বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

গ্রেপ্তার হচ্ছেন পলাতক নেতারা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২৪  

গত ৫ আগষ্ট বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে পরে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে শাসনের পতন ঘটে। তারই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ দিনের একচেটিয়া শাসন-শোষন, নিপিরন,অত্যাচার জেল জুলুম,অন্যায় অবিচারের এক যুগের বেশি সময় ধরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে একচেটিয়া শাসন এবং শোষন করেছে শামীম ওসমান সহ পুরো ওসমান পরিবারেও পতন হয়েছে। যাদেরকে গডফাদার, ভন্ডামী, বিশ্ববেহায়া সহ বিভিন্ন উপাদিতে আখ্যায়িত করেছে নগরের রাজনৈতিক বোদ্ধমহল। 

 

ইতোমধ্যে ওসমান সম্রাজ্যের সদস্যরা হত্যা মামলার আসামী হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তার মাঝে আবার কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়ে আইনের আওতায় এসেছে। ওসমান শাসনের সেনাপতিদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন রাজনৈতিক বোদ্ধমহল।

 

এদিকে ওসমান পরিবারের অন্যতম সদস্য সারাদেশে গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমান, তার বড় ভাই সেলিম ওসমান তাদের ভাতিঝা আজমেরী ওসমান মিলে নারায়ণগঞ্জে গত ১৬ বছরে বিশাল এক ওসমানীয় সম্রাজ্য গড়ে তুলে শাসন শোষন চালান। যার পতন ঘটেছে গত ৫ আগষ্টে আওয়ামী লীগের পতনের পর। তাদের এই সম্রাজ্য দিয়ে শহরের আনাচে কানাচে চাদাঁবাজি, টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণ করেছন। এমনকি তাদের লোকজন ভুমি অফিস সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে লাগামহীন ভুমিদস্যুতা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। 

 

তাছাড়া ৫ আগষ্টে শেখ হাসিনার পতনের পরে এক মুুহুর্তে  ওসমানদের সম্রাজ্য ভেঙ্গে যায়। গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমানের দরবারের মুরীদরা নানা অপকর্মের কারনে তাদের নামে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় হত্যা মামলা হওয়ায় চোরের মত পালিয়ে বেরাচ্ছে। শামীম ওসমান বলেছিলেন, আমি শেখ হাসিনা ছাড়া কাউকে গণায় ধরি না। অথচ এই শামীম ওসমানই যাদের দিয়ে তার সম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তাদের ফেলে রেখে রাতের আধারে পালিয়ে গেছেন। অপরদিকে শামীম ওসমানের সম্রাজ্যের একাধিক সৈনিক ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে আইনের জালে তথা জেলাখানায় কারা ভোগ করতেছেন। 

 

তার মাঝে ৭ অক্টোবর রাজধানী ঢাকা থেকে ফতুল্লা থানা যুবলীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য আজমত উল্লাহ আজমত (৫০) কে গ্রেফতারের পর ফতুল্লা মডেল থানায় সোপর্দ করেছে  র‌্যাব-১১'র সদস্যরা। ফতুল্লা থানায় আগস্ট মাসে ২২ তারিখে দায়ের করা ইব্রাহিম হত্যা মামলার ২২ নাম্বার এজাহারনামীয় আসামী আজমত। তিনি সাবেক এমপি শামীম ওসমান সম্রাজ্যের অন্যতম সৈনিক হিসেবে ছিলেন। সেই সাথে তিনি নিজে বিভিন্ন সভায় বলে বেরাতেন শামীম ওসমানের সৈনিক হয়ে কাজ করে যেতে চান।

 

অন্যদিকে ব্যবসায়ী সংগঠনে আধিপত্য বিস্তার করা ইয়ার্ণ মার্চেন্ট এসোসিয়শনের সদ্য সাবেক সভাপতি লিটন সাহাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ২ নভেম্বার ভোররাত ৩ টার দিকে ঢাকার বেইলি রোড থেকে সুতা ব্যবসায়ীদের সংগঠনের এই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তারেক আল মেহেদী। তাছাড়া লিটন সাহা ওসমান পরিবারের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২০২২ সনের নির্বাচনে ওসমান পরিবারের এক কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে ভোটারদের টাকা বিলি ও ধর্মীয় গ্রন্থ ছুঁইয়ে শপথ করিয়ে তিনি সমালোচিত হন। তিনি ওসমানন সম্রাজ্যের দোসর হয়ে ব্যাবসায়ী সংগঠন ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি হয়ে সেখানে ত্রাসের রাহত্ব কায়েম করেন।
 

মেহেদী বলেন, 'নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশের এক অভিযানে ঢাকা থেকে তাকে (লিটন সাহা) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
 

এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একাধিক হত্যা মামলা ও বৃদ্ধ আব্দুর রহমান হত্যা মামলায়  (১২ নভেম্বর) দিবাগত রাত দশটায় সদর উপজেলার ফতুল্লা থানাধীন দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকা থেকে আড়াইহাজার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপনকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তিতে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। ১৩ নভেম্বর বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান বিথীর আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের ইন্সপেক্টর (ইনচার্জ) মো. কাইউম খান।
 

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, এই স্বপন ছিলেন সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু এবং সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে তিনি বাবুর লোক হয়ে কাজ করতেন বেশি। শামীম ওসমানের সাথে সখ্যতা থাকায় ফতুল্লা তার শশুরবাড়ি এলাকায় আশ্রয় নেন। আর এতে করেই তার কপাল পুড়ে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর এলাকার যুবলীগ নেতা রিপন ওরফে সেমাই রিপন গ্রেপ্তার হয়েছে। তিনিও শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটুর সাথে সখ্যতা রেখে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সেই সাথে ওসমান শিবিরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে নিজেকে জাহির করে বেরাতেন এলাকায়।
 

এছাড়া কথায় আছে নিজে বাচলে বাপের নাম শামীম ওসমানের বেলায়ও তাই হয়েছে। মুরীদদের ফেলে রেখে নিজে পালিয়েছে। তার দরবারের মুরীদদের কি হাল হবে কিংবা কি হলো তা নিয়ে ওসমানীয় দরবারের পীর শামীম ওসমানের হদিস নেই। আর একেই বলে নিজে বাচঁলে বাপের নাম। তবে ওসমান শিবিরের একে একে গ্রেপ্তার শুরু হতে যাওয়ায় অন্য কালপিটদেরও গ্রেপ্তারের দাবী জোরালো হয়েছে। সেই সাথে ওসমানীয় সম্রাজ্যের তালিকায় যারা রয়েছেন কিংবা শামীম ওসমানের প্রধান সেনাপতি হিসেবে পরিচিত ছিলেন তাদেরও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবী উঠেছে।

এই বিভাগের আরো খবর