রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

জেলা আইনশৃংখলা কমিটি সভা অনুষ্ঠিত

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০২৪  


জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রবিবার (১৪ জুলাই) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলার উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) ও ভারপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মৌরীন করিম।
আইনশৃঙ্খলা কমিটির বিগত বেশ কয়েকটি সভায় জেলা পুলিশ সুপারের অনুপস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরে আগামী সভাগুলোতে তার উপস্থিতি কামনা করেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি আরিফ আলম দিপু। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন বলেন, শুধু পুলিশ সুপারই নয়, জেলার ৫ জন এমপি, সিটি মেয়র, র‌্যাবের সিইও সহ এই কমিটির সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত সভাগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত হওয়া। এতে অধিকতর আলোচনা করা সহ বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে দ্রুত সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান কালাম বলেন, আমাদের সোনারগাঁয়ের ৩টি সমস্যার বিষয়ে কথা বলতে চাই, সেগুলো হলো মাদক, দখল ও দূষণ।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এড. আবুল কালাম আজাদ বিশ^াস বলেন, ইদানিং খুনের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, বন্দরের মনু হত্যা ও সদরের সুরুজ আলী হত্যা ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। বেশ কয়েকজন আসামী গ্রেফতার হলেও মূল অপরাধীরা এখনো ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে।
জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্কুল-কলেজ চলাকালীণ সময়ে শিক্ষার্থীদেরকে রাসেল পার্ক ও ৫নং ঘাট এলাকায় আড্ডা দিতে দেখা যায়। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
জাহাজী শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাহমুদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে একমাত্র তিতাস কর্তৃপক্ষই মূল্য নিয়েও গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারির সুবিধা দেয় না, এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বিভিন্ন অযুহাতে তারা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং বলে সিস্টেম লস। খুব কষ্ট লাগে, যখন প্রতি মাসে বিল দেয়ার পরও গ্যাস পাই না। জেলায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের হিরিক। তিতাস কর্তৃপক্ষের যোগসাজশেই সকল অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়।
সভার সভাপতি ভারপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মৌরীন করিম তিতাসের ডিজিএমের কাছে জানতে চান, জেলায় মোট বৈধ গ্যাসের গ্রাহক সংখ্যা কতো? তিতাসের লোক ছাড়া গ্যাসের রাইজার সাধারণ মানুষের পক্ষে লাগানো সম্ভব নয়, ফলে অবৈধ গ্যাস সংযোগ স্থাপনে তিতাসের লোক জড়িত থাকা স্বাভাবিক।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই তিতাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিতাসের লোক ছাড়া রাইজারের সংযোগ স্থাপন করা কখনোই সম্ভব নয়। এছাড়া, আপনারা একটি গ্যাস সংযোগ দিয়ে অর্থণৈতিক সুবিধা গ্রহন করে ৫টি চুলা ব্যবহারের অনুমতি দেন সেই বিষয়েও আমরা জানি। অবৈধ সংযোগ কে বা কারা দেয় তা যদি বের করতে না পারেন এবং অবৈধ সংযোগ স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা গ্রহন করতে না পারেন তাহলে সরকারের বেতন কেন নেন এমন প্রশ্নও রাখেন বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবীদ।
তিতাসের ডিজিএম মামুনার রশিদ বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আসছি। কিন্তু আমরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর পুনরায় তারা অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে নেয়। এসকল ঘটনায় তিতাসের কোনো স্টাফ বা কর্মকর্তারা জড়িত নন বলেও সাফাই গান তিনি। তিনি বলেন, জেলায় বর্তমান তিতাসের প্রায় ৮২ হাজার গ্রাহক রয়েছে। যার বিপরীতে কর্মী রয়েছে ২৫ থেকে ৩০ জন। অপেক্ষাকৃত দূর্বল এই জনবল দিয়ে বিশাল এই গ্রাহকদের নজরদারী করা সম্ভব নয়।
জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আবদুল হাই আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাবাসী ৫ বছরের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিলো, কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান ১৬ বছর যাবৎ সেই চেয়ারে বসে দায়িত্ব পালন করছেন। নিজ স্বার্থে ছোট একটি মামলা দায়েল করে বছরের পর বছর নির্বাচন কেন বন্ধ রাখা হয়েছে তা জানতে চান আবদুল হাই।
এছাড়া, সভায় মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের ভয়াবহতা এবং তা প্রতিরোধে বিশদ আলোচনা করা হয়। এসময় জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, মাদক প্রতিরোদে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু মাদক ও কিশোর গ্যাং সহ সকল অপরাধ নির্মূলে সামাজিকভাবে ও পারিবারিকভাবে সকলকে সচেতন হতে হবে। তবে, পুলিশ সুপারের অনুপস্থিতির বিষয়ে প্রেসক্লাব সভাপতির অভিযোগের নোট নিলেও সেই বিষয়ে কোনো উত্তর করেন নি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সভাপতির বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মৌরীন করিম বলেন, আমরা অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেছি। এসকল বিষয়ে দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে প্রয়োজনী পদক্ষেপ গ্রহন করে আগামী আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তার রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা দেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা সকলেই জানি মাদক নারায়ণগঞ্জের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে, নিজ নিজ পরিবারের দিকে, নিজের সন্তানদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা, মাদক আছে বলেই কিশোর গ্যাং তৈরি হয়, মাদকের টাকার জন্য এই কিশোরগ্যাংই একসময় ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, এক পর্যায়ে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না তারা, যার উদাহরণ বন্দর ও সদরের সাম্প্রতিককালের দুটি হত্যাকান্ড।

সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মশিউর রহমান, এন এস আই এর যুগ্ম পরিচালক, ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাশার, রূপগঞ্জ উপজেলার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, আড়াইহাজার উপজেলার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান স্বপন, বন্দর উপজেলার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন ও জেলার পাঁচ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা।
এছাড়া, র‌্যাব-১১, নৌ-পুলিশ, বিজিবি, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়, জেলা শিক্ষা অফিস, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, জেলা তথ্য অফিস, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর, নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধিবৃন্দ এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
 

এই বিভাগের আরো খবর