বৃহস্পতিবার   ১২ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩১

ঝুট ব্যবসায়ী হাতেমের অপসারণ দাবি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪  

ছাত্র-জনতার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারে সাথে নারায়ণগঞ্জের গডফাদার ওসমান পরিবারও পালিয়ে যায়। তবে যাওয়ার সাথে সাথে ওসমান পরিবারের দোসর হিসেবে ঝুটব্যবসায়ী ও জমির দালালসহ ওসমানদের নানা অপকর্মের সহযোগী মোহাম্মদ হাতেমকে শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতির চেয়ারে বসিয়ে তাদের রাজত্ব অক্ষুন্ন রাখার ষড়যন্ত্রের ছক কষে যান। ২০১০ সাল থেকে সেলিম ওসমান বিকেএমইএতে নিজের প্রভাব খাটিয়ে বিনা নির্বাচনে সভাপতির পদ দখল করে রাখেন। তার সর্বসময়ের সঙ্গী ছিলেন মোহাম্মদ হাতেম। ২০১৪ সাল থেকে সেলিম ওসমানের নির্দেশনায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন উছিলায় চাঁদা তোলা, ঝুটের নিয়ন্ত্রণ, বিসিক এলাকায় জায়গদার দালালি একচ্ছত্রভাবে নিয়ন্ত্রণে ছিল হাতেমের। ওসমান সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হাতেমের প্রত্যক্ষ মদদে বহু ব্যবসায়ী বিসিক ছেড়েছেন। বিগত সময়ে হোসেয়ারি এসোসিয়েশন নির্বাচনসহ নানা সংগঠনের নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রার্থীদের জন্য বিসিকে অফিসের নামে টর্চার সেল খোলার নীলনকশাকারী হিসেবেও এই হাতেম ছিলেন বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তবে ৫ আগস্টের পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেলিম ওসমান আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর তাঁর নির্দেশে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার দিয়ে যান তাদের অন্যতম দোসর মোহাম্মদ হাতেমকে। এক্ষেত্রে খোদ সেলিম ওসমান ২৪ আগস্ট চিঠি দিয়ে ব্যবসায়ীদের চিঠি দিয়ে সভাপতি হিসেবে হাতেমকে গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেন। ২৪ আগস্ট সেলিম ওসমান শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিকেএমইএ'র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনে অপারগতা এবং সেই কারণে বিকেএমইএ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে পদত্যাগ প্রসঙ্গে চিঠি পাঠান। ২৫ আগস্ট বিকেএমইএ অফিস সেটি গ্রহণ করেন। সেই দিনই (২৫ আগস্ট)  বিকেএমইএর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির শীর্ষ পদে রদবদলের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, বিকেএমইএর ঢাকা কার্যালয়ে সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের বোর্ড সভায় নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এর আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এ কে এম সেলিম ওসমান সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন, যা পর্ষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। পর্ষদ সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বিদায়ী সভাপতি সেলিম ওসমান বক্তব্যও দেন। দৈনিক যুগের চিন্তায় ধারবাহিকভাবে ওসমানদের দোসর ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাতেমের কুকীর্তি ও ওসমানদের নীল নকশা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তা গোটা দেশেই টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও নারায়ণগঞ্জের সুধীসমাজ হাতেমের অপসারণের দাবিতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের প্রত্যেকেরই একটাই দাবি, অনতিবিলম্বে বিকেএমইএ’র মতো বড় সংগঠন থেকে ওসমানদের প্রেআত্মা ও দোসর ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাতেমকে অপসারণ করতে হবে। সূত্র জানিয়েছে, বিসিকের ঝুটের লোভ দেখিয়ে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের কাছে ডেকে সংঘাত লাগানোর পরিকল্পনা আটে হাতেম। সূত্র জানায়, বিএনপির শীর্ষ নেতারা এবিষয়ে সাড়া দেয়নি। হাতেম কারাগারে বন্দী জাকির খানের সাথেও যোগাযোগ করে। হাতেম জাকির খানকে জিজ্ঞাসা করেন, কোন কোন ফ্যাক্টরী আপনি নিতে চান? জাকির খান তাকে ধমক দিয়ে বলেন, এগুলো নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা। সূত্র জানায়, বিএনপির বিভিন্ন নেতার কাছেও হাতেম ছুটাছুটি করলেও কেউ তার কথায় সায় দেয়নি। পরে সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাকে উসকে দিয়ে ওসমানদের প্ল্যান বাস্তবায়নে মাঠে নামে।


