শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৩ ১৪৩১

খোকনের চ্যালা চাঁদাবাজ পিন্টু গ্রেফতার

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২৪  


# রূপগঞ্জ কব্জায় নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে খোকন
 
গত ৫ই আগষ্ট আওয়ামীলীগের শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জের অন্যতম ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন রূপগঞ্জ উপজেলার অভিশাপ হিসেবে গণ্য হয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন। রূপগঞ্জ উপজেলার আওতাধীন ৭টি ইউনিয়ন ২টি পৌরসভা জুড়ে যত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা, ডিস ব্যবসা, ইন্টারনেট ব্যবসা, ওয়েস্টিজ ও ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, হাট-ঘাট, বিভিন্ন মালিক সমিতি, ভূমিদূস্যতা, বালু মহল, বিদ্যুৎ চোর সিন্ডিকেট, গ্যাস সিন্ডিকেট, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি, পরিবহন সেক্টর সকল অপকর্ম পরিচালনা করছেন এই গোলাম ফারুক খোকন ও তার সমর্থকরা। তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ‘খোকন ভাই কল দিছে’ ফোনে কথা বলিয়ে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকার গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরী থেকে জোরপূর্বক ওয়েস্টিক মালামাল ও ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছেন। বর্তমানে রূপগঞ্জে যা শুরু করেছে কোন দিক থেকেই থামানো যাচ্ছে না খোকন ও তার অনুসারীদের। তার বাহিনীর অত্যাচারে উপজেলার বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা বেশি অতিষ্ঠ। কিন্তু বিভিন্ন্ ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারছে না। আর এই সকল অপকর্মে তাকে প্রকাশ্যে শেল্টার দিচ্ছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। এদিকে বর্তমানে খোকনের ইশারায় রূপগঞ্জ জুড়ে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য লুটপাট লিপ্ত হন বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা। আর এই সকল অপরাধের নিয়ন্ত্রণ বা নেতৃত্বে থাকতেন বহু ক্ষেত্রে খোকন ও তার সস্ত্রাসী বলয়। তার বিরুদ্ধে জেলা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগ।


এদিকে রূপগঞ্জে দুই চালককে মারধর করে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্পের ট্রাকভর্তি বালু লুটের ঘটনায় অভিযুক্ত জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের অনুসারী তারাবো পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান পিন্টুকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। এদিকে বর্তমানে গোলাম ফারুক খোকনের নির্দেশনায় তারবো পৌর বিএনপির সভাপতি তাসিক ওসমান ও সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান পিন্টু পুরো তারাবোবাসীকে অতিষ্ঠ করে ফেলেছেন। এদিকে গত কয়েকদিন পূর্বে তাসিক-পিন্টু ও সেখানকার কিছু যুবদলের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে ব্যবসায়ীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে রেখেছেন। যা নিয়ে তারাবোবাসী অনেকটাই অতিষ্ট হয়ে পরেছে এই পিন্টু বাহিনীর দ্বারা।


গতকাল মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্পের ট্রাকভর্তি বালু লুটের ঘটনায় অভিযুক্ত তারাবো পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম পিন্টুকে গতকাল সকালে উপজেলার তারাবো পৌরসভার গন্ধর্বপুর এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। তার বাড়ি তারাবো পৌরসভার গন্ধবপুর এলাকায়।


এ দিকে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্পের ক্যাম্প ইনচার্জ আকন্দ রিয়াদ মুর্শেদ অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য কাঞ্চন নলপাথর এলাকা থেকে ভাই ভাই এন্টার প্রাইজের কাছ থেকে বালু ক্রয় করে আসছিলেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুর একটার দিকে দুটি গাড়ি যোগে নল পাথর থেকে বালু লোড করে প্রকল্পের দিকে আসছিলেন চালক শরিফ সরদার ও আরমান মিয়া। গন্ধবপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পৌছালে হাফিজুর রহমান পিন্টু ও তার লোকজন গাড়ি দুটি গতিরোধ করে এ সময় প্রতিরোধের কারণ জিজ্ঞেস করলে ওই দুই চালককে বেধড়ক মারপিট করা হয়। পরে অন্য গাড়ি যোগে বালু আনলোড করে লুট করে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে এ প্রকল্পের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিয়ে যায়।


এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, তারাবো পৌরসভার গন্ধর্বপুর এলাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ওই প্রকল্পে বেশ কিছুদিন যাবত তারাবো পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান পিন্টু ঝামেলার চেষ্টা করে আসছিলেন বলে অভিযোগ করেন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্পের ক্যাম্প ইনচার্জ আকন্দ রিয়াদ মুর্শেদ। আকন্দ রিয়াদ মুর্শেদ যৌথবাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। আর ওই অভিযোগের ভিত্তিতে হাফিজুর রহমান পিন্টুকে আটক করে থানা পুলিশের সোপর্দ করেন যৌথবাহিনী।


এ দিকে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত হাফিজুর রহমান পিন্টু মূলত জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের চ্যালা হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে বিগত দিনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে থাকা গোলাম দস্তগীর গাজীর সাম্রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ করছেন এই বিএনপি নেতা গোলাম ফারুক খোকন। বর্তমানে চ্যালা চামুন্ডারা যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক বা গ্রেফতারে আসলে ও শেল্টার দাতা হিসেবে গোলাম ফারুক খোকন বারবারই বেঁচে যাচ্ছে। বর্তমানে পিন্টুর গ্রেফতারের খবরে অনেকটাই স্তব্ধ হয়ে পরেছে রূপগঞ্জ। এদিকে গোলাম ফারুক খোকনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মুড়াপাড়া ইউনিয়নের আওতাধীন দখলে রাখা গার্মেন্টসগুলোর নাম হলো- সিম ফেবিক্স, এস কে এফ র্ফামাসিটিকে‘স, ওয়াটা ক্যামিকেল‘স, এসি আই, টাইগার কোমল পানিয়/মিনারেল ওয়াটার, মীর সিমেন্ট, মেঘনা গ্রুপ, রূপসী কনক্রিট, সিকদার সল্ট, বি এইচ এল গ্রুপ। একই সাথে গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন জুড়ে তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে- গ্রামটেক, ফকির এপারেলস, সানজানা গার্মেন্টস। তা ছাড়া তারাবো পৌরসভা এলাকায় এ সি এস ট্রেক্সটাইল। সবই বর্তমানে খোকন ও তার লোকজনদের দখলে। এদিকে সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান বালু হাবিবের রূপগঞ্জ সকল ড্রেজারের নিয়ন্ত্রণ, নুরুজাম্মান খানের ১৭টি ড্রেজারের ব্যবসা পরিচালনা, রূপগঞ্জ উপজেলার সকল হাইজিং কোম্পানীর সমস্ত মিল ফ্যাক্টরী একক নিয়ন্ত্রণকারী, শীতলক্ষ্যা জেডির সকল লোড-আনলোড ড্রেজারের নিয়ন্ত্রণ সবই বর্তমানে একক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিএনপি নেতা গোলাম ফারুক খোকন। শুধু তাই নয় এমন আরো শত শত প্রতিষ্ঠান বর্তমানে খোকনের নিয়ন্ত্রণে। তা ছাড়া রূপগঞ্জ দখলে রাখতে তাদের বলয়ের লোকজন দিয়েই মূলদল ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি সাজিয়ে রেখেছেন এই খোকন। এদিকে আওয়ামী লীগের অন্যতম দোসর বসুন্ধরা গ্রুপের সাথে আতাঁত করে রূপগঞ্জে একটি বিশাল আধিপত্য বিস্তারের পায়তারা করছেন তিনি। এ ছাড়া দাউদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারীর মাধ্যমে পূর্বাঞ্চল এলাকায় জমি খেকো বনে যাচ্ছেন এই খোকন। বর্তমানে এই খোকনের চ্যালাদের পাশাপাশি খোকনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চাচ্ছেন স্থানীয় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীবৃন্দ

এই বিভাগের আরো খবর