বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

জোর করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে যায় কাউসার-খোরশেদ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০২৪  

# চানমারীতে নাসিম ওসমান মসজিদ অপসারণে সড়ক বিভাগের চিঠি

# আমরা দুই পক্ষের দরখাস্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি, কিন্তু কাউকে কোন কাজ করতে অনুমতি দেইনি : জেলা প্রশাসক

 

পশ্চিম চানমারী এলাকায় চানমারী বাইতুর রহমান জামে মসজিদ (প্রাক্তন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমান জামে মসজিদ) নির্মাণের অনুমতি মিলার আগেই জোর করে জেলা প্রশাসকের দোহাই দিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে গেছে কিছু ব্যক্তি। গতকাল ইসদাইর এলাকার কাউসার-খোরশেদের নেতৃত্বে কিছু লোক এই কাজ করে। তবে জেলা প্রশাসক বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি কাউকে সেখানে কোন কাজের অনুমতি দেননি।

 

জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘এই সম্পত্তিটি গণপূর্ত বিভাগের পরিত্যক্ত জায়গা। এখানে এক পক্ষ মসজিদ করার জন্য দরখাস্ত দিয়েছে, আরেক পক্ষ হসপিটাল করার আবেদন করেছে। কিন্তু নিলামের মাধ্যমে এই সম্পত্তি বিক্রি করা যায়। আমরা দুই পক্ষের দরখাস্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু আমরা কাউকে কোন কাজ করতে অনুমতি দেইনি।’

 

এরআগে মসজিদ নির্মাণ নিয়ে জেলা প্রশাসকের মৌখিক নির্দেশনার প্রেক্ষিতে পশ্চিম চানমারী এলাকায় এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিআকর্ষণের পর এবং নারায়ণগঞ্জের ইসলামী দলগুলোর সাথে আলাপ আলোচনার প্রেক্ষিতে সেই সংকট দূরীভূত হয়। এই সমস্যার উদ্রেক হওয়া প্রসঙ্গে জানা গেছে, গত ২৮ আগস্ট  নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড সড়ক ৬ লেন উন্নীত করণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ফতুল্লার পশ্চিম চাঁনমারী এলাকায় চানমারী বাইতুর রহমান জামে মসজিদ (প্রাক্তন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমান জামে মসজিদ) অপসারণ প্রসঙ্গে মসজিদ কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি দেয় নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগ। 

 

এরপর ৪ সেপ্টেম্বর মুসল্লি ও জনগণের পক্ষে দাবি করে বেশ কিছু লোক ওই ফকির গার্মেন্টস সড়কের শুরুতে  গলির ভেতর সরকারি খাস জায়গায় মসজিদ নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে পীড়াপিড়ি শুরু করে। অথচ ওই জায়গাটিতে আগেই বৈধভাবে লিজ দেওয়া আছে আ.জব্বারের কাছে। ওই পক্ষটিকে সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে ফতুল্লার পশ্চিম চাঁনমারী এলাকার পতিত সরকারি জমিতে নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয়ার কথা বলেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসকের বিতর্কিত ভুমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তাদের ভাষ্য, এই এলাকার জেলা প্রশাসকের নিজস্ব ২টি মসজিদ সহ মোট ছয়টি মসজিদ রয়েছে। এতো মসজিত থাকার পর সরকার যেখানে এই মসজিদটি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে সেখানে এমন নির্দেশের তোয়াক্কা না করে জেলা প্রশাসক সেখানে পুনারায় এলাকার ভিতর মানুষের চলাচলের ব্যাঘাত ঘটে এবং মসজিদ বানানোর অনুপযুক্ত জায়গায়, নামাজ আদায়ের কোনো অনুমতি দিলেন তা রহস্যজনক।

 

এদিকে গত ৯ অক্টোবর লিজকৃত জায়গায় খাসজমিতে দুঃস্থ অসহায় মানষুদের জন্য বিনামূল্যে একটি ডায়াগনষ্টিক, ডায়ালাইসিস ও ফিজিও থেরাপি সেন্টার পরিচালনার জন্য জমির বন্দোবস্তের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদনপত্র নিয়ে যান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আইমা গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদা শিউলি। সেখানে গিয়ে তিনি উক্ত জমিটিতে লিজ থাকার কথা জানতে পেরে সেই আবেদন আর করেননি। আর  ওই এলাকার মানুষের আপত্তির বিষটি স্থানীয় বাড়িওয়ালাদের মতামত নিয়ে এ বিষয়ে তারা জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি নাসিম ওসমানের পক্ষ নিয়ে ভুক্তভোগিদের ধমক দিয়ে বলেন, ‘এতো জেনেসাইড’ জেনোসাইড করেন কেন? ভিন্ন মতাবলম্বী কি থাকবে না নাকী? তার এমন মন্তব্যে পর এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

 

আর অপরদিকে রহমত উল্লাহ্ বোখারী ও সেলিম উসমানের একান্ত বন্ধু মনির এর নেতৃত্বে তাদের লোকজনকে টুপি পাঞ্জাবী পরিয়ে এলাকার লোকজন বানিয়ে সাইদা শিউলির বাড়ির সামনে মসজিদের পুনঃস্থাপন চেয়ে সকাল বিকাল স্লোগান, মিটিং মিছিল করে। এলাকার উক্ত মসজিদ নির্মাণে বাধাদান কারী নিরীহ লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ নির্যাতন, নিপীড়ন শুরু করে। এনিয়ে ২৩ অক্টোবর মোরশেদ, মাউরা খোরশেদ, মোজাম্মেল হক মন্টু, ট্যাগরা সোহেল, খোরশেদ, মিঠু, মনির, নাজমুল, রিংকু, রহমুতাল্লাহ বোখারীর নামে ফতুল্লায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সাঈদা শিউলি ।

 

এরআগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এলাকা বাসীর পক্ষে নাহিদ ইসলাম নামক ব্যক্তির করা অভিযোগে বলা হয়, ‘আমাদের এলাকাটি চানমাড়ি টেক্সি স্ট্যান্ডের পার্শ্বে অবস্থিত। এখানে চানমাড়ি টেক্সি স্ট্যান্ডে পূর্বেই মহাসড়কের জায়গা দখল করে জোর পূর্বক নির্মিত ‘নাসিম উসমান মসজিদটিকে বর্তমান সরকার ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিলে ফকির গার্মেন্টস সড়কের শুরুতে খতিয়ান ১৪৫, সি,এস, এস,এ-৭২, আর,এস-১৩৬ নং দাগের ৩৩ শতাংশ খাস ভূমিতে আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলার বর্তমান জেলা প্রশাসক জুলাই আগস্ট-জেনোসাইডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী নাসিম উসমানের দলীয় লোকজনের সাথে বৈঠক করে এবং প্রকাশ্যে নিরীহ লোকজনকে ‘এতো জেনেসাইড’ জেনোসাইড করেন কেন? ভিন্ন মতাবলম্বী কি থাকবে না নাকী? এ ধরনের মন্তব্য করার পর হইতে এলাকার মধ্যে বিশাল বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এলাকার ৩/৪টি গ্রুপ তৈরী হয়ে মারমুখি অবস্থানে সকাল বিকাল মিছিল স্লোগান সহ বর্তমান জেলা প্রশাসকের বিগত সরকার দলীয় লোকজনের প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্য জনমনে অশান্তির সৃষ্টি করেছে’।

 

 

‘এখানে উল্লেখ্য যে, এই এলাকার জেলা প্রশাসকের নিজস্ব ২টি মসজিদ সহ মোট ছয়টি মসজিদ রয়েছে। চানমারী ট্যাক্সী ষ্ট্যান্ডেই উক্ত নাসিম উসমান মসজিদ লাগোয়া একটি মডেল মসজিদ নির্মিত হতে যাচ্ছে’।

 

‘শুধুমাত্র বিগত সরকারের লোকজনের প্রভাব বিস্তারের জন্য নাম পরিবর্তন পূর্বক নতুন নামে মসজিদ নির্মান করে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাই উদ্দেশ্য’। ‘ফকির পার্মেন্টস সড়কটি রাজউক প্লানে ৬ মিটার ১৮ ফুট প্রস্থে থাকলেও বিগত সরকার দলীয় লোকজন অবৈধভাবে জায়গা দখল করে দোকান নির্মানের কারনে প্রন্থে দশ ফুট অবশিষ্ট রয়েছে’। ‘জায়গাটি মানুষের বাসা বাড়ির মাঝখানে উঠানের মত, যেখানে অগণিত মহিলা ও শিশু যাতায়াত করে। যা পুরুষদের জন্য মসজিদ হওয়ার উপযুক্ত নয়’।

 

‘বিগত সরকারের দলীয় খাস লোক রহমত উল্লাহ্ বোখারী ও সেলিম উসমানের একান্ত বন্ধু মনির এর নেতৃত্বে তাদের লোকজন কে টুপি পাঞ্জাবী পরিয়ে এলাকার লোকজন বানিয়ে সংকীর্ন প্লেসে উক্ত ‘নাসিম উসমান মসজিদের পুনঃ স্থাপন চেয়ে সকাল বিকাল স্লোগান, মিটিং মিছিল করে। এলাকার উক্ত মসজিদ নির্মাণে বাধাদান কারী নিরীহ লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ নির্যাতন, নিপীড়ন চালাচ্ছে। যাহার ভিডিও ফুটেজ বিদ্যমান আছে’।

 

‘একজন জেলা প্রশাসক বরাদ্দ ব্যতীত কিভাবে একজন লীজ গ্রহিতা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় আগামী শুক্রবার নিজে উপস্থিত থেকে উক্ত প্লেসে জুম্মার নামাজ আদায় করে ভিত্তি প্রস্থড় স্থাপনের মৌখিক নির্দেশ দিতে পারে, যা কখোনই আইন সংগত নয়’।

 

‘এই ফকির গার্মেন্টস সড়কে গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরী চলমান আছে। যেখানে এমনেতেই সংকীর্ণ রাস্তার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তার উপর রাস্তাটি মসজিদ নির্মানের কারণে আরও সংকীর্ণ হয়ে গেলে ফ্যাক্টরীর উৎপাদন সহ মহিলা শিশুদের চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে যাবে’।

 

‘এমতাবস্থায় জনাবের নিকট বিনীত অনুরোধ আমরা এলাকার নিরীহ লোকজন কোনভাবেই এই বর্তমান জেলা প্রশাসক সহ এই বিগত সরকারের দলীয় দুস্কৃতিকারীদের সাথে পেরে উঠছিনা। যেখানে এলাকায় আরও ছয়টি মসজিদ রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিদ্যমান, তাই এই ধরনের খাস ভূমি বরাদ্দ ব্যতিত এবং জনৈক ব্যক্তির নামে লীজ থাকাবস্থায় জেলা প্রশাসক নিজে স্ব-শরীরে আগামী শুক্রবার জুম্মার নামাজে উপস্থিত থেকে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মৌখিক নির্দেশ দিয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পরিবেশ ভারসাম্যহীন না করার জন্য আসু পদক্ষেপ নিতে জনাবের একান্ত মর্জি হয়’।

 

সর্বশেষ উক্ত এলাকায় ৬টি মসিজিদ থাকার পর এবং চানমারি বাইতুর রহমান জামে মসজিদের পেছনে প্রস্তাবিত মডেল মজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও মাত্র ৫০ গজের মধ্যে গলির ভেতর মসজিদ নির্মাণ নিয়ে একটি মহলের ইন্ধনের উপর তীব্র ক্ষোভ এলাকাবাসীর।