শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

কুপিয়ে হত্যার পর বাড়ির সামনে লাশ ফেলে গেল দুর্বৃত্তরা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

 

# ‘খুনীরা ডাইক্কা কয়, ‘এইবার ছেলের লাশ লইয়া যাও’
# ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদের চাচাতো ভাই অনিককে খুঁজছে পুলিশ
# এককথায় বললে এরা ছাত্রলীগের কেউ না : অয়ন ওসমান

 

 

ছাত্রলীগের নাম পরিচয়ে অপকর্ম করে বেড়ানো ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু যখনই কোন ছাত্রলীগ নেতা কিংবা তার ঘনিষ্ঠ কেউ কোন ঘৃণ্যতম অপরাধ করেন তখন সেই দায় ছাত্রলীগ কিংবা অন্য কেউ নিজেদের ঘাড়ে নেন না। কিছুদিন পরপরই এমন ঘটনায় কেউ প্রাণ দিচ্ছেন, আবার কেউ বা আহত হচ্ছেন। পরিবারের উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব হচ্ছেন। রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা রাজনীতিকদের আশীবার্দ থাকার বড়াই দেখিয়ে প্রকাশ্যে খুনের মতো ঘটনা ঘটাতেও দ্বিধাবোধ করছেন না।

 

শুক্রবার রাতে প্রকাশ্যে দু্ই যুবককে চাষাড়া বালুর মাঠ এলাকায় দলবদ্ধভাবে কুপিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে পরিবারের কাছে লাশ ফেলে রাখার খবরটিও দিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসব দুর্বৃত্তরা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও তোলারাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন বলে জানা গেছে।

 

শুক্রবার রাতে ঘটনা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এবং নানা স্বার্থসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আলামিন ওরফে দানিয়াল (২৮) ও শুভ (২২) নামের দুই যুবককে চাষাড়ার বালুর মাঠ এলাকার এ্যাপোলো ক্লিনিকের সামনে দলবব্ধ হয়ে পিটিয়ে কুপিয়ে গাড়িতে তুলে অপহরণ করে ফতুল্লার মাসদাইর ছোট কবরস্থানের সামনে ফেলে রেখে পরিবারের কাছে জানিয়ে দিয়ে যায়, ‘এইবার লাশ লইয়া যাও!’ এমন খবর পেয়ে আলামিন ওরফে দানিয়ালের মা মুক্তার বেগম বলেন, ‘এখন আমার ছোট পোলাটার কারণে আমরা বড় পোলার লাশ সামনে রাইখ্যাও মুখ খুলেতে পারতেছি না।’

 

অপরদিকে গুরুতর আহত শুভর মা নাজমীন জানান, ‘আমরা কেউ মুখ খুলতে পারি না। খুব ক্ষমতাবান ছাত্রলীগের নেতা হাবিবুর রহমান রিয়াদের চাচাতো ভাই অনিকের সাথে এই দ্বন্দ্বের জের ধইরা সেই পুরানো সোর্স রমু (৬৫) তার পোলা ফরহাদ, মুরাদ ও নাতি জসিমের পোলা অনিক প্রধান দলবল নিয়ে রমু সামনে দাঁড়াইয়া আমার পোলারে কোপাইয়া মাইরা ফালাইলো। পোলাটারে খুন কইরা যাওনের সময় ডাইক্কা কইয়্যা যায়, ‘শুভ আর দানিয়ালের লাশ লইয়া যাও।’

 

এরপর শুভ আর দানিয়ালকে হাসপাতালে লইয়া আনার পর ডাক্তার কইলো দানিয়াল মারা গেছে আর শুভর অবস্থা খুব খারাপ, ওরে ঢাকা (ঢামেক) লইয়া যান। আমরা এলাকার মানুষ বোবা হইয়া গেছি। পুলিশ এই খুনী রমু রে বন্ধু আর বড় ভাই কইয়্যা ডাকে। আর অনিক শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান, রিয়াদের নাম কইয়া এলাকায় এই খুন খারাপি করলেও আমরা বোবা। কয়দিন আগেও আমার পোলারে মাইরা কয়, এইবার বাইচ্যা গেলি এরপর কি হইবো টের পাবি।’  ’

