শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

কিন্ডারগার্টেনে সয়লাব পুরো জেলা

তানজিলা তিন্নি

প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

 

# শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবকরা
#কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেনা : জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার
# সরকার ভাবলে শিক্ষার মান ভালো হতো : কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি

 

 

শিক্ষা মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদার একটি উপাদান। শিশুকাল থেকেই আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়, যা আমাদের সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে জীবন পরিচালনা করতে সাহায্য করে। তবে সেই প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে অনেকের মনেই রয়েছে সংশয়। বলতে গেলে সাড়া দেশেই শিক্ষার মান নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। বিশেষ করে শহর অঞ্চলে ঘনবসতি হওয়ায় চাহিদার তুলনায় সরকারি স্কুল মানসম্মত না হওয়ার কারণে বেসরকারি পর্যায় যত্রতত্র গড়ে উঠছে কিন্ডার গার্টেন স্কুল। যেখানে বাসস্থানের নিকটবর্তী হওয়ায় শিশুদের যাতায়াতের সুবিধা ও নানা রকম সুযোগ সুবিধা পাওয়ার আসায় অভিভাবকরা এসব কিন্ডার গার্টেন স্কুলের দিকে আসক্ত।

 

কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের বিষয় সরকারি কোনো ধরাবাধা নিয়মনীতি না থাকায় বেশির ভাগ কিন্ডার গার্টেন চালানো হচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষের মর্জিমাফিক। কিন্ডার গার্টেন স্কুল গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার বিষয় তেমন সচেতন থাকে না। স্বল্প বেতনে শিক্ষক নিয়োগ করার আশায় বেশির ভাগ স্কুল গুলোয় পাঠ দান করে থাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা যারা কোনো রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিশুদের পাঠদান দিয়ে থাকে। এরকম অবস্থায় দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যেহেতু শিক্ষকতা একটি সম্মানীত পেশা সেক্ষেত্রে স্বল্প বেতনে অনেকেই এই পেশা বেছে নেয়।

 

অন্যদিকে, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা ব্যবস্থায় ১ম শ্রেণীর আগে বাচ্চাদের ৩ বছর বয়সে প্লে শ্রেণীতে ভর্তি করা যায়, যার কারণে অভিভাবকরা কমবয়সে বাচ্চাদের হাতে কলমে শেখানোর জন্য এসব শ্রেণীতে ভর্তি করে দেয়। এরপর নার্সারি ও কেজি আরো দুটি শ্রেণী উতীর্ণ হওয়ার পর বাচ্চারা ১ম শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পায়। এই তিন বছর প্রাথমিক পর্যায়ে হাতে কলমে শেখানো হয় প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা দানে এসব স্কুল গুলোয় প্রতিবছরই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মোটা অঙ্কের ভর্তি ফি সহ নানা ধরনের চার্জ পরিশোধ করে নতুনভাবে ভর্তি হতে হয়।

 

এসব শিশু শ্রেণীতেও বই-খাতার সংখ্যা কমপক্ষে দু-তিন ডজন, যা স্কুল থেকেই ক্রয় বাধ্যতামূলক করা হয়। এর মধ্যে অনেক স্কুলে কিছু বই দেওয়া হয়, যা শিশুদের শ্রেণী ও বয়স অনুযায়ী ও মানানসই হয় না। শুধু তা-ই নয়, এসব শিশু শ্রেণীতেও প্রতি সপ্তাহে ‘ক্লাস টেস্ট’ পরীক্ষা ছাড়াও সারা বছরে নানা ধরনের পরীক্ষার নামে মোট সাত-আটবার পরীক্ষা নেয়া হয় এবং পরীক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি পরিক্ষার ফি আদায় করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের হিসাবে নারায়ণগঞ্জে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২১১৬ টি, যার মধ্যে সরকারি স্কুল রয়েছে ৫৪৭ টি, এবং কিন্ডারগার্টেন রয়েছে ১১৫৮ টি, আর বাকি ৪১১টি স্কুল বিভিন্ন সংস্থার অধীনে।

 

প্রাথমিক শিক্ষা শাখার এমন অনিয়মের বিষয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলেয়া ফেরদৌসী শিখার কাছে প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন, এ বিষয় আমার কিছু বলার নেই এসব কিন্ডারগার্টেন স্কুল গুলোতে শিক্ষার কোনো মান নেই। কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেনা এমনকি কেউ মানতে চাইছেও না। যার যেমন ইচ্ছা সে এলাকাবাসী বা কোনো ক্ষমতাসীন ব্যাক্তির সার্পোট নিয়ে একটা স্কুল খুলে বসছে। এটা নিয়মের বাহিরে।

 

সরকারি অনুমতি সহ রেজিস্টেশন নিয়ে কিন্ডারগার্টেন খোলা হচ্ছে এমন কথার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি আদেশ শিক্ষার্থী থাকলে আমরা বই দিতে বাধ্য। তাছাড়া তারা ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুল গঠন করার পর বই এর জন্য আবেদন করেন। তখন আমাদের বই দিতে হয়। এ অবস্থায় সরকার যদি এ ব্যবস্থা বন্ধ না করে আমরা তো বন্ধ করতে পারি না। এসব স্কুল গুলোতে শিক্ষক এর মান তেমন ভালো হয় না। যার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার মান তেমন ভালো না। অভিভাবকরা মনে করেন টাকা দিয়ে পড়ালেই হয়তো ভালো শিক্ষায় সন্তান বড়ো হবে।

 

কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষার মানের বিষয় এক অভিভাবক যুগের চিন্তাকে বলে, সরকারি স্কুলের পরিবেশ বা নিরাপত্তা ভালো হয় না। যার ফলে আমরা আমাদের বাচ্চাদের কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়াই একটু বেশি টাকায়। ভালো শিক্ষার দিয়ে ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ গড়তে সবাই চায় যেটা সরকারি স্কুলে পড়ালে সম্ভব হয়ে ওঠেনা। আমরা নিজেরাও সরকারি স্কুলে পড়ালেখা করেছি তখন শিক্ষা ব্যবস্থা ভালো ছিল। সেরকম থাকলে হয়তো সরকারি স্কুলের পড়ানোর আগ্রোহ থাকতো।

 

একই বিষয় অন্য একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষার্থীর মা বলেন, বাচ্চাদের পড়ালেখা নিয়ে আমাদের একটু বেশি ভাবতে হয়। যার কারণে আমরা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে উপর ভরসা করে থাকি। আর আমাদের বাচ্চাদের প্রাথমিক শিক্ষার যে অক্ষর জ্ঞান সেটা খুব যত্নের সাথে তারা দিয়ে থাকে। সে অনুযায়ী সরকারী স্কুলে মান এতো ভালো হয় না।

 

নারায়ণগঞ্জের ম্যাগনাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট আদরের সাথে পাঠ দান দেই। আর আমাদের শিক্ষকরা সবাই উচ্চ শিক্ষিত। আমাদের পড়ালেখার পাশাপাশি আমরা শিশুদের নানা ধরণের কার্যক্রমে আওতায় আনি এবং আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি নানা বিষয় জ্ঞান লাভ করে।

 

নারায়ণগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি ফাতেমা বেগম বলেন, কিন্ডার গার্ডেন স্কুল গুলো সরকারকে সাহায্য করছে। সরকার পর্যাপ্ত পরিমান শিক্ষাব্যবস্থা নেই বলেই কিন্ডার গার্ডেন স্কুল গুলো গড়ে উঠছে। আর পর্যাপ্ত পরিমান শিক্ষার্থী শিক্ষার আলো পাচ্ছে সে হিসেবে আমরা সরকারকে সাহায্য করছি। আর যেহেতু আমাদের সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হয় আমাদের আর্থিক চাহিদাও একটু বেশি থাকে। সরকার আমাদের ব্যাপারে একটু ভাবলে আমাদের শিক্ষার মান আরো ভালো হতো।

 

এবিষয় নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোসা: ইসমত আরা সাথে একাধিক বার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।

এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর