বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

চনপাড়ার নয়া ত্রাস খোকনের ক্যাডার শামীম

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২৪  

রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তিনদিকে নদী এবং একদিকে খালবেষ্টিত এলাকাটি চনপাড়া বস্তি। গত ২ যুগের বেশি সময় ধরে জায়গাটি মাদক কারবারি ও অপরাধীদের ডেরায় পরিণত হয়েছে। এই বস্তির অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নিতে হরহামেশাই সেখানে দফায় দফায় সংঘর্ষ-গোলাগুলির ঘটনা নতুন কিছু নয়। যে কারণে চনপাড়া বস্তিকে বিগত দিন থেকেই রূপগঞ্জ উপজেলার বিষফোঁড়া বলে থাকে স্থানীয়রা। এদিকে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের অলিগলিতে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা অনেকটা প্রকাশ্যে কেনাবেচা হয়। ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরে পতিতাবৃত্তি থেকে শুরু করে এমন কোনো অপরাধ নেই ওই বস্তিতে সংঘটিত হয় না। 

 

৪০ হাজার ঝুপড়ি ঘরে অন্তত কয়েকশ মাদকের আস্তানা আছে। বিগত দিনে এই সবগুলো নিয়ন্ত্রণে ছিলো নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর পরিবারের হাতে আর প্রকাশ্যে নিয়ন্ত্রণ করতেন বজলু, বিউটি ওরফে কুট্রি, ডাকু শমস। এদের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন এই চনপাড়ার মাদকের স্পট থেকে নিয়মিত ১০/১৫ লাখের উপরে টাকা উঠতো। যে টাকা প্রতিদিন সন্ধ্যায় গাজীর পিএস দাদা এমদাদ তার লোক দিয়ে কালেকশন করতেন। তা এনে রূপসী গাজী ভবনে ভাগাভাগি করা হতো। 

 

এদিকে গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তোপের মুখে পরে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেই নারায়ণগঞ্জের সাবেক মন্ত্রী, হুইপ, এমপি, মেয়র, জেলা-উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বার পালিয়ে যান। সে সময় পালিয়ে যান রূপগঞ্জের এই চনপাড়া পরিচালনা করা সন্ত্রাসীরা। এ সময় চনপাড়া পূর্নবাসন কেন্দ্র দখলে নেন জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের অন্যতম হাতিয়ার রূপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম আহম্মেদ। চনপাড়া জুড়ে চাঁদাবাজি, দখল, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ সবই এখন এই শামীমের নিয়ন্ত্রণে। চনপাড়ার বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলানোই শামীমের এখন প্রধান ব্যবসা। তার ভয়ে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। চাঁদাবাজি-মাদক নিয়ন্ত্রণে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এদিকে শুধু শামীমের নামই একা যুক্ত নয় তার সহযোগী হারুন মিয়াজির নাম ও উঠে এসেছে। 

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় সে নিহত আনোয়ার মাঝির সহযোগী ছিলো। ছিলো মলম পার্টির সদস্য। ছিলো না কিছু শুধু বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের কাছ থেকে টাকা চেয়ে চেয়ে এনে সংসার চালাতেন। কিন্তু পট পরিবর্তনের আড়াইমাসে ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে এই শামীমের। নানা অপকর্মেল উপরে ভর করে বনে গেছেন কোটিপতি। এছাড়া চনপাড়া নিয়ন্ত্রণে নিতে আসা যুবদল নেতা রতন মিয়া, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জাকির, সাবেক ছাত্রদল নেতা রুবেল মাহমুদ এদেরকে এলোপ্যাথারী পেঠানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে চনপাড়া জুড়ে ডিস ব্যবসা, ইন্টারনেট ব্যবসা, বিভিন্ন সমিতি সংগঠন,মাদককারবারি, ভূমিদূস্যতা, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি সবই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন এই খোকনের ক্যাডার যুবদল নেতা শামীম।

 


সূত্র বলছে, পটপরিবর্তনের আড়াইমাসে চনপাড়ার ত্রাস হিসেবে পরিণত হয়েছে রূপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম আহম্মেদ ও হারুন মিয়াজী। ঘরে ঘরে তালা ঝুলিয়ে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে নিয়মিত মাদককারবারি থেকে পাচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। চনপাড়ার নদী পথে আসা ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা সব জায়গায় এখন একক থাবা বসিয়েছে এই শামীম। সূত্রে জানা গেছে, গত আড়াইমাসে প্রায় ৩৫০ ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে এই শামীম। প্রত্যেক ঘর থেকে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। তালা ঝুলিয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-দোকানপাটে। তা ছাড়া গত ১৫ সেপ্টেম্বর চনপাড়া ডিবিকেপি ভবনের চৌধুরী ট্রেডস গ্রুপে হামলা চালায় শামীম ও তার লোকজন।

 

এসময় অফিসের ৬ জন ষ্টাফকে বেধড়ক মারধর করে একপর্যায়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। পরবর্তীতে ১ লাখ টাকা এনে বাকি টাকা দ্রুত দেওয়ার ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে বাকি টাকা না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেন তিনি। এদিকে এই শামীম পটপরিবর্তনের পরপরই চনপাড়া মোড়ে রডের দোকানের দাদন মিয়ার কাছ থেকে ২ লাখ, সিমেন্ট ব্যবসায়ী পারভেজের কাছ থেকে ৫০ হাজার, শাহজাহান স্যানেটারি দোকান থেকে ৫ লাখ, রানিমা রেস্তোরা থেকে ২ লাখ, জব্বর মিয়া থেকে ৫০ হাজার, মাদক ব্যবসায়ী গুন্ডা বিল্লাল থেকে ৭ লাখ, ট্রাক দুলাল থেকে ৫ লাখ ৭০ হাজার, কয়লা রনির থেকে ৫ লাখ, নিয়াজের থেকে ১০ লাখ, গাঁজা মনিরের থেকে ২ লাখ, খাজু মনিরের থেকে ২ লাখ, কাসেমের ছেলে জয়নালের কাছ থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বখরা দিয়েছে।

 

এছাড়া ও গত এক মাসে চনপাড়া পূর্নবাসনে ৫ টি খুনের ঘটনার নৈপথ্যে রয়েছে এই যুবদল নেতা শামীম। এদিকে চনপাড়ায় বিএনপির অফিস খুলে বানিয়েছেন টর্চাল সেল। সব মিলিয়ে বর্তমানে এই শামীম ও হারুন মিয়াজি বাহিনীর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে  চনপাড়ায় নতুন রূপে অপরাধ জগৎ পরিচালিত হতে যাচ্ছে।

 


এ বিষয়ে শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একটি পক্ষ আমার নামে প্রোপাকান্ডা ছড়াচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে আসা সকল অভিযোগ মিথ্যা। আরি আমি শুধু তালা মেরেছিলাম মাদকের স্পট এর বাহিরে অন্য কিছু না। বর্তমানে এই ৯নং ওয়ার্ডের বিএনপি-জামায়াত-ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মী মিলেমিশে চনপাড়াকে দেখভাল করছেন। বাকি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে তিনি কথা এরিয়ে গিয়ে ফোনটি কেটে দেন। 
 

এই বিভাগের আরো খবর