 

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১ টায় চাষাড়ার ব্যস্ততম এলাকায় এমন পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে অপহরণ করে তুলে নেয়ার ঘটনায় একদিকে গণমাধ্যম কর্মীরা হন্যে হয়ে হতাহতদের খুঁজতে থাকে অপরদিকে পুলিশ তৎপর হয়ে উঠে এই ঘটনার নেপথ্যের সকল তথ্য উদঘাটনের।

 

শেষ পর্যন্ত শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত ১২ টা ৪০ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আনার পর শুভ (২২) নামের গুরুতর আহতেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় জরুরী বিভাগের চিকিৎসক নাজমুল হোসেন। একই সাথে নিহত আল আমিন ওরফে দানিয়ালকে ময়না তদন্তের জন্য ফতুল্লা থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়।

 

নিহত আমিন ওরফে দানিয়াল মাসদাইর এলাকায় দেলোয়ার মিয়ার ছেলে। আর আহত শুভ একই এলাকার শাহজালালের ছেলে। নিহত দানিয়াল অটোরিকশা গ্যারেজের ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন। আর শুভ একটি কারখানার মেশিন অপারেটর হিসেবে কর্মরত।

 

আমার সঙ্গে দানিয়ালের বিয়ে হয়। এরই মধ্যে কয়েকমাস ধরে আমরা আলাদা বাসা নিয়ে ভাড়াবাড়িতে বসবাস করে আসছিলাম। রাত দশটার দিকে দানিয়াল তার বন্ধু শুভকে নিয়ে চাষাঢ়া ঘুরতে গিয়েছিল। এরপর খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে দেখি তার মরদেহ পড়ে রয়েছে।

 

ফতুল্লা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তাসলিম আহমেদ জানান, ‘বেশ কিছুদিন আগে ওই এলাকার রমুর নাতি হিসেবে পরিচিত অনিক ও তার লোকজনের সঙ্গে নিহতের মারামারি ঘটনা ঘটে। রমু ওই এলাকার শীর্ষ মাদক কারবারি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তার সঙ্গে বিরোধকে কেন্দ্র করে দানিয়ালের ওপর হামলা করে। এ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেপতার করা হবে। এছাড়া নিহত যুবকের বিরুদ্ধেও থানায় মামলা রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে রমুকে আটক করা হয়েছে।’

 

ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে এমপি শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমান যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের যেই নেতার পরিচয়েই কিংবা নাম বিক্রি করুক না কেন অপরাধী কেউ ছাড় পাবে না। তৃণমূল যে সকল নেতারা আছেন তারা তো আছেনই কিন্তু সিনিয়র নেতারা যদি এলাকাভিত্তিক ব্যবস্থা নিতেন, এদের চিহ্নিত করে এদের নামগুলো প্রকাশ করে দিতেন তাহলে কিন্তু এসব সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়ে যেত। প্রশাসন তো আছেনই, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।

 

কিন্তু ঘটনা হয়ে গেছে, এখন অপরাধীরা ছাত্রলীগ নেতা তো বটেই বিভিন্ন মানুষের আশেপাশে সুযোগ নেয়ার জন্য ঘুরে এবং নাম বিক্রি করে তাদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে। ওখানে স্বার্থ অবশ্যই আছে। এরকম অজস্র ঘটনা ঘটছে। আমাদের নাম ব্যবহার করছে কোথাও, কোথাও বা আমাদের প্রতিপক্ষের নাম ব্যবহার করছে, যখন যেটার সুযোগ আসে, সেখানেই ব্যবহার করে। এদের বিরুদ্ধে একটি ব্যবস্থা নেয়া খুবই জরুরি।

 

আমরা প্রশাসনের কাছে এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জোর দাবি জানাই। এমন উদাহরণ তৈরি করা উচিৎ যাতে কেউ এমন সাহস না করে। এককথায় বললে এরা ছাত্রলীগের কেউ না। আধিপত্যের লড়াই যদি হয়ে থাকে কেউ ছাত্রলীগের নাম বা কোন পরিবারের নাম ব্যবহার করে এমনটা কেন করবে এটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে গেছে।’ এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর