সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

ঘুষ ছাড়া সেবা মিলেনা পাসপোর্ট অফিসে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২২  


# সেবা পেতে গেলে পুলিশে দেয়ার হুমকি সহকারি পরিচালক

# গত মাসেও ১৬ দালাল ডিবির জালে গ্রেপ্তার হন
 

বৈধ প্রক্রিয়ায় কেউ-ই নাকি পাসপোর্ট করতে পারেন না এমন অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে। এছাড়া নাম সংশোধনে দিতে হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। তাছাড়া পাসপোর্ট করতে সরকারি ফি থেকে অতিরিক্ত ৪ হাজার টাকা ঘুষ হিসেবে দিতে হয়।

 

 

আর এই টাকা পসপোর্ট অফিসের কর্মচারি থেকে শুরু করে কর্মকার্তরা বিভিন্ন দালালদের মাধ্যমে গ্রহণ করেন থাকেন। সেই সাথে মানুষের সাথে তাদের রূঢ় ব্যবহারের অভিযোগতো আগে থেকেই রয়েছে।

 

 

কেউ কেউ অভিযোগ করে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের সহাকরি পরিচালক জামাল হোসেনতো নিজেকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ভাবেন না; রাজা ভাবেন। তার কাছে যেতে হলে কয়েক ঘাট পার হয়ে যেতে হয়।

 

 

যুগের চিন্তা প্রতিবেদকের সাথে একাধিক সেবা গ্রহিতার সাথে কথা হলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এখানে সেবা পাওয়ার কোন শৃঙখলা নেই। দালাল ছাড়া কেউ পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করতে আসলে, তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। সেই সাথে এই টেবিল সেই টেবিল ঘুরা ঘুরিতো আছেই। আবার লাইনে দাড়িয়ে সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়।

 

 

পাসপোর্ট করতে সেবা নিতে আসা মানুষের কাছ থেকে নির্দ্বিধায় ঘুষ নেন; জেলা আঞ্চলিক অফিস সহকারী পরিচালক জামাল, তার সাথে অফিসের অন্যান্য কর্মচারি, আনসার এমনকি দারোয়ানও কন্টাক করে টাকা নিয়ে থাকেন।

 

 

তাদের সাথে জেলার প্রতিটি এলাকার দালালদের সখ্যতা থাকায়, এই দালাল চক্রের মাধ্যমে টাকা নিয়ে থাকেন। তাছাড়া আশ পাশের দোকানদাররাতো তাদের গৃহপালিত দালাল। অনেকটা এক প্রকার লাইসেন্স প্রাপ্ত দালাল বলে অভিযোগ; সেবা গ্রহিতাদের।

 

 

তাছাড়া  পুরো অফিসের আশপাশে দালাল সিন্ডিকেটের রয়েছে বিরাট জাল। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নতুন পাসপোর্ট করতে সরকারি ফি’র বাইরে গুণতে হয় ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আর পাসপোর্ট তথ্য সংশোধন করতে হলে ঘুষ নিতে ঝাপিয়ে পড়েন অফিস দারোয়ান থেকে খোদ সহকারী পরিচালক জামাল।

 

 

গত রোববার জেলার আব্দুর রহমান নামের এক প্রবাসী এসে জানান, তিনি ১০ দিন আগে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আসেন। তার পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি সিঙ্গাপুর থেকেই তার পাসপোর্টের রিনিউ করতে দিয়ে আসেন। বর্তমান তার পাসপোর্টটি ওই দেশে রয়েছে।

 

 

ভুক্তভোগী আবদুর রহমানের পাসপোর্টটি কিভাবে পেতে পারেন তা জানতে গেলে, নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক জামালের সাথে দেখা করার জন্য গেলে তার পিয়ন বাধা প্রদান করেন।

 

 

অথচ এই সময় আরও কয়েকজন অনায়েসে তার রুমে প্রবেশ করেন। ভিতরে গিয়ে জামালের সাথে কথা হলে, “তিনি কথা শুনার আগেই পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিবেন বলে হুমকি প্রদান করেন।”

 

এসময় তাকে তিনি বলেন, “অন্যায় করে থাকলে ধরাই দিবেন”। পরে তিনি তাকে জানান, “জিডি করে তার কাছে গেলে তিনি তা হেড অফিসে পাঠাবেন। কিন্তু কেন জিডি করা লাগবে? তা তিনি ক্লিয়ার করেন নাই।”

 

 

তারা এই ভাবে মানুষকে হয়রানি করে টাকা খেয়ে সেবা দেন। অন্যথায় তাদের থেকে সেবা পাওয়া যায় না।

 

 

তার পাশে আরেক সোহেল নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, “তিনি ১ মাসে ৫ বার কাগজপত্র ঠিক করতে আসতে হয় তাকে। আসলেই তাকে বলে, এই কাগজ নাই, সেই কাগজ নাই। এগুলো ঠিক করে নিয়ে আসেন। নাম ঠিক থাকলে বলে, পিতার নাম ঠিক নাই এমন নানা সমস্যার কথা বলে।

 

 

সর্বশেষ তাকে পাশের এক দোকানের কথা বলা হয়। তখন দোকানের রেফারেন্স নিয়ে আসলে তার পাসপোর্ট জমা নেন। আর ওই দোকানদার তার থেকে তিন গুন বেশি টাকা গ্রহণ করে থাকেন। তার পরেও তিনি পাসপোর্ট পেতে চান। তার অভিযোগ ঘুষ না দিলে এখানে সেবা পাওয়া যায় না।”

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভর্তি থাকে লোকে, তবে এর বেশিরভাগই আবেদনকারী নন। বাইরের ফটোকপি দোকানের মালিক-কর্মচারী। কিছু দিন আগেও পাসপোর্ট অফিসের ১৬ দালালকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। গত ২০ অক্টোবর ডিবি পুলিশের জালে পাসপোর্ট অফিসের ১৬ দালাল গ্রেপ্তার হন।

 

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, সহকারী পরিচালক জামালের নেতৃত্বে দুর্নীতির এ বিশাল জাল। ঘুষের টাকা সমন্বয় করেন অফিস সহকারী। এদিকে, দালাল চক্রের সদস্যরা যখন তখন ঢুকে পড়েন ছবি তোলা, ফিঙ্গার স্ক্যানিংয়ের গোপনরুমে, করেন অনধিকার চর্চা।

 

 

নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক জামালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার সহকারি ফোন ধরে জানান, “তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন কালকে সকালে ফোন দিয়েন। সকালে ফোন দিলে; ফোনকল রিসিভ করেন না কেন? জিজ্ঞেস করা হলে, সাথে সাথে ফোন কেটে দেন। এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর