শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

চোরাই সুতার ব্যবসা করে ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

 

 

ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়শনে হেন অপকর্ম বাকি নেই লিটন সাহার। সেলিম ওসমান, শামীম ওসমানকে আব্বা ডেকে সে সমৃদ্ধ ব্যবসায়িক সংগঠনের সদস্যদের জিম্মি করে রেখেছে। কথায় কথায় চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে বন্ড সুতার বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের বারোটা বাজিয়ে রেখেছেন। লিটন সাহার শেল্টারে টানবাজারের এলসি সুতার কালোবাজারী ব্যবসা পরিচালনা করতেন ইয়ান মার্চেন্টের ডায়ারেক্টর আলহাজ¦ আমিন উদ্দিন (সূতা ঘরের মালিক), সুব্রত রায় (এস এস থ্রেড এক্সেসসরিক্স), বিপুল মন্ডল (শুভা এন্টারপ্রাইজ), তুষার চৌধুরী (ওয়াস্টগ্রেড),বন্ড সূতার আরেক কালোবাজারী ব্যাবসায়ী অসিম সাহা। এদিকে তাদের মধ্যে অন্যতম মূল হোতা হিসেবে ছিলেন (এম.এম ট্রেডার্সের) মালিক সানি সাহা। 

 

প্রতি দিন কোটি কোটি টাকার সুতা চোরাইপথে নারায়ণগঞ্জে আনা-নেওয়া করতেন সানি সাহা। অবৈধ ব্যবসার এই সিন্ডিকেট হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া যাকে বুঝায় তাই যেন সুব্রত সাহা, সানি সাহা ও আমিন উদ্দিন। সূত্র বলছে, মাত্র দশ বছরের শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এরা। এদিকে ২০১৩ সালের আগে ছিল স্রেফ এক বেকার যুবক। মামা অঞ্জন সাহার দোকানে শ্রম দেয়া সানি সাহা চোরাই সুতা চালানের ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক। 

 

এখন টানবাজার আশা হলের সামনে প্রায় ১১ শতাংশ জমি, ৪টি দামি গাড়ি, জামতলা এলাকায় মালিকানাধীন হিরা ড্রাগন প্যালেস, আমলাপাড়ায় গ্রীন ফার্মা ও পদ্মা সিটি প্লাজার ২য় তলায় রয়েছে নিজের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এম.এম ট্রেডার্স এসোসিয়েশন। এছাড়াও  নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায় তার রয়েছে বিভিন্ন সম্পত্তি। সানি সাহা, সুব্রত রায় ও একই সাথে গত ১৭ বছর যাবৎ অবৈধভাবে সূতা ঘরের নামে অবৈধ বন্ডের সূতার ব্যবসায়ী উদ্দিনের এদের সব কিছুর ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অতিদ্রুত খোঁজ নেয়ার দাবি জানিয়ছেন ব্যবসায়ীরা।


সূত্র জানায়, গত ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ২০ জন সুতা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে কাস্টমস অ্যান্ড কমিশনারেট। কাস্টমস অ্যান্ড কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের মামলায় আসামী হয়েছিলেন সুব্রত রায় (এস এস থ্রেড এক্সেসসরিক্স) ও বিপুল মন্ডল (শুভা এন্টারপ্রাইজ), আলহাজ¦ আমিন উদ্দিন (সূতা ঘরের মালিক) তা ছাড়া তাদের এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনায় পারসেন্টেস পেতেন আওয়ামী লীগের সমালোচিত সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও তার ভাই সাবেক এমপি সেলিম ওসমান,

 

 উভয়ের ভাতিজা আজমেরী ওসমান ও  নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল। এদিকে বহু বছর যাবৎই টানবাজারে অবৈধ এলসির ব্যবসা পরিচালনা হলে সে সময় সেখানে আমিন উদ্দিন (সূতা ঘর) বিপুল মন্ডল (শুভা এন্টারপ্রাইজ), তুষার চৌধুরী (ওয়াস্টগ্রেড) এদের মাধ্যমে পরিচালনা হলে ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পরই লিটন সাহার কথায় তার বন্ধু সুব্রত রায় (এস এস থ্রেড এক্সেসসরিক্স) তাকে জয়েন করা হয়।

 

 পরবর্তীতে টানবাজারে এলসির পার্সোনাল অফিস অন্য সাইডে থাকলে ও বর্তমানে প্রভাবে পদ্মা সিটি প্লাজার নিচ তলায় অফিস স্থাপন করেন। মেখান থেকেই তাদের অপকর্মের কার্যক্রম পরিলাচনা হয়। তা ছাড়া বর্তমানে লিটন সাহার বন্ধু পরিচয়ে বন্ডের গডফাদার হিসেবে পরিচিত হয়েছেন সুব্রত সাহা সেই এলসির ব্যবসা পুরোই পরিচালনা করেন টানবাজার আশা হলে সামনে সামনে তার (এস এস থ্রেড এক্সেসসরিক্স) সেই অফিস থেকে। তা ছাড়া ও টানবাজারে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট চক্র প্রতিদিন অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বন্ড সুতা বিক্রি করে আসছেন।

 

 এতে গড়েছেন কালো টাকার পাহাড়। এদিকে এই অবৈধ ব্যবসা মাধ্যমে শত কোটি টাকার ২০১৫ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সংসদ একেএম নাসিম ওসমানের মেয়ে আফরিন ওসমানের স্বামী ঢাকা মহানগর জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইফতেখারুল ইসলামের সাথে পরিচয় হয় সানি সাহা। 

 

তারই বছরখানিক পরেই সকল ধরণের অপকর্ম শুরু করেন সানি সাহা। দেশের বাহিরে বা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চোরাইপথে এলসির কালোবাজারী বন্ডের সুতা নারায়ণগঞ্জে এনে বিক্রি করতেন সানি সাহা। আর এই সকল চোরাইপথে সুতা নারায়ণগঞ্জে আনতে সানি সাহাকে কেয়ারিং করতেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইফতেখারুল ইসলাম। চোরাইপথে আনা-নেওয়া সকল বন্ডের সুতা পুলিশ-প্রশাসনকে ম্যানেজ করতেন ইফতেখারুল ইসলাম। আর এই সকল মালামালের বিক্রির লাভ দুই জনে সমান ভাগে ভাগ করতেন। 

 

এছাড়াও সানি সাহার সাথে এই সকল চোরাই বন্ডের সুতার ব্যবসা করতে বিপুল মন্ডল, সুব্রত সাহা ও শ্রীভাষ সাহা। তারা ছিলেন সানি সাহার ব্যবসায়ীক পার্টনার। বোন জামাতার সাথে কালোবাজারী পার্টনাল থাকায় সানি সাহার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো আজমেরী ওসমান ও তাদের পরিবারের সকলের। যেই কোন জায়গা-জমি দখল, ব্যবসায়ী লেনদেন, হুমকি সহ সকল অপকর্ম আজমেরী ওসমানকে দিয়ে করাতেন সানি সাহা। এছাড়াও প্রতি মাসে সানি সাহার মাধ্যমে টানবাজার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা আজমেরী ওসমান।

 

অপর দিকে মুখে বড় সাদা দাঁড়ি, নিয়মিত পড়েন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কপালে থাকা কালো দাগ দেখলেই তা প্রমান করা সম্ভব। গত ১৯৯৯ সালে টানবাজার আমিন মার্কেটের নিজ তলায় সূতা ঘর নামে সূতা ব্যবসার প্রতিষ্ঠান চালু করেন আলহাজ¦ আমিন উদ্দিন । প্রথমে কয়েক বছর কটন সূতার ব্যবসা পরিচালনা করেন। সেখানে তিনি বেশি একটি লাভবান হতে না পারলে ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ও তার ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। কিন্তু যখনই ইয়ান মার্চেন্টে শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান ও টানবাজারের চাঁদাবাজ লিটন সাহার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তাদের হাত-পা ধরে ইয়ান মার্চেন্টে ডায়ারেক্টর হিসেবে আদিষ্ট হন। 

 

তখন থেকেই তিনি লিটন সাহার হাত ধরে বিপুল মন্ডল (শুভা এন্টারপ্রাইজ), তুষার চৌধুরী (ওয়াস্টগ্রেড) এদের সাথে সম্পক্ত হয় এলসির চোরাই সূতা ব্যবসার সাথে। এদিকে লিটন সাহা সেলিম ওসমানকে দিয়ে চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হায়দার খান কাজল ও বিকেএম‘র বর্তমান সভাপতি হাতেমের সাথে যোগসাজস করে শিল্পাঞ্চল বিসিকের কিছু ব্যবসায়ী সাথে সক্ষ্যতা রেখে। আমিন উদ্দিন (সূতা ঘরের মালিক), সুব্রত রায় (এস এস থ্রেড এক্সেসসরিক্স), বিপুল মন্ডল (শুভা এন্টারপ্রাইজ), তুষার চৌধুরী (ওয়াস্টগ্রেড), বন্ড সূতার আরেক কালোবাজারী ব্যাবসায়ী অসিম সাহা, (এম.এম ট্রেডার্সের) মালিক সানি সাহা। 

 

সেই ব্যবসায়িকদের ব্যবসার এলসির মাধ্যমে অবৈধপথে বন্ডের সূতা আমদানী করতেন। সেই ইন্ডিয়ান-চায়নার বন্ডের সূতা টানবাজারে নিয়ে এসে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতেন। সূতার মান ভালো থাকায় সকলেই সেই সূতার প্রতি আকৃষ্ট হলে ধ্বংস হয়ে পরে দেশীয় জাতের সূতা ব্যবসা। এরা অবৈধপ্রন্থায় নিজেদের ও বিভিন্ন ব্যাবসায়ীদের এলসি জোর পূর্বকভাবে ক্ষমতা দেখিয়ে ব্যাবহার করে সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে শুল্কমুক্ত কোটায় আমদানি করা সুতা খোলাবাজারে বিক্রি করে টানবাজারের সূতার ঐতিহ্যকে ভূলন্ঠিত করেছে। 

 

এমনকি তাদের এই সকল অপকর্মের কারণে সরকার মাসে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তা ছাড়া ও কিছু কিছু সময় টানবাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের থেকে বন্ডের সূতা আনার কথা বলে অধৈক টাকা নিয়ে পরবর্তীতে এলসি কেটে দিয়েছে সেই মিথ্যা বলে তাদের কাছেই উচ্চ মূল্যে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। বর্তমানে এরা সকলেই অবৈধপ্রন্থায় বনে গেছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। তা ছাড়া লিটন সাহার এই টানবাজারে ৪৬টি বন্ড সূতা ব্যবসায়ীকে প্রায় ২৫ কোটি টাকার বেশি লঘ্নি করেছেন। আর সেই টাকার বিশাল অঙ্কের সুদ সাধারণ ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আদায় করতেন। তার গঠিত এই সিন্ডিকেট মেম্বাররা।

 

এ দিকে গত ৫ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর পরই এলসির কালোবাজারী সেন্টিকেটের হোতা লিটন সাহা পালিয়ে যায়, তার সাথে কয়েক দিন গা ডাকা দিয়ে ছিলেন সেই এলসির কালোবাজারী সিন্ডিকেট মেম্বারা। কিন্তু কয়েকদিন ধরে আবারও টানবাজার এলাকায় আবার আগের মতো এলসির কালোবাজারী বন্ডের সুতার ব্যবসা করছেন তারা। বর্তমানে তাদের এই অবৈধ সূতা ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং তাদের প্রতিটি অবৈধ গুদামগুলোর খোঁজ খবর নিয়ে বন্ধ করতে যৌথ বাহিনীর দিকে তাকিয়ে আছে সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

 

এই বিভাগের আরো খবর