এব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে মোহাম্মদ হাতেম ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বাসভবনে গিয়ে যেই বক্তব্য দিয়েছিলেন, তাতেই হাতেমের পরিচয় প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিলো। কুখ্যাত ওসমান পরিবারের সেলিম ওসমানের ডান হাত হিসেবে মোহাম্মদ হাতেম সর্বমহলে পরিচিত। বিগত সময়ে ডান হাত হিসেবেই বিকেএমইএ হাতেমই চালিয়েছে। হাতেমের সেলিম ওসমান প্রীতি দিয়ে কোন অর্গানাইজেশন এখন চলতে পারেনা। কারণ ফ্যাসিস্ট সরকারের এই প্রেআত্মা বর্তমান সরকারকে যে কোন সময় নানাভাবে বিপদে ফেলতে পারে। খুব দ্রুত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে এখানে যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা উচিৎ। তবে এরআগে অনির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে অপসারণের দাবি জানাই।’

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু যুগের চিন্তাকে বলেন, গত ১৬ বছর ওসমানদের দালাল হিসেবে কারা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে ছিল এটা সবাই জানে। এখন ছাত্রজনতার তাজা রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতার আসার পরও যদি সেখানে ওসমানদের প্রেআত্মা থাকে তবে সেটি অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। আমরা নারায়ণগঞ্জের সকল সংগঠনে ওসমানদের প্রেআত্মামুক্ত দেখতে চাই। ৫ আগস্টের পর আমরা ভেবেছিলাম বিকেএমইএতে হয়তো বাণিজ্যমন্ত্রণালয় কিংবা অন্য কোন মন্ত্রণালয় থেকে হাতেমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেলিম ওসমানের প্রেসক্রিপশনে যে হাতেম সভাপতির পদ দখল করে বিকেএমইএ ও ওসমানদের স্বার্থ রক্ষা করছে এই বিষয়টি এখন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। অনতিবিলম্বে বিকেএমইএর সব ব্যবসায়ীর কাছে আহবান জানাবো ওসমানদের প্রেআত্মা হাতেমকে অপসারণ যাতে দ্রুত করা হয়। বিসিকে ঝুট ব্যবসা নিয়ে হাতেমের টোকেন বিতরণের খবর আমরা পেয়েছি। এই টোকেন বিতরণ করে সে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত লাগাতে চায়। প্রশাসনকে স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, বিসিক এলাকায় যদি কোন সংঘাতের ঘটনা ঘটে তবে এর দায় ওসমানদের দোসর এই হাতেমকেই বহন করতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ যুগের চিন্তাকে বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বিকেএমইএর মতো এতো বড় সংগঠনে এখনো ওসমানদের পা চাটা গোলাম হাতেমের মতো লোক শীর্ষ পদে বসে আছে। ব্যবসায়ীদের কাছে বলবো অতিদ্রুত ওসমানদের দোসর হাতেমকে এই পদ থেকে সরিয়ে দিন। বিসিকে ঝুট ব্যবসা নিয়ে হাতেমের সংঘাত লাগানোর পরিকল্পনাও আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ডিসি-এসপিকে বলবো, বিভিন্ন সংগঠনে ঘাপটি মেরে থাকা ওসমানদের দালালদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেবেন নিয়মিত। এরা যে কোন সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।  

গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘যারা বিগত ১৫ বছর আওয়ামিলীগের দুঃশাসনকে সমর্থন করেছে, ছাত্র-জনতার খুনি শেখ হাসিনার পাশে থাকার অঙ্গিকার করছে, হাসিনা সরকারের সমস্ত অপকর্মের সাফাই গেয়েছে, ৫ আগষ্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ছিল তাদের বিরুদ্ধে। ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার হত্যাকারী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও আমরা দেখতে পাচ্ছি তার দোসররা নারায়ণগঞ্জে বহাল আছে। প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জকে যারা সন্ত্রাসের নগরীতে পরিণত করেছে, সন্ত্রাস-গুম-খুনের জনপদ বানিয়েছে সেই শামীম ওসমানও দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু শামীম ওসমানের যারা দোসর, সহযোগী তারা এখনও নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এখনো ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে ওসমান পরিবারের প্রভাব। বিকেএমইএ মতো ব্যবসায়ী সংগঠন পরিচালনা করছে সেলিম ওসমানের অনুগতরা। সেলিম ওসমানের নির্দেশেই বিকেএমইএ সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন মোহাম্মদ হাতেম! অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। খুনিদের দোসররা বিকেএমইএ দায়িত্ব নিবেন এর জন্য হাজার হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দেয় নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ভাঙ্গিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বিকেএমইএ এর সভাপতি পদ আঁকড়ে থাকতে চাইছেন। নানান ভাবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আওয়ামীলীগের দোসরদের ফাঁদে পা দিবে না কারণ তারা শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানী করতে পারে না। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, অনতিবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ’


প্রসঙ্গত, একেএম সেলিম ওসমানের ২৫ আগস্টের পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, প্রিয় সহকর্মী, ১। বিকেএমইএ'র পরিচালনা পর্ষদের (২০২৩-২৫) সকল সদস্যকে আমি অন্তরিক ধন্যবাদ জানাই বিকেএমইএ'র সভাপতি হিসেবে আমাকে দায়িত্ব পালনে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করায়। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া বিকেএমইএ-কে এবং নীট সেক্টরের উন্নতির জন্য কাজ করা সম্ভবপর ছিলনা। আপনাদের মেধা, মনন ও পরামর্শ নিয়েই আমি বিকেএমইএ'র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। আপনাদের প্রতি তাই আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। একইসাথে ২০১০ সালের জুলাই মাসে বিকেএমইএ'র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে যতগুলো পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়েছে, সেই সফল পরিচালনা পর্ষদের সফল সদস্যদের আজকের দিনে স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। দীর্ঘ এই ১৪ বছরের পথ চলায় যেসকল সহকর্মীরা ইতোমধ্যেই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন, তাদের প্রতিও আমার সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা। বিষয়ের বহুল্যতা এই যে, আপনারা সবাই জানেন, বিগত বেশ কিছুদিন ধরে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। কয়েক মাস-অন্তর আমাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে কখনো কখনো আমাকে লম্বা সময় ধরে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য দেশের বাইরে থাকার বাধ্যবাধকতা থাকছে, কিন্তু দায়িত্বের কারণে চিকিৎসা অর্ধসমাপ্ত রেখে আমাকে ফিরে আসতে হয়েছে। ফলে আমার শারীরিক ক্ষতি আরও বেশি হেেয় এখন শারিরীক সমস্যা অধিকতর তীব্রতর হয়েছে বিধায়, আমার পক্ষে বিকেএমইএ'র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আর সম্ভবপর হচ্ছে না। তাই এই পত্রের মাধ্যমে বিকেএমইএ'র সভাপতি'র পদ এবং একইসাথে পরিচালক পদ থেকে আমি অব্যাহতি নিলাম। বিকেএমইএ'র পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্যদের কাছে আমার এই আবেদন অনুমোদন করার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ রাখছি। আপনাদের সকলকে সহযোগিতার জন্য আবারও ধন্যবাদ।

২। অনেক আগেই বিকেএমইএ'র সভাপতি হিসেবে আমার চলে যাবার কথা ছিল। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় বিকেএমইএ'র কমপ্লেক্স ভবন তৈরির সদস্যদের আকারদর প্রতি সম্মান রেখে আমি দায়িত্ব পালন করে গেছি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, অনেক বাঁধা পেরিয়ে, অসাধারণ চেষ্টা ও প্রয়াসের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় বিকেএমইএ'র প্রধান কার্যালয় ভবন আমি আপনাদের সকলের সহযোগিতা নিয়ে তৈরি করতে পেরেছি। আমি সবসময় চেয়েছি, বিকেএমইএ'র প্রধান কার্যালয় ভবনটি নারায়ণগঞ্জে তৈরি করতে এবং অল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে এবং আপনাদের সহযোগিতায় সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপলাভ করেছে। আজ নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে সুন্দর ভবনের মধ্যে বিকেএমইএ'র কমপ্লেক্স ভবন একটি। এই গৌরব আমার, আপনার এবং নীট সেক্টর সংশ্লিষ্ট সকল উদ্যোক্তাদের। এই অসাধারণ কাজ সম্পন্ন করতে সহায়তা করায় আপনাদের সকলকে আরও একবার ধন্যবাদ।

৩। যেহেতু আমি চলে যাচ্ছি, সেহেতু আমি বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে আমাদের যেসকল সিনিয়র পরিচালকগণ রয়েছেন এবং যারা বিশেষ করে ব্যবসার কাজে ব্যস্ততার কারণে বিকেএমইএতে সময় দিতে পারছেন না, তাদের কাছে সবিনয়ে অনুরোধ রাখব নীট সেক্টর ও বিকেএমইএ'র বৃহত্তর স্বার্থে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে নতুন প্রজন্মকে কাজ করার সুযোগ করে দিতে। এতে করে নতুন প্রজন্ম নতুনভাবে বিকেএমইএ-কে এগিয়ে নিতে পারবে এবং একটি আধুনিক বিকেএমইএ ও উন্নত নীট সেক্টর গড়তে তারা আরও বেশি উৎসাহ ও উদ্দীপনা পাবে।

৪। আপনারা সকলেই স্বীকার করবেন যে, বর্তমান নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দীর্ঘদিন ধতে আমাকে, বিকেএমইএ-কে ও নীট সেক্টরের উন্নতির জন্য সহায়তা করে গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি পরিচালনা পর্ষদের সকলের কাছে অনুরোধ রাখতে চাই, আমার বিদায়ের পর পর বিকেএমইএ ও নীট সেক্টরের উন্নয়ন কল্পে মোহাম্মদ হাতেম এর অবদান এবং প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করে তাকে এই নতুন বিকেএমইএ পরিচালনার জন্য সভাপতি'র দায়িত্বভার অর্পণ করা হোক। আপনাদের প্রতি এই আমার বিশেষ অনুরোধ।

৫। সবাই ভালো থাকবেন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। বিকেএমইএ'র সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা। আগামীতে একটি গতিশীল বিকেএমইএ দেখার প্রত্যাশায় থাকব।

