোডের পশ্চিমে বয়ে যাওয়া এই খালের চিটাগাং রোড থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুল এলাকা পর্যন্ত হাতিরঝিলের আদলে লেকের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। তবে, ভাঙ্গারপুল থেকে দক্ষিণে হাজীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের পশ্চিমে বয়ে যাওয়া খালের অংশ অর্ন্তভূক্ত হয়নি সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্পে। এমনকি জলাবদ্ধতা নিরসনে ১২শ’ ৯৯ কোটি টাকা ব্যায়ের যেই প্রকল্পের কাজ চলমান আছে, সেই প্রকল্পের আওভুক্তও হয়নি ৩ কিলোমিটারের অবশিষ্ট এই খালটি। তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে রয়েছে শত আক্ষেপ, রয়েছে প্রশ্নও।

 

স্থানীয়রা বলছেন, চিটাগাং রোড থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হাতিরঝিলের আদলে লেকের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় ওই অংশে যেমন সৌন্দর্য্য বর্ধন পেয়েছে, তেমনি লেক নির্মাণের কারণে খাল উদ্ধার হওয়ায় পার্শ্ববর্তী এলাকার জলাবদ্ধতাও অনেকাংশে কমে এসেছে। তবে, সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুর থেকে হাজীগঞ্জ পর্যন্ত বাকি অংশটুকু সিটি করপোরেশন তাদের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় না নেয়ায় খালের দীর্ঘ এই অংশটি এখনো দখল দুষণের মধ্যে রয়েছে। এতে করে, পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে সামান্ন বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা যায়। খাল উদ্ধার না হওয়ার ফলে সেই জলাবদ্ধতা থাকে দীর্ঘদিন। তাই ডিএনডি প্রজেক্ট এবং সিটি করপোরেশনের হাতিরঝিলের আদলে করা লেকের পরও এসব এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী সমাধান পাচ্ছে না।

 


এদিকে, সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুল থেকে হাজীগঞ্জ তথা গোটা সড়কটি ডিএনডি বাধের অর্ন্তভূক্ত। সড়কের পূর্বপার্শ্বে এখনো ডিএনডি বাঁধের দেয়াল দেখা যায়। তবে, ডিএনডি বাধ অধ্যুষিত এলাকা হওয়া সত্বেও খালের এই অংশটি ডিএনডি প্রজেক্টের আওতাভুক্ত না হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। এই বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারি অফিসার মো. মশিউর রহমান দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুল এলাকা থেকে হাজীগঞ্জ পর্যন্ত ডিএনডি অধ্যুষিত অঞ্চল। তবে, এই অংশের সম্পূর্ন খালটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিনে আছে। এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল না হওয়ায় আমরা ডিএনডি প্রজেক্টের ম্যাপে এই খালটিকে অন্তর্ভূক্ত করতে পারিনি। আমাদের অধিগ্রহণে বা নকশায় যতটুকু ছিলো, ততটুকুই আমরা প্রজেক্টের আওতায় এনেছি।

 

তবে, চিটাগাং রোড থেকে নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুল পর্যন্ত খালটির কিছু অংশ আমাদের অধিনে থাকায় এবং সিটি করপোরেশেন লেকের কাজের জন্য আবেদন করায় ওই অংশটুকু আমরা সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তবে, লেকের প্রায় ৮০ শতাংশ জায়গাই সড়ক ও জনপথের। এদিকে, চিটাগাং রোড থেকে ভাঙ্গারপুল পর্যন্ত লেকের ৮০ শতাংশ জায়গা সিটি করপোরেশনকে দেয়া হলেও ভাঙ্গারপুল থেকে বাকি অংশ কেন সিটি করপোরেশনকে দেয়া হয়নি- এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে যোগাযোগ করা হয় নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সামিউল কাদের খানের সাথে। দৈনিক যুগের চিন্তাকে তিনি বলেন, যেহেতু এটা আমাদের জায়গা বা খাল, সেহেতু এটা যদি সিটি করপোরেশন বা অন্যকোন ডিপার্টমেন্ট উন্নয়ন কাজে নেয়, তাহলে এটা আমাদের কাঝ থেকে একোয়ার করে নিতে হবে। কিন্তু এই জায়গাটা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বা সিটি করপোরেশন আমাদের কাছে কোন ধরনের আবেদন করেনি। আমি এমন কোন ডকুমেন্ট পাইনি।’ তিনি বলেন, এই খালের পানি প্রবাহের বিষয়ে কোন প্রকল্প বা পরিকল্পনা আমরা নেইনি। আর ডিএনডি’র জলাবদ্ধতা দূরকরণের প্রজেক্ট যারা নিয়েছে, তারাই ভালো বুঝবে যে কোন উপায়ে তাদের প্রজেক্টটা ফলপ্রসু করা যায়। তবে, সরকারের দপ্তর হিসেবে আমরা তাদের সহায়তা করতে পারি। যদি তারা আমাদের সাহায্য চায়।

 


এদিকে, চিটাগাং রোড থেকে ভাঙ্গারপুল পর্যন্ত লেকের কাজ করা হলেও পরবর্তীতে লেকের কাজ কেন এগোয় নি- এমন প্রশ্নের উত্তরে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর হোসেন দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা যতটুকু কাজ করেছি, ততটুকু জায়গা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর বাইরে আমরা জায়গা পাইনি, তাই কাজও করা হয়নি। আমি এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।
সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে না পারলেও বোদ্ধা মহল বলছেন, ওই অঞ্চলের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের পথ বের করতে হলে ভাঙ্গারপুল থেকে হাজীগঞ্জ পর্যন্ত অবশিষ্ট খালের অংশটুকুও আনতে হবে উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে। হোক সেটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিএনডি প্রজেক্ট কিংবা সিটি করপোরেশনের হাতিরঝিলের আদলে করা লেক। এই দুই উন্নয়ন কাজের বাইরে থেকে গেলে ওই অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে বিদ্যমান।  

এই বিভাগের আরো খবর