শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

গণমাধ্যমকর্মীদের অবদান নিয়ে গিয়াসউদ্দিনের অসন্তোষ  

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ১ অক্টোবর ২০২৪  


# আমি বিশ্বাস করি, ক্ষমতায় না থাকলেও মানুষের সেবায় কাজ করা যায়
২০০৬ সাল থেকে ২০০২৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। আর এই দীর্ঘ সময়ে সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরাও ছিল দৌড়ের উপর। বিশেষ করে হামলা-মামলা ও বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়ে বিএনপির অনেক নেতা কর্মীর পরিবারই তাদের স্বজনদের হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব। নির্যাতন-হয়রানির শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ভবঘুরে ও যাযাবর হয়ে থাকতে হয়েছে অনেককে।

 

 

আর প্রতিপক্ষের সাথে সাথে পুলিশের হয়রানিসহ জেল-জরিমানা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ ছিল বিএনপির বিভিন্ন নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মুখে মুখে। তবে তারা এতদিন প্রকাশ্যে নির্ভয়ে বলতে পারেননি তাদের এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পেশার মানুষের ভূমিকার কথা। আর এবার নিজেদের সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথাই নির্ভয়ে ও আবেগ জড়িত কণ্ঠে যেন ঢেলে দিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপি মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।

 

 

সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের অবদান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন নারায়ণগঞ্জে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, তবে প্রেসক্লাব হচ্ছে সবথেকে সম্মানীয়। এখানে কি সাংবাদিকদের এই বিষয়গুলো বিবেচনা যায় না? আমাদের প্রেসক্লাব যদি সম্মানিত হয়, তাহলে আমরাও গর্ব করে অন্যান্য জেলার প্রেসক্লাবের সাথে তুলনা করে কথা বলতে পারব।

 

 

আবার আপনারাও চাইবেন কোন নেতা যেন গডফাদারের না হয় দেশ ছেড়ে না পালায়। গতকাল সোমবার নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র এক মতবিনিময় সভায় এ ধরণের অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।
 

 


বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, নারায়ণগঞ্জে এই মুহুর্তে যানজটের চেয়ে বড় কোনো সমস্যা নেই। তাই যানজটসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানসহ এর উন্নয়নে এবং সুন্দর ও নিরাপদ নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলার জন্য এখানকার সব ভালো মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি দায়ের হওয়া মামলাগুলো আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্বজনরা করেছেন।

 

 

যদিও এখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের কোনো হাত নেই তবুও আমরা প্রশাসনের কাছে আহবান জানাবো, নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হয়। তবে, সাংবাদিকতাসহ অন্যান্য পেশার আড়ালে যারা স্বৈরাচারের দোসর ছিলো, সুবিধাভোগী ছিলো তারা যেন পার না পায় সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
 

 


তিনি আরও বলেন, আজ আমি সভাপতির চেয়ারে আছি কাল না-ও থাকতে পারি। কিন্তু আমি সর্বদা আপনাদের পাশে থাকবো। আপনারা নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে, নারায়ণগঞ্জবাসীর কল্যাণে কাজ করেন। আমি বিশ্বাস করি, ক্ষমতায় না থাকলেও মানুষের সেবায় কাজ করা যায়। প্রেসক্লাবের বিষয়ে বিএনপি এই নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানজনক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব।

 

 

সাংবাদিকতা করার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হবে সাংবাদিক এবং রাজনীতিবিদদের ভালো কাজের মাধ্যমে। ভালো কাজ করলে মানুষ আমাদের পক্ষে থাকবে। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলতে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।
 

 


আমাদের কাছে প্রমাণ আছে কিছু কিছু সাংবাদিক এফআইআর-এ আমাদের দলের নেতাদের নাম লিখে দিয়েছে। অনেক সাংবাদিক আমাদের লোকজনদের ডিবির সাথে গিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে।  আপনারা অনেক নিউজ করেন, কিছু নিউজ আমার পক্ষেও থাকে বিপক্ষেও থাকে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে নিউজ করার পর, আমি কি কোন সাংবাদিককে ফোন দিয়েছিলাম?

 

 

অথচ এমন সময় গেছে যখন স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে একটা কথাও আপনারা বলতে পারেন নি। সাংবাদিকদের ওপর মামলা হুমকি ও মারপিট করা হয়েছে। আমাদের দলের ভেতরেও তো সবাই ভালো আছে এমনটা নয়, তবে আমরা যখন দলের কোন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অপরাধের তথ্য পেয়েছি সাথে সাথে একশন নিয়েছি। অনেকের আমার কথা ভালো না লাগতে পারে কিন্তু আমার মনে যা আছে আমি সেটা খুলে বলতে চাই, আমি মুনাফিক না।
 

 


এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির যখন বেহাল অবস্থা, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অভিযোগে ও কর্মপদ্ধতিতে বিএনপির নাকানিচুবানি অবস্থা, তখন সেই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর মনিরুল ইসলাম রবি ও মামুন মাহমুদের আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ১৭ জুন গিয়াসউদ্দিনকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।   এন. হুসেইন রনী  /জেসি