এদিকে ছাত্রজনতার গণআন্দোলনে ফ্যাসিস্টদের বিদায়ের পর আবার ফ্যাসিস্ট সরকারের ব্যক্তির প্রেসক্রিপশনে বিনা নির্বাচনে তাদেরই দোসর মোহাম্মদ হাতেমকেই সভাপতি বানানো হয়েছে। এখনো পুরো বিকেএমইএ’র পর্ষদে হাতেম ছাড়াও ওসমানদের আরো দোসররা বর্তমান। সর্বশেষ এই অসন্তোষ নিয়েই অনুষ্ঠিত ৫ ডিসেম্বর বিকেএমইএ’র বিশেষ সাধারণ সভাতেও (ইজিএম) হাতেমের স্ট্যান্টবাজিতে ত্যক্ত-বিরক্ত বিকেএমইএ’র সদস্যরা। ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গ্র্যান্ডবলরুমে বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এই ইজিএমে প্রায় ১৫০জন সদস্য অংশগ্রহণ করলেও বেশিরভাগ টেবিলেই হাতেমকে নিয়ে জোর সমালোচনা চলে। উপস্থিত ব্যবসায়ীরা হাতেমের স্ট্যান্টবাজিতে হতবাক ও বিস্মিত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ইজিএম অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ হাতেম বারবার ঘোষণা করতে থাকেন বিকেএমইএর এই অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই প্রধান সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠান শুরুর পর থেকে তিনি বলেই যাচ্ছেন এই তো তারা চলেই আসছেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা উপস্থিত হবেন। এই তো তারা লিফটের উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এই তো তারা এক্ষুনি চলে আসবেন। কিন্তু আদতে শেষ পর্যন্ত তাদের কেউই বিকেএমইএ’র এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। বারবার এই স্ট্যান্টবাজির অর্থ ছিল, হাতেম বোঝাতে চেয়েছেন, তার সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতাদের গভীর সম্পর্ক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের এই অনুষ্ঠানে তো তাদের আসারই কথা না। কিন্তু হাতেম এটি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেও কাছের লোক। অথচ তিনি যে, শেখ হাসিনা সরকার ও ওসমানদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তা তো ভিডিও বক্তব্য ও পত্রিকার পাতায় স্পষ্ট প্রমাণ আছে। সারাদেশের মানুষ যে তার অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানে সেটি তিনি ভুলেই গেছেন, আর ব্যবসায়ীরা তো খুব ভালো করেই জানেন হাতেম গত ১৫ বছর যাবৎ ওসমানদের হয়ে কী কী করেছেন। অনেকে টিপ্পনী কেটে কানাঘুষো করেন, কে বসালো হাতেমকে সভাপতির পদে নির্বাচন ছাড়া! তিনি ৫ আগস্টের পর কী করে হর্তাকর্তা বনে গেলেন। আর তার এই কমিটিতে তো অনেক ওসমানীয় বলয়ের লোকে ভরপুর। তিনিও তাদের মধ্যে অন্যতম। গত নভেম্বর মাসেই তো তাকে ফ্যাসিস্টদের দোসর খেতাব দিয়ে কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মনসুর আহমেদসহ আরো একজন। পরবর্তীতে অবশ্য তারা পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেন। অনেকে বলছেন, দূর থেকে সেলিম ওসমানের চাপেই তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।  পদত্যাগপত্র যে চাপে প্রত্যাহার করা হয়েছিলো সেটি বুঝা গেছে, ইজিএম সভায় মনসুর আহমেদ অনুপুস্থিত ছিলেন।

২০১০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বিকেএমইএর সভাপতির পদে ছিলেন সেলিম ওসমান। সর্বশেষ ২০১২ সালে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি হন তিনি। তারপর ২০১৪, ২০১৬, ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ সালে সমঝোতার মাধ্যমে পর্ষদ করে সভাপতি হন সেলিম ওসমান। কিছুদিন আগে বিলুপ্ত জাতীয় সংসদে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সদস্য ছিলেন। তাঁর ভাই শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। বিকেএমইএতে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের কারণে টানা পাঁচবার সমঝোতার মাধ্যমে পর্ষদ গঠন করা হলেও সংগঠনের উদ্যোক্তারা চুপচাপ ছিলেন। ৫ আগস্টের পর ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর ২৫ আগস্ট অসুস্থতার কথা বলে পদত্যাগ করেন সেলিম ওসমান। তার স্থলাভিষিক্ত হন মোহাম্মদ হাতেম।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ২০২৪ সালের ২২ জুলাই সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সাথে বৈঠকে বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম বলেন, “যে তাণ্ডব আমরা গত কয়েক দিনে দেখেছি, আমরা আশা করব, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য যারা আছেন, তারা উদযাঘটন করবেন এবং আইনের আওতায় আনবেন।“ব্যবসায়ী সমাজ আপনার পাশে ছিল, থাকবে।” হাতেম বলেন, “দুটো অনুরোধ। কারখানাগুলো যদি আমরা চালু রাখতে পারি, তাহলে শ্রমিকরা ভেতরে সুশৃঙ্খল পরিবেশে থাকবে। বাইরে থাকলে তাদের অন্যরা ব্যবহার করতে পারে, তাদের ভেতরে থাকাটাই নিরাপদ। “ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। স্বল্প পরিসরে হলেও ইন্টারনেটটা যাতে চালু করা যায়।”

এই বিভাগের আরো খবর