রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৮ ১৪৩১

কিশোর গ্যাং নির্মূলে নীরব ফতুল্লা থানা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪  

# কিশোর গ্যাং, মাদক নির্মূলে বিট পুলিশিং ও জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে : ওসি ফতুল্লা
 

দিন যতোই যাচ্ছে ততোই অশান্ত হয়ে উঠছে ফতুল্লা শিল্পাঞ্চল। সম্প্রতি বেড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং ও তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। বেড়েছে ডাকাতির মতো ঘটনাও। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত ঠেকাতে ব্যর্থ ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। রাত এবং দিনে শুধু মাত্র টহল দেয়া ছাড়া পুলিশ নীরব ভুমিকা পালন করছে বলেও সম্প্রতি কথা উঠেছে। গা ছাড়া ভাবে রয়েছেন খোদ পুলিশ সদস্যরাও। এমন অভিযোগও বিস্তর। বিট পুলিশিংয়ের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারাও কোনো রকম দায়িত্ব পালন করছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।


তথ্যমতে,ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ১০ লাখেরও অধিক। এই বিশাল জনসংখ্যার নিরাপত্তা দিতে জন্য সব সময়ই পুলিশের সংখ্যা অপ্রতুল। সেই সাথে থানা পুলিশের জন্য নেই প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট। তবে পুলিশ প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলে ফতুল্লার অপরাধ অনেকাংশে কমে যেতো বলে সাধারণ মানুষের দাবী। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কিশোর গ্যাং মাথা চারা দিয়ে উঠলেও, ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ কিশোর গ্যাং নির্মূলের ব্যাপারে এলাকা ভিত্তিক কোনো সচেনতা মূলক কর্মকান্ড করেন না অথবা অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করে না বলেও সূত্রের দাবী।


সূত্র জানায়,এলাকা ভিত্তিক বিট পুলিশিং অফিসার ও অফিস থাকলেও ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের অফিসাররা তাদের কার্যক্রম করছেন না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার কর্মী পরিচয়ে বেড়েছে কিশোর গ্যাং। শুক্রবার রাতে ফতুল্লার শিয়ার চর তক্কার মাঠে  সিয়াম নামে একজন কিশোর গার্মেন্টস কর্মী অপর কিশোর গ্যাং সদস্যদের দ্বারা ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। নিহত  সিয়াম গার্মেন্টস শ্রমিক হলেও মূলত সে ছিলো ফতুল্লা তক্কার মাঠ এলাকার একজন কিশোর গ্যাং সদস্য। যাদের হাতে সে নিহত হয়েছেন তারাও একটি রাজনৈতিক দলের বলয়ের ব্যানারে থেকে এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ সংগঠিত করতো বলেও অভিযোগ রয়েছে।


এছাড়াও গত ১০ নভেম্বর রাতে ফতুল্লার পৌষার পুকুর পাড় এলাকায় তামির সামের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করে অপর কিশোর গ্যাং সদস্যরা। জুনিয়র সিনিয়রের তর্কে ঐ হত্যাকান্ড সংগঠতি হয়েছিলো বলে জানা গেছে।  অপরদিকে গত ৮ ডিসেম্বর ফতুল্লার পাগলা তালতলা এলাকায় নদীর পাড়ে মাদকাসক্তারা সজিব দেবনাথ নামের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করে মাদকাসক্ত রবি ও  সাজ্জাদ নামের দুই মাদকসেবী। তবে এই কিশোর গ্যাং নির্মূলে অদ্যাবধি ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ নানা অঘটন চল্লেও কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহন করছে না। এমন অভিযোগ ফতুল্লাবাসীর।


ফতুল্লাবাসীর অভিযোগ, আগে পুলিশ রাতে যেভাবে টহল দিতেন  এখন আর সেই আগের মতো তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না। ফতুল্লার ৫/৭ টি ডেঞ্জার জোনে  রাতে পুলিশী টহল বা পেট্রোল টিম বাড়ালে অপরাধ অনকাংশে কমে যেতো। পুরো ফতুল্লাকে আগে রাতের বেলায় ৯টি টিমের দায়িত্ব ছিলো নিরাপত্তা দেয়া। এখন রাতে মাত্র ৫টি টিম দ্বারা টহল দেয়া হয়। এক স্থান থেকে টহল দিয়ে পুনরায় সেই স্থানে আসতে পুলিশের ২/৩ ঘন্টা সময় লেগে যায়। আর এ সময়েই ফতুল্লার অপরাধ জোন গুলোতে অপরাধীরা অপরাধ সংগঠিত করে নিরাপদ অবস্থানে চলে যায়। এছাড়াও  ফতুল্লা মডেল থানার বেশির ভাগই অপরপক্কি অফিসারকে দায়িত্ব দেয়ার কারনে,এই থানা এলাকার মতো গুরুত্বপূর্ন একটি থানায় অপরাধ কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা বলেও অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন।


এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শরিফুল হক বলেন,কিশোর গ্যাং নির্মূলে এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এতিমধ্যে বিট পুলিশের অফিসারদের দায়িত্বও দেয়া হয়েছে। অফিসাররা তাদের দায়িত্ব কতোটা পালন করছে সে ব্যাপারেও মনিটরিং করা হবে। শীঘ্রই ফতুল্লার প্রতিটি এলাকায় মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে পুলিশের পাশাপাশি জনগনকেও সম্পৃক্ত করা হবে।  সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নির্মূলে যতোটা কঠোর হওয়া প্রয়োজনে তা-ই করা হবে।  তিনি আরো বলেন, যে পরিমান অফিসার থাকার কথা সে পরিমান অফিসার থানায়  না থাকায় টহল টিমগুলো বাড়ানো যাচ্ছে না। এছাড়াও থানায় লজিস্টিক সাপোর্টও নেই । যার কারনে কিছু সমস্যা হচ্ছে। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব বিষয়গুলো সমাধান হবে।
 

এই বিভাগের আরো খবর