রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

ঘরে বসে কয়দিন খামু !

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩ জুলাই ২০২৪  


মুষলধারে ঝড়ছে বৃষ্টি। গত ২৭জুন থেকে মৌসুমি বৃষ্টিপাতে একদিকে নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা অন্যদিকে খেটে খাওয়া দিনমজুরদের কাজ না থাকায় চরম বিপাকে রয়েছেন তারা। গতকাল ২ জুলাই মঙ্গলবার সকালে  ভক্তবাড়ি এলাকর দেখা যায় একদল রাজমিস্ত্রী শ্রমিক বসে আছেন তাদের পূর্ব নির্ধারিত কাজে যোগদানের জন্য। কিন্তু কাজটি  খোলামাঠে থাকায় বৃষ্টির কারনে বন্ধ রয়েছে গত ৫ দিন ধরে। কথা হয় রাজমিস্ত্রী সরদার নাজমুল ইসলামের সঙ্গে।  

 

 

তিনি বলেন, এভাবে বৃষ্টি থাকলে আমার লেবারগুলো না খেয়ে ভুগবে। আমার ৬ টি প্রজেক্টের কাজ বন্ধ রেখেছি। ফলে আমার অধীনে ২৫ জন শ্রমিক কাজহীন। এদের মাঝে শফিকুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক বলেন, অভাবের তাড়নায় রাজমিস্ত্রীর জোগালির কাজ করি। কিন্তু এ টাকায় হাটবাজারের সদাই কিনতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। কাপড়, ঔষুধ ফল এসব কেমনে খাবো। তার উপর কিস্তির চাপ থাকে। আর গত ৫ দিন ধরে কোন কাজ নাই। ঘরে বসে কয়দিন খাবো?

 


একই সড়কে খুব সকালে অটোরিক্সা নিয়ে বেড়িয়েছেন কাশেম মিয়া। বৃষ্টি থাকায় লোকজন খুব একটা বের হচ্ছেন না ঘর থেকে। তবে এইচএসসি পরীক্ষা থাকায় কিছুটা স্বস্তি তার। বৃষ্টিতে ভোগান্তি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টানা বৃষ্টি তে সড়কে কোথাও কাঁদা,কোথাও ভাঙা আবার কোথাও পানি জমে আছে। ডেমরা কালীগঞ্জ সড়কের ভক্তবাড়ি হাবিবনগর এলাকায় পানি জমে থাকলেও কেউ তা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেনি। তাই এ সড়কে আমরা যাত্রী পাইনা। আবার বৃষ্টির কারনে যাত্রী কম। তাই কষ্টে আছি।

 


শীতলক্ষ্যার খেয়া ঘাটের প্রায় ২০ থেকে ৩০ টি নৌকা বাঁধা থাকতে দেখা গেছে। যাত্রী কম থাকায় নৌকা মাঝিরা ঘর থেকে বের হননি। তবে হতদরিদ্র ও নিন্ম আয়ের মাঝিরা ঋণের  কিস্তির চাপ সামলাতে বৃষ্টিতে ভিঁজেই হাতে তুলে নিয়েছেন বৈঠা। যাদের জরুরী যাতায়াত করতে হয় তাদের পার করে দিচ্ছেন অন্যদিনের মতোই। এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে নৌকা মাঝি ইব্রাহিম মিয়া বলেন, নদীতে জোয়ারের পানি বেড়েছে,স্রোতও বেড়েছে। তবে বৃষ্টির কারনে যাত্রী নাই।

 


এভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার নিন্ম আয়ের খেটে খাওয়াদের কষ্টের কথা। তাদের হাহাকার বাড়ছে টানা বৃষ্টিতে। কাজ না থাকলেও এনজিওদের  কিস্তির চাপ রয়েছে। তবুও জীবিকার তাগিদে কারো হাতে বৈঠা,কারো হাতে রিক্সার হ্যান্ডেল, কারো মাথায় টুকরি নেয়ার অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। এদিকে ব্যবসায়ীরাও ক্রেতা পাচ্ছেননা খুব একটা।  এমন চিত্র নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সর্বত্র।

 


রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, টানা বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়ারা।  বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে। সরকারী ভাবে তাদের মাঝে যারা দরিদ্র তাদের সাহায্য করা হচ্ছে। বিত্তবানদের উচিত তাদের খোঁজ খবর নেয়া। আবার নিন্ম আয়ের যারা কিস্তির চাপে আছে তাদের কিস্তি যেন এক সপ্তাহ পরে নেয়। মঙ্গলবার সকালে কাঞ্চন পৌর এলাকার বিভিন্ন  ওয়ার্ডের রাস্তা, নিচু বাড়ি , গ্যারেজসহ বিভিন্ন স্থানে হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠেছে।

 


কয়েকজন অটোরিকশা চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টানা বৃষ্টিতে তাদের উপার্জনের বাহন অটোরিকশা, সিএনজি জলাবদ্ধতার কারনে বের করতে পারছেন না। ফলে দৈনন্দিন জীবনযাপন তাদের জন্য দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। তারা আশঙ্কা করছেন এভাবে আর কয়েকদিন বৃষ্টি হতে থাকলে তাদের বাড়ি-ঘরে পানিতে ঢুকে যাবে।

 


এদিকে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায় “মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ অবস্থা আরও বেশ কয়েকদিন থাকবে।    এন. হুসেইন রনী  /জেসি