শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ১৩ ১৪৩১

জলবায়ু সমস্যা হলো নিজের ঘরে আগুন লাগার মতো ঘটনা

মোরছালীন বাবলা, আজারবাইজান (বাকু) থেকে :

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২৪  

 কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস 

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন,  জলবায়ু সমস্যা হলো নিজের ঘরে আগুন লাগার মতো ঘটনা। যেখান থেকে বিশ্বের কোন দেশই বাঁচতে পারবে না। সেটা হোক ধনী কিংবা গরিব দেশ। তাই তরুণদের বিশ্বকে আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে নেতৃত্ব দিতে হবে। আমরা ডোনাল্ড ট্রাম্প ১.০ দেখেছি। ট্রাম্প ২.০ দেখি নাই। দু’তিন মাস দেখি। ট্রাম্প কি স্বভাব চরিত্র নিয়ে আসেন- জলবায়ু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কি হবে প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন।

 

আজারবাইজানের বাকুতে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনের বক্তব্য দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, জলবায়ু সংকট তীব্রতর হচ্ছে। আমাদের সভ্যতা গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের জন্য আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক এবং যুব শক্তিকে একত্রিত করতে হবে। আমরা এমন একটি জীবনধারা বেছে নিয়েছি যা পরিবেশের বিরুদ্ধে কাজ করে।

 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, টিকে থাকতে হলে অন্য সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে যা একটি ভিন্ন জীবনধারার উপর নির্ভর করে। যা শূন্য বর্জ্য ব্যবস্থার  উপর ভিত্তি করে এবং প্রয়োজনীয় চাহিদার মধ্যে সীমিত থাকবে। কোন অবশিষ্ট বর্জ্য থাকবে না। এই জীবন ব্যবস্থা শূন্য কার্বনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হবে।

 

এছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে এলডিসি’র উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু সংকট মোকাবেলা এবং পৃথিবী ও মানব কল্যাণকর নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে এক নতুন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো প্রয়োজন।

 

কপ-২৯ সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে পাঁচটি প্রধান জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ স্বল্পোন্নত দেশ নেপাল, মালাউই, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া ও বাংলাদেশের নেতারা যোগ দেন। বিশ্বের তরুণদের জন্য একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত ‘সামিট ফর দ্য ফিউচার’ এর প্রতিও সমর্থন জানান তিনি।

 

তিনি আরও বলেন, আমরা এমন অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করেছি, যার ভিত্তি হচ্ছে ভোগ আর ভোগ। এটি শুধু বর্জ্য উৎপাদন করে। আমাদেরকে শূন্য বর্জ্যের বিশ্ব গড়তে হবে।

 

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বড় অবিচারের সম্মুখীন হয়েছে। আমরা আপনাদের বলতে চাই যে, আমরা আপনাদের বিষয়ে গুরুত্ব দেই। জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য একটি বৃহত্তর তহবিল সংস্থান করতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে জোরালো আলোচনা এবং ঐকান্তিক প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে হবে।

 

কার্বন নিঃসরণ কমাতে নতুন জোট ‘জি জিরো’ গঠন

 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যখন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে যুদ্ধ করছে তখন চারটি ছোট কার্বন-নেতিবাচক দেশ এক হয়ে গঠন করল ‘জি জিরো’ ফোরাম। আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯ এ গঠিত এই ফোরামে আছে ভুটান, মাদাগাস্কার, পানামা এবং সুরিনাম। জলবায়ু সুরক্ষার যুদ্ধকে এগিয়ে নিতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে একটি যৌথ ঘোষণাও দিয়েছে এই জোট। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরি তোবগে, সুরিমানের প্রেসিডেন্ট চান সানতোখি, মাদাগাস্কারের প্রধানমন্ত্রী ও পানামার বিশেষ দূত এই যৌথ ঘোষণায় সই করেন। 

 

ঐতিহাসিক এই ঘোষণা সাক্ষরকালে সেখানে ছিলেন সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের প্রেসিডেন্ট, আশিস গুপ্ত, এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট কেরামত উল্লাহ বিপ্লব, কোষাধ্যক্ষ মাসুম বিল্লাহসহ সাংবাদিক সংগঠনটির ছয় সদস্য। যৌথ ঘোষণা শেষে ভূটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন তারা। 

 

দক্ষিণ এশিয়ার এই সাংবাদিক নেতারাদের ভূটানের প্রধানমন্ত্রী জানান, নতুন ফোরামের লক্ষ্য এটা প্রমাণ করা যে কার্বন নিরপেক্ষতা শুধুমাত্র সম্ভব নয়, অপরিহার্য। জলবায়ুর ভয়ংকর অভিঘাত ঠেকাতে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সহযোগীতা পেতে একযোগে কাজ করবে এই দেশগুলো। উন্নয়নশীল এবং উন্নত দেশগুলোকেও ‘জি জিরো’ ফোরামে যুক্ত করার কথা জানান তিনি। 

 

ভুটান যেহেতু এই ফোরামের নেতেত্বে আছে তাই দক্ষিণ এশীয় জলবায়ু সাংবাদিকদের সংগঠনকেও ফোরামে যুক্ত থাকার আহ্বান জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী। 

 

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিষ্ট ফোরামের এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট কেরামত উল্লাহ বিপ্লব বলেন, সবাই সত্যিকার অর্থে জলবায়ু যুদ্ধে ইতিবাচক ভুমিকা রাখলে এ অঞ্চলের জলবায়ু উদ্বাস্তু কয়েক কোটি মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা সহজ হবে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে শুধু কাগজে চুক্তি কিংবা ঘোষণা নয় শিল্পোন্নত দেশ ও বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দায়বদ্ধ করতে ফোরামকে উদ্যোগ নেওয়ার দাবিও জানানো হয় তাকে।  দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ে আলোচনার জন্য সাংবাদিক নেতাদেরকে ভুটান সফরের আমন্ত্রণও জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে। 

 

ফোরামের যৌথ ঘোষণায় সই শেষে সুরিনামের প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট চান সানতোখির সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট।

এই বিভাগের আরো খবর