শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

চিকিৎসকদের টেস্ট বাণিজ্যে হয়রানির শিকার জনসাধারণ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪  

 

নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ডাক্তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রমরমা বাণিজ্যের হয়রানির শিকার হচ্ছে বহির্বিভাগ সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধের জন্য হাপাতালের কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করলেও বন্ধ হয়নি ডাক্তারদের টেস্ট বাণিজ্য।

 

খোদ চিকিৎসকই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে কোথায় করতে হবে তা বলে দেন। অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ থাকলেও চড়ামূল্যে বাহিরের বিভিন্ন ক্লিনিক বা ডায়াগস্টিক সেন্টারে এসব টেস্ট করাতে হচ্ছে।

 

জানা যায়, হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি সচল রয়েছে। এছাড়া রক্ত পরীক্ষা থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো যায় এখানে। কিন্তু এরপরেও হাসপাতালের কিছু চিকিৎসকরা রোগীদের পরীক্ষা করানোর জন্য টিকিটের সাথে কাগজে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জায়গা ঠিকানা দিয়ে তাদের লোক সহকারে পঠোচ্ছেন।

 

বিনিময়ে তারা পাচ্ছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে রোগীদের দিয়ে আসা টাকার ভাগ। যেখানে সাধারণ মানুষরা সরকারি হাসপাতাল থেকে কম খরচে টেস্ট করাতে পারতো। সেখানে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সেই টেস্টগুলো করানোর জন্য রোগীদের গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।       

 

চিকিৎসা নিতে আসা নাজমা বেগম বলেন, কয়েকদিন ধরে আমরা হাতে ব্যাথা থাকার আমি হাসপাতালে আসি চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। ডাক্তারকে দেখানোর পর ওনি আমাকে বেশ কযেকটি রক্ত পরীক্ষা এবং এক্সরে করতে বলে। টিকিটের সাথে চাষাঢ়ার একটি প্যাথলজি সেন্টারের কাগজ সে আমাকে দেয় এবং বলে ৩০ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষাগুলো করিয়ে আবার যেন এসে দেখিয়ে ঔষধের নাম নিয়ে যাই। সেই প্যাথলজিতে গিয়ে দেখি ৪ হাজার টাকার শুধু টেস্টই দিছে।

 

বাধ্য হয়ে টেস্টগুলো করাই। পরে যখন জানতে পারি এই পরিক্ষা গুলো হাসপাতালেও করানো যায় তখন খুব খারাপ লাগে। আমরা গরিব মানুষ সরকরি হাসপাতালে আসি যেন কম খরচে একটু ভালো মানের চিকিৎসা আমরা পাই। বুঝিনা বলে এভাবে মানুষ কে ঠকানো ঠিক না। তারা ডাক্তার তারা মানুষকে সেবা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখবে। ঠকাবে না।   

 

ক্ষোভ প্রকাশ করে শান্ত নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগার কারণে হাসপাতালে আসি চিকিৎসার জন্য। ডাক্তার দেখানো পর তিনটি রক্ত পরীক্ষা করতে বলে মেডি লাইফ ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে। তারপর টেস্টের জন্য সেখানে গেলে বলে ২ হাজার ৪’শ টাকা লাগবে। এতো টাকা লাগবে আমি আর টেস্টগুলো করাই নি। হাসপাতালে গেছি কম টাকায় চিকিৎসা করাতে কিন্তু ডাক্তার বাহিরে টেস্ট করতে দিছে। শুনছি হাসপাতালেই নাকি কম খরচে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। তাহলে রোগীদেরকে কেন তারা বাহিরে এতো টাকা দিয়ে টেস্ট করানোর জন্য পাঠাচ্ছে।  

 

এ বিষয়ে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. শেখ ফরহাদ যুগের চিন্তাকে বলেন, যে টেস্ট হাসপাতালে করাতে পারবে, এগুলো তো বাহিরে পাঠানো ঠিক না। আসলে রোগীদেরকে সচেতন হতে হবে। হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সামনে একটা চার্ট লিখে টানিয়ে দিয়েছি যে কোন টেস্ট হাসপাতালে করাতে পারবে। এছাড়া এমন কোনো অভিযোগ পেলে আমি ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন  মশিউর রহমান যুগের চিন্তাকে বলেন, যে টেস্টগুলো হাসপাতালে করাতে পারবে না সেগুলো বাহিরে করবে আর যেগুলো হাসপাতাল করাতে সক্ষম সেগুলো তো হাসপাতালেই করবে এটাই নিয়ম। হাসপাতালে থাকার পরেও যদি চিকিৎসক তাদেরকে বাহিরে টেস্ট করতে বলে আপনি ভুক্তভূগীদের লিখিত অভিযোগ দিলে আমি তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করবো।   

এই বিভাগের আরো